বাংলাহান্ট ডেস্ক : মাথার উপর ছিল নিশ্চিন্ত ছাদ, সঙ্গে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে আরামের জীবন, আর সর্বোপরি বিভিন্ন বিষয়ে একাধিক ডিগ্রি সহ তুখোর মেধা। ফলে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির আনুকূল্যে কোন বিখ্যাত সংস্থায় চাকরি করাটা তার কাছে এক্কেবারে ‘জলভাতে’র মতোই ছিল। কিন্তু না, কেরিয়ারের শুরুর দিনগুলোতে একাধিক কোম্পানিতে কাজ করলেও শেষ পর্যন্ত তিনি কোন সংস্থার অধীনে নিজেকে বেঁধে ফেলতে চাননি। বরং চেয়েছিলেন, নিজের মতো করে “অন্যকিছু” করতে। আর, সেই কারণেই কৃষিকাজ করার ঝুঁকি নিয়েছিলেন। বলা বাহুল্য, তাতে অবশ্য দুর্দান্ত সাফল্যও এসেছে। এই বিখ্যাত ব্যক্তি আর কেউ নয়, তিনি হলেন শচীন কালে।
২০০৩ সালে নাগপুর শহরে শচীন প্রথম চাকরি পেয়েছিলেন। প্রায় দুই বছর নাগপুরের কোম্পানিতে কাজ করার পর তিনি বার্ষিক ১২ লক্ষ টাকা বেতনের প্যাকেজ পেয়েই পুনের একটি কোম্পানিতে যোগ দিয়েছিলেন। তারপর সেখান থেকে চলে গেলেন দিল্লীর একটি সংস্থায়। সেখানে তাকে বার্ষিক ২৪ লাখ টাকার প্যাকেজ দেওয়া হবে জানতে পেরেই স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন রাজধানীর উদ্দেশ্যে। কিন্তু, বিপুল অর্থের কর্মসংস্থানও তাকে শেষ পর্যন্ত মানসিক শান্তি দিতে পারে নি। অগত্যা চাকরি ছেড়ে দিয়ে মাটির সঙ্গে একাত্মতা স্থাপনের জন্য কৃষিকাজ করার সিদ্ধান্ত নেন।
জানা গিয়েছে, প্রথমে শচীনের সিদ্ধান্তকে তার বাবা মেনে নিতে না পারলেও শচীনের কৃষিকাজের প্রতি ভালবাসার সামনে শচীনের বাবাকে শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দিতে হয়েছিল। শচীন তার নিজ গ্রাম মেদপাড়ে ২০ একরের পৈতৃক জমিতে নিজে ট্রাক্টর চালিয়ে চাষ শুরু করেছিলেন। এই প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার, কৃষিকাজ শুরু করার আগে শচীন ফল ও সবজি চাষের জন্য বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছিলেন। আর শচীন ঐতিহ্যবাহী কৃষিকাজের পরিবর্তে কর্পোরেট ফার্মিংয়ে বেশী লাভ হওয়ার কারণে তার ওপর বেশি জোর দিয়েছিলেন।
এই কাজের জন্য শচীন তার নিজস্ব ইনোভেটিভ এগ্রি লাইফ সলিউশন প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ভিত্তি স্থাপন করে চাষের খরচ এবং উপার্জনের সম্পূর্ণ হিসাব রাখার পাশাপাশি কৃষকদের জন্য তহবিলের ব্যবস্থা করেন। তিনি কৃষকদের জন্য চাষের একটি নতুন মডেল তৈরী করে তাদেরকে বিভিন্ন ফলমূল, শাকসবজি ও ফসলের চাষ শুরুর ক্ষেত্রে উৎসাহ দিতে থাকেন এবং তার ফলে সংস্থাটি প্রচুর মুনাফা অর্জন করতে শুরু করে। মাত্র ২ বছরে শচীনের কোম্পানির টার্নওভার ২ কোটি টাকায় পৌঁছে যায়। কালো ধান ছাড়াও শচীন ডাল, মৌসুমি ফল ও সবজির জৈব চাষ করেন।
শচীন কালের মতে, চাষের ক্ষেত্রে তার সাফল্যের কৃতিত্ব পুরোই তার ঠাকুমার। কারণ তিনিই শচীনকে জীবনে আলাদা কিছু করে দেখানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। বর্তমানে শচীন কালে শুধু তার নিজ গ্রামেই নয়, দেশের অন্যান্য রাজ্যেও যুবকদের কৃষিকাজের কৌশল শেখানোর জন্য কাজ করছেন।