বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে সকলে ভারতের সবচেয়ে সফল অধিনায়কদের মধ্যে একজন হিসেবে চেনেন। অনেকেই তাঁকে মনে রাখবেন ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্রিকেটারদের একজন হিসেবে যার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৮,০০০-এর বেশি আন্তর্জাতিক রান এবং ১০০-র বেশি আন্তর্জাতিক উইকেট রয়েছে। গড়াপেটার কালো অধ্যায় থেকে যিনি ভারতীয় ক্রিকেটকে নতুন আলোর দিশা দেখেছিলেন। যার আমলে ভারত বিদেশের মাটিতে জিততে শিখেছিল। যিনি সব সময় মাঠে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে পছন্দ করতেন।
ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সৌরভের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পারফরম্যান্স এবং অসাধারণ কিছু কাটানো মুহূর্ত রয়েছে। সেই আমলে সাধারণত ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ মাঠের মধ্যে অত্যন্ত উত্তপ্ত পরিবেশ তৈরি করতো। এখনকার দিনের মতো মাঠের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব তখনকার দিনে দেখা যেত না। তবে এটাও ঠিক যে মাঠের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে মাঠেই ফেলে রেখে আসতেন দুই দেশের ক্রিকেটাররা। সেই সম্পর্কের রেশ ধরেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মানবিক দিকের একটি গল্প সম্প্রতি সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন প্রাক্তন তারকা পাকিস্তান স্পিনার সাকলিন মুস্তাক।
সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানি কিংবদন্তি জানিয়েছেন যে তিনি যখন প্রথম প্রথম ক্রিকেট খেলতেন তখন সৌরভকে তিনি একজন দাম্ভিক মানুষ হিসেবে ভাবতেন। ১৯৯০-এর দশকের শেষ দিকে এবং ২০০০-এর শুরুর দিক গুলিতে যখন ভারত-পাকিস্তান একে অপরের মুখোমুখি হয়েছে এবং যখনই মুশতাকের সঙ্গে সৌরভের দেখা হয়েছে, ততবারই নাকি সৌরভ দাঁড়িয়ে গল্প না করে ‘হাই’ অথবা ‘হ্যালো’ জাতীয় কথা বলে তারপর নিজের কাজে চলে গিয়েছেন। এর ফলে সাকলাইন মোস্তাক এর ধারণা হয়েছিল যে ভারত অধিনায়ক একজন অত্যন্ত দক্ষ ক্রিকেটার হলেও একজন খুবই নাকউঁচু ব্যক্তি।
কিন্তু তার সেই ধারণা বদলে যায় ২০০৩-০৪ ক্রিকেট মরশুমে। সেই সময়ে ভারতীয় দল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নেতৃত্বে যখন পাকিস্তান সফরে গিয়েছিল তখন হাটুর অপারেশন হওয়ায় পাকিস্তান দলের অংশ ছিল না। কিন্তু তিনি ভারতের বিরুদ্ধে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলা ঘরোয়া পাকিস্তান দলের অংশ ছিলেন। সেই সময়ই প্রথম মানবিক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের রূপ দেখতে পান পাকিস্তানি স্পিনার।
মুস্তাক জানিয়েছেন সেই ম্যাচটির পরে দুই দল যে দুটি ড্রেসিংরুমে ছিল, তাদের ছাদগুলি অত্যন্ত কাছাকাছি ছিল এবং ক্রিকেটাররা চাইলেই এক ছাদ থেকে অন্য ছাদে চলে আসতে পারতেন পাঁচিল টপকে। সেই সময়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নিজের ড্রেসিং রুমের ছাদ থেকে দুই কাপ কফি হাতে নিয়ে লাফিয়ে চলে আসেন মুস্তাকদের ড্রেসিংরুমের ছাদে তারপর কফি খেতে খেতে পাক ক্রিকেটারের সাথে গল্প করেন এবং তার চোটের বিষয়েও খোঁজ নেন।
মুস্তাক জানান, আগে সৌরভ সম্পর্কে নিজে যে ধারণা তৈরি করেছিলেন নিজের মনে তার জন্যও বেশ লজ্জিত হন তিনি। তিনি সৌরভকে সরাসরি জানান যে তিনি ভারত অধিনায়ককে নাকউঁচু ভেবেছিলেন এবং তার কাছে ক্ষমা চান। প্রাক্তন পাকিস্তানি স্পিনার জানিয়েছেন যে সৌরভকে একজন ক্রিকেটার হিসেবে তিনি আগে থেকেই শ্রদ্ধা করতেন কিন্তু ওই ঘটনার পর থেকে ব্যক্তি সৌরভেরও ভক্ত হয়ে যান তিনি।