বাংলাহান্ট ডেস্ক: নতুন নতুন মহানায়কের তকমা যেই পাক না কেন বাঙালির চিরকালীন মহানায়ক একজনই ছিলেন, আছেন আর থাকবেন। তিনি উত্তম কুমার (Uttam Kumar)। বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগের প্রাণপুরুষ ছিলেন তিনি। তাঁকে পেয়ে সমৃদ্ধ হয়েছিল বাংলা চলচ্চিত্র জগৎ। উত্তম কুমারের বিকল্প না কেউ কোনোদিন হতে পেরেছে আর কোনোদিন পারবে।
উত্তম কুমার, প্রবল ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন মানুষ যাঁর সম্পর্কে যতই জানা যায় ততই যেন জানার আগ্রহ বাড়তে থাকে। শুধু অনবদ্য অভিনয় প্রতিভাই নয়, গুণের ভাণ্ডার ছিলেন উত্তম কুমার। তাঁর সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন কাহিনি, স্মৃতি বারেবারে উঠে এসেছে তাঁর সহকর্মীদের মুখে। স্বয়ং সত্যজিৎ রায়ও (Satyajit Ray) উত্তম কুমার সম্পর্কে এমন কিছু কথা শেয়ার করেছিলেন যা শুনে অবাক হয়ে যেতে হয়।
সত্যজিতের একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছিলেন উত্তম কুমার, যার মধ্যে ‘নায়ক’ ছিল অন্যতম। ক্লাসিক তকমা পাওয়া এই ছবিটিতে উত্তম কুমার স্বমহিমায় ধরা দিয়েছিলেন। শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর জুটি আজো প্রিয় সিনেপ্রেমীদের কাছে। এই ছবির শুটিংয়ের সময়কারই একটি ঘটনা তুলে ধরেছিলেন কিংবদন্তি পরিচালক।
এক সাক্ষাৎকারে সত্যজিৎ রায় জানিয়েছিলেন, নায়ক ছবির সেই আইকনিক দৃশ্য যেখানে উত্তম কুমারের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতে শর্মিলা ঠাকুর তাঁর অটোগ্রাফ চান। পকেটে আগে থেকেই একটি পেন রাখা ছিল অভিনেতার যা দিয়ে তাঁর অটোগ্রাফ দেওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু সই করার সময়ে উত্তম কুমার দেখেন পেনের কালি শুকিয়ে গিয়েছে। সত্যজিৎ রায় জানিয়েছিলেন, তিনি ‘কাট’ বলতেই যাচ্ছেন, ঠিক তখনই এক কাণ্ড করে বসেন উত্তম কুমার। কালি পড়ছে না দেখে তিনি কিন্তু থেমে যাননি। প্রথমে তিনি পেনটি একবার ঝাঁকান, তারপরেও কালি না পড়ায় সামনের গ্লাসের জলে নিব ডুবিয়ে তারপর সই করেন।
সবথেকে বড় ব্যাপার, এই কাজগুলো করার সময়ে কিন্তু একবারও সংলাপ বলা থামাননি উত্তম কুমার। দৃশ্যটা দেখে কেউ বলতেই পারবে না যে পুরোটাই ওই মুহূর্তে ভাবা এবং করা। এমনি ছিল উত্তম কুমারের উপস্থিত বুদ্ধিবুদ্ধি যা একজন অত্যন্ত উচ্চমানের তারকার পক্ষেই থাকা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছিলেন সত্যজিৎ রায়। তিনি এও জোর গলায় বলেছিলেন, উত্তম কুমারের মধ্যে যেমন স্বতঃস্ফূর্ততা, বহুমুখী প্রতিভা ছিল তা ভবিষ্যতেও বাংলা ছবির কোনো অভিনেতার মধ্যে থাকবে না।