বাংলাহান্ট ডেস্ক: সত্যজিৎ রায় (Satyajit Roy), শুধু নামটাই যথেষ্ট। এই একটা নামই গোটা ভারত তথা বিশ্বের চলচ্চিত্র (cinema) জগতকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। ভারতীয় (Indian) সিনেমায় সত্যজিতের স্থানটা এখনও অটুটই রয়েছে। সর্বকালের সেরা পরিচালকের (director) তকমা যে তিনি ছাড়া অন্য কারওর হতে পারে না তা সকলেই একবাক্যে স্বীকার করবেন। শুধুমাত্র পরিচালনায় সীমাবদ্ধ ছিল না তাঁর প্রতিভা। তিনি একাধারে ছিলেন চিত্রনাট্যকার, লেখক এবং সঙ্গীত পরিচালক।
১৯২১ সালের কলকাতায় আজকের দিনে জন্মগ্রহণ করেন সত্যজিৎ। প্রখ্যাত রায় পরিবারে জন্ম তাঁর। ঠাকুরদা, বাবা দুজনেই কিংবদন্তি। আর সেই ধারাকে সগৌরবে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন সত্যজিৎ। জানা যায়, প্রথম দেওয়া নাম মনে ধরেনি বাবা সুকুমার রায়ের। তারপর তিনি নামকরণ করেন ‘সত্যজিৎ’। আজ সেই মহান পরিচালক জন্মের ৯৯ বছর পেরিয়ে শতবর্ষে পা দিলেন।
কিন্তু চলচ্চিত্রের সঙ্গে সত্যজিতের যোগটা বেশ চমকপ্রদ। প্রথমে একটি বিদেশি অ্যাড কোম্পানিতে কাজ করতেন তিনি। ১৯৫০ সালের একটি লন্ডন সফরই বদলে দিয়েছিল তাঁর জীবন। অ্যাড কোম্পানির তরফে ছয় মাসের জন্য লন্ডনে পাঠানো হয়েছিল পরিচালককে। কোম্পানি ভেবেছিল বিদেশ থেকে চা ও বিস্কুটের বিজ্ঞাপনে চৌখশ হয়ে ফিরবেন তিনি। সত্যজিৎ ফিরলেন, তবে এক সম্পূর্ণ অন্য মানুষ হয়ে।
লন্ডন পৌঁছনোর তিন দিনের মধ্যেই প্রখ্যাত ছবি ‘বাইসাইকেল থিভস’ দেখে নিয়েছিলেন সত্যজিৎ। কোম্পানিতে চাকরির ফাঁকে ‘পথের পাঁচালি’ তৈরির চিন্তা ভাবনা আগেই করেছিলেন তিনি। ‘বাইসাইকেল থিভস’ দেখে পরিচালক সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিলেন যে যখনই সেই ছবি তিনি বানাবেন এমনই লোকেশনে শুট করবেন। লন্ডনে থাকাকালীন ১০০টির ওপরে ছবি দেখেন তিনি। দেশে ফেরার পথেই লিখে ফেলেছিলেন তাঁর অন্যতম সেরা সৃষ্টি পথের পাঁচালির প্রথম পাণ্ডুলিপি।
ছবি তৈরির ভাবনায় আরও ইন্ধন জুগিয়েছিল আম আঁটির ভেঁপু। আম আঁটির ভেঁপুর প্রচ্ছদ আঁকতে গিয়ে সত্যজিৎ ঠিক করেন মূল উপন্যাসটি পড়বেন। সেই ভাবনা থেকেই জন্ম পথের পাঁচালির। কিন্তু ছবি তৈরি করতে গিয়ে দেখা দেয় অর্থ সঙ্কট। স্ত্রী বিজয়ার গয়না, নিজের সঞ্চয় সব শেষ। শেষে দেবদূত হয়ে এলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়। সৃষ্টি হল কালজয়ী চলচ্চিত্রের।
অস্কার সহ সর্বমোট ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পায় পথের পাঁচালি। পথের পাঁচালি, অপরাজিত এবং অপুর সংসার এই তিনটি ছবি ‘অপুর ট্রিলজি’ নামে খ্যাত।
পরিচালনার পাশাপাশি কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অনুরোধে নতুন করে শুরু করেন সন্দেশ পত্রিকা। একে একে এলেন ফেলুদা, তোপসে, লালমোহনবাবু, মগনলাল মেঘরাজ, প্রফেসর শঙ্কু, তারিণীখুড়ো।
এরপর একের পর এক তৈরি করেছেন চারুলতা, সোনার কেল্লা, জলসাঘর, নায়ক, শতরঞ্জ কে খিলাড়ির মতো ছবি। শতরঞ্জ কে খিলাড়ি হিন্দি চলচ্চিত্রের জগতে সত্যজিতের একমাত্র এবং অবিস্মরনীয় সৃষ্টি। নাসিরুদ্দিন শাহ ও নানা পাটেকর ছিলেন হিন্দি ছবিতে তাঁর প্রিয় অভিনেতা।