বাংলা হান্ট ডেস্ক: বিগত কয়েক দশক ধরে বিশ্ব বাণিজ্যকে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে আমেরিকা (US)। তাই অর্থনৈতিক দিক থেকে আমেরিকাই বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর দেশ। আর এই মুহূর্তে আমেরিকার অর্থনীতির মূল চাবিকাঠি হল ডলার (Dollar)। আসলে সারাবিশ্বে বেশিরভাগ লেনদেনের ক্ষেত্রে এই ডলারের ব্যবহারই বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি আমেরিকার সঙ্গে দীর্ঘ পাঁচ দশকের পুরনো পেট্রোডলারের চুক্তি বাতিল করে দিয়েছে সৌদি আরব (Saudi Arabia)।
প্রসঙ্গত ১৯৭৪ সালের ৮ জুন আমেরিকা এবং সৌদি আরবের মধ্যে পেট্রোডলার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। গত ৯ জুন এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেই চুক্তি নতুন করে আবার চালু করতে আগ্রহী নয় সৌদি।প্রসঙ্গত এতদিন এই চুক্তি দুই দেশের অর্থনীতি এবং সামরিক শক্তিকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করত।
তাই বিশেষজ্ঞদের দাবি, নতুন করে পেট্রোডলার চুক্তি স্বাক্ষরিত না হওয়ায় আগামী দিনে বিশ্ব বাণিজ্য এবং অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়তে চলেছে। তাছাড়া সারা বিশ্বে আমেরিকান ডলারের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও নাকি এই চুক্তির ব্যাপক ভূমিকা ছিল বলে জানিয়েছেন অনেকেই।কিন্তু এখন প্রশ্ন হল পেট্রোডলার চুক্তি আসলে কী? সৌদি তাতে আর কোনো আগ্রহ দেখাল না কেন? এর ফলে বিশ্ব অর্থনীতি পরিচালনায় আমেরিকার কি কোনো সমস্যা হবে?
এখানে বলে রাখি পেট্রোডলার কিন্তু কোনও মুদ্রা নয়। আসলে পেট্রোলিয়াম বা খনিজ তেল রফতানির জন্য যে আমেরিকান ডলার ব্যবহার করা হয় সেটাই পেট্রোডলার নামে পরিচিত। আসলে সত্তরের দশকের শুরুর দিকে ডলারের দাম আচমকা কমতে শুরু করেছিল। সেইসাথে পেট্রোলিয়ামের সঙ্কটও দেখা দিয়েছিল আমেরিকায়। অন্যদিকে সেসময় মিশর এবং সিরিয়ার নেতৃত্বে আরব দেশগুলির সাথে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ইজ়রায়েলের। সেসময় আমেরিকা ইজ়রায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছিল।
আরও পড়ুন: চাকরিপ্রার্থীদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ! লোক নেওয়া হবে রাজ্যের ভূমি দপ্তরে; বেতন থেকে আবেদন, জানুন সব
যার ফলে তখন খনিজ তেলের বাণিজ্যে আমেরিকার উপর বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলি। তখন এই খনিজ তেলের সঙ্কট থেকে মুক্তি পেতেই সৌদি আরবের সঙ্গে পেট্রোডলার চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল ওয়াশিংটন। কিন্তু সেই চুক্তির শর্ত ছিল, সৌদির কাছ থেকে তেল কিনে পরিবর্তে আমেরিকা তাদের সামরিক সহায়তা দেবে। সেইসাথে এই চুক্তির শর্ত ছিল, শুধু আমেরিকাই নয়, পৃথিবীর যে কোনো দেশেই সৌদি খনিজ তেল বিক্রি করলে অর্থের লেনদেন হবে ডলারে।
চুক্তিতে আরও বলা হয়েছিল, পেট্রোডলার থেকে যে রাজস্ব আদায় হচ্ছে, তা আমেরিকায় ফেরত পাঠাতে হবে সৌদিকে। এর মাধ্যমে এক দিকে যেমন সৌদি সামরিক সুরক্ষা পেয়েছিল, তেমনই আমেরিকা পেয়েছিল অর্থনৈতিক নিরাপত্তা।তবে এবার এই পেট্রোডলার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায়, এখন থেকে সৌদি শুধু ডলার নয়, অন্যান্য দেশের মুদ্রাতেও খনিজ তেল বিক্রি করতে পারবে। আর সৌদির এই সিদ্ধান্তের ফলে আমেরিকা কিছুটা হলেও বিপাকে পড়তে চলেছে বলেই মনে করছেন বিষষজ্ঞদের একাংশ।