‘হাইকোর্টের রায়কেই সমর্থন করছি’, কপাল পুড়ল সবার? সুপ্রিম কোর্টে SSC ২৬০০০ চাকরি বাতিল মামলা

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ রাজ্যের ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলায় (SSC Recruitment Scam) বড় আপডেট। হাই কোর্টের রায়কেই সমর্থন করছে বলে সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) জানিয়ে দিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। সোমবার মামলাটি ওঠে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চে। সেখানেই বড় বয়ান কেন্দ্রীয় এজেন্সির।

এদিন সুপ্রিম কোর্ট সিবিআই এর বক্তব্য জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে বলা হয়, “নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। সাদা খাতা জমা দিয়েও অনেক চাকরি হয়েছে। হাই কোর্টের যথার্থ রায় দিয়েছে। ওই রায়ই বহাল রাখা হোক।” ঠিক কিভাবে যোগ্য-অযোগ্য আলাদা করা যাবে সেই নিয়ে কোনো সমাধান সূত্রই বের করতে পারল না সিবিআই।

পাশাপাশি বিতর্কিত নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে কীভাবে যোগ্যদের আলাদা করে তাদের চাকরি বাঁচানো যাবে তা বলতে পারেননি কোনও পক্ষের আইনজীবীই। এদিন শুনানি চলাকালীন চিফ জাস্টিসের মন্তব্য, “পঙ্কজ বনসলের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ওএমআর শিট নিয়েও আমরা সন্দিহান। কোন তথ্য আসল? কমিশনের কাছে যা আছে নাকি পঙ্কজ বনসলের? এই নিয়ে ঠিক কিছুই বলতেই পারছে না কমিশন।”

চাকরি প্রার্থীদের আইনজীবী এদিনও পুরো প্যানেল বাতিলের পক্ষে জোড়ালো সওয়াল করেন। তিনি বলেন, ‘শনাক্ত না হওয়া একজন অযোগ্য প্রার্থীর চাকরিও যদি থেকে যায়, তাহলে একজন যোগ্য বঞ্চিত হবেন। কে কতদিন চাকরি করছেন সেটা অধিক গুরুত্বপূর্ণ নয়।” এদিন রায়দান স্থগিত রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। সবমিলিয়ে আপাতত অন্ধকারে ২৬ হাজার চাকরিপ্রাপকের ভবিষ্যৎ।

২৬০০০ জনের ভাগ্যে কি আছে? এসএসসি ২০১৬ সালের প্যানেলের ক্ষেত্রে কি যোগ্য ও অযোগ্যদের পৃথকীকরণ কি সম্ভব? এই নিয়ে টানাপোড়েনের মাঝেই আবারও কি পরীক্ষা নেওয়া যায়? এসএসসির ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলায় (SSC Recruitment Scam) এমন প্রশ্নই উঠেছিল শেষ শুনানিতে। গত ২৭ জানুয়ারি এই মামলার শেষ শুনানিতে মূল মামলাকারীদের হয়ে আদালতে জোড়ালো সওয়াল করেন তাদের আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য, ফিরদৌস শামিমরা। বিকাশবাবু আবারও পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেন। তার কথায়, পরীক্ষা নেওয়ার মাধ্যমেই যোগ্য ও অযোগ্যদের পৃথকীকরণ সম্ভব।

শীর্ষ আদালতে আইনজীবীর আবেদন ছিল, ২০১৬ সালে পরীক্ষায় যারা বসেছিলেন, বয়সের ঊর্ধ্বসীমা সরিয়ে তাদের ফের পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়া হোক। যদিও ‘যোগ্য’ প্রার্থীদের বক্তব্য ছিল, দীর্ঘদিন ধরে তারা চাকরি করছেন। রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার জন্য আবার নতুন করে তাদের পরীক্ষায় বসতে হলে তা যথেষ্ট অমানবিক পদক্ষেপ হবে।

আরেক আইনজীবী ফিরদৌস শামিম সওয়াল করেন, “প‍্যানেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ৪ বার নিয়ম বিরুদ্ধ কাউন্সেলিং হয়েছে। নম্বরের বিভাজন ছাড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াই বেনিয়মে ঠাসা।” এসএসসি-কে ৫০০ কোটি টাকা জরিমানা করার পক্ষে সওয়াল করেন আইনজীবী।

আরও পড়ুন: সরকারি কর্মচারীদের হোম লোনের ক্ষেত্রে ২% ছাড়, বিরাট ঘোষণা করল রাজ্য সরকার

উল্লেখ্য, গত বছর ১৮ এপ্রিল নিয়োগ দুর্নীতির জেরে এসএসসি ২০১৬ সালের গোটা প্যানেল বাতিল করে দেয় কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। আদালতের এই রায় নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে যায় গোটা রাজ্যে। উচ্চ আদালতের রায়ে এক ধাক্কায় চাকরি যায় প্রায় ২৬০০০ জনের।

ssc recruitment scam 1

হাইকোর্টের রায়ের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই তা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য সরকার, এসএসসি, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। সুপ্রিম কোর্টে সেই মামলা উঠলে আপাতত সকলেরই চাকরি বহাল রাখা হয়েছে। সকলকে রক্ষাকবচ দিয়েছে আদালত। তবে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, দুর্নীতি প্রমাণ হলে শিক্ষকদের (ssc recruitment scam) চাকরি তো যাবেই পাশাপাশি ফেরত দিতে হবে বেতনও। সেই মামলাই এখনও ঝুলছে শীর্ষ আদালতে। আজ রাজ্য সরকার ও এসএসসি-র বক্তব্য শুনছেন প্রধান বিচারপতি।

Sharmi Dhar
Sharmi Dhar

শর্মি ধর, বাংলা হান্ট এর রাজনৈতিক কনটেন্ট রাইটার। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৩ বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত ।

সম্পর্কিত খবর