বাংলা হান্ট ডেস্কঃ জলের মতো কাটছে বছর! কিন্তু এখনও পর্যন্ত রাজ্য (West Bengal) সরকারি স্কুলগুলিতে শিক্ষকের অভাব মিটল না। পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় দু’বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে শিক্ষকদের বদলির আবেদন জমার পোর্টাল, ‘উৎসশ্রী’। সম্প্রতি রাজ্য সরকারি এই পোর্টালটি শুধুমাত্র ‘মিউচুয়াল’ বদলির জন্যই চালু রয়েছে। আশ্চর্যজনকভাবে দিনের পর দিন এই পোর্টাল বন্ধ থাকলেও পুরুলিয়া জেলায় বদলি হয়ে গেলেন বহু প্রাথমিক শিক্ষক।
পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) শিক্ষক বদলি নিয়েও বিরাট কারচুপি!
সেটা কি করে সম্ভব? তা নিয়েই উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন। শিক্ষক সংগঠন গুলির অভিযোগ নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) পুরুলিয়া জেলার ওই সমস্ত প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়েছে। এর ফলে দেখা যাচ্ছে শহরাঞ্চলের স্কুলে বেশি শিক্ষক রয়েছেন আর একেবারে উল্টো ছবি রয়েছে গ্রামের স্কুলগুলিতে।
জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী প্রত্যেকটি স্কুলেই ৩০ জন ছাত্র পিছু একজন শিক্ষক থাকা উচিত। কিন্তু বাস্তবে পুরুলিয়া জেলার ছবিটা একেবারে অন্য। শিক্ষক সংগঠনগুলির দাবি শুধুমাত্র রঘুনাথপুর শহরের স্কুলগুলিতে ছাত্র সংখ্যার অনুপাতে ৩২ জন অতিরিক্ত শিক্ষক রয়েছেন। পুরুলিয়া ও শহরের পুরুলিয়া শহর ও পাশের গ্রামাঞ্চলে ৭৪ টি স্কুলে অতিরিক্ত শিক্ষকের সংখ্যা দেড়শোর বেশি। অন্যদিকে গত এক বছর ধরে ঝালদা ৩ চক্রের ২২টি স্কুল চলছে একজন শিক্ষকের ভরসাতেই।
পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাবে রাজ্যের (West Bengal) অধিকাংশ সরকারি স্কুলের শিক্ষা পরিকাঠামো একেবারে ভেঙে পড়েছে। শিক্ষকদের একাংশের দাবি বর্তমানে পুরুলিয়া জেলার গ্রামাঞ্চলের প্রাথমিক স্কুলগুলিতে পড়ুয়া থাকলেও শিক্ষকের অভাবে পড়াশোনা কার্যত লাটে ওঠার জোগাড়। তাঁদের কথায় বহু পড়ুয়া থাকায় মিড ডে মিলের দেখাশোনা সহ অন্যান্য কাজ করতেই অনেক সময় চলে যাচ্ছে। হাতেগোনা মাত্র কয়েকজন শিক্ষকদের পক্ষে পড়ানোর সময়টুকু বার করাও কঠিন হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন: সিবিএসই এবং আইসিএসই বোর্ডে চিঠি শিক্ষা দফতরের! হঠাৎ কি হল?
বিরোধী শিক্ষক সংগঠন থেকে অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকদের একাংশের দাবি গত এক দেড় বছর ধরে বেনিয়ম হয়েছে জেলার শিক্ষক বদলির ক্ষেত্রে। তাঁদের দাবি, সাধারণ বদলির জন্য উৎসশ্রী পোর্টাল বন্ধ রয়েছে। এই সময়ে কোনও শিক্ষককে যদি বিশেষ কারণে বদলি নিতে হয় তাহলে তাঁকে প্রথমে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে আবেদন করতে হয়। তিনি তাঁর মতামত দিয়ে আবেদনটি পাঠান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের কাছে। এরপর সেখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকদের একাংশের মতে কোন শিক্ষক বদলির আবেদন করলে প্রথমেই দেখা হয় তিনি ওই স্কুল থেকে চলে গেলে স্কুলে ছাত্র শিক্ষক অনুপাত কি হবে? অর্থাৎ স্কুলের শিক্ষকের কোন ঘাটতি ঘটবে কিনা? তারপরেই মতামত জানিয়ে সেই বিষয় পাঠানো হয় প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের কাছে। যদিও বহু ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে আবর বিদ্যালয় পরিদর্শকদের অন্ধকারে রেখেই এই প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি হয়ে যাচ্ছে।
আবার অনেক সময়, শিক্ষকরা সংসদ থেকে বদলির নির্দেশ নিয়ে অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে ‘রিলিজ অর্ডার’ নিতে যান। পরে সেই বদলির নির্দেশ সংসদের তরফ থেকে ইমেইল মারফত অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকদের জানানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জেলার এক অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক জানিয়েছেন, ‘দীর্ঘ দিনের চাকরি জীবনে এইভাবে বদলির ঘটনা আগে দেখিনি, জানিনা কোন জাদু বলে এমনটা হচ্ছে।’