প্রাসাদোপম বাড়ি পেশায় শিক্ষক তৃণমূল অঞ্চল সভাপতির, রয়েছে লিফটও! দেখে ‘থ” এলাকাবাসী

বাংলাহান্ট ডেস্ক : ২০২২ সালটা তৃণমূল সরকারের সত্যিই খুব খারাপ যাচ্ছে। একের পর এক দুর্নীতিতে জর্জরিত নবান্নের একাধিক মন্ত্রী ও তাবড় নেতারা। এবার সামনে এল আরও এক মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা। এতকাল নিজের এক দোতলা বাড়িতে সপরিবারে থাকতেন পেশায় শিক্ষক তথা তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি মানস দাস। সেটা নিয়ে কারুর কোনও মাথাব্যাথা ছিল না এতদিন। থাকার কথাও নয়। কিন্তু মাস্টারমশাই হলদিয়ার ব্রজলালচকে এখন বানাচ্ছেন ছ’তলা বিশিষ্ট বিরাট প্রাসাদ। যা দেখে চক্ষু চড়কগাছ স্থানীয় মানুষদের।

স্কুলে নিয়োগের দুর্নীতিতে সরগরম গোটা রাজ্য। এই পরিস্থিতিতে হলদিয়ার এই শিক্ষক নেতার নির্মীয়মাণ বিরাট বাড়িটি ঘিরেই উঠছে একের পর এক প্রশ্ন। বাড়ি যেখানে তৈরি হচ্ছে, সেখানে প্রতি ডেসিমেল জমির দাম কম করে ১০ লক্ষ টাকা। প্রায় ৫ ডেসিমেল জমিতে তৈরি ১০ হাজার বর্গফুটের ওই বাড়ির দাম তো কোটির নিচে হবে না বলেই মনে করছেন সকলে। মানসবাবু বেশ বুক ফুলিয়ে গর্বের সঙ্গেই বলছেন, ‘জমি-বাড়ি সব মিলিয়ে বহুতলটির দাম ১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকার উপর হবেই।’

প্রায় তিরিশ বছরেরও বেশি দিন শিক্ষকতা করছেন মানসবাবু। বর্তমানে মহিষাদল ব্লকের হরিখালী বসন্তকুমার বাণী মন্দির বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তিনিই। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতির পদও সামলেছেন প্রায় বছর ছয়েক। বর্তমানে তিনি হলদিয়া উন্নয়ন ব্লকে চকদ্বীপা অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি। ব্রজলালচকে ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক ঘেঁষে বালুঘাটা যাওয়ার রাস্তার সংযোগস্থলে তাঁর সুউচ্চ বাড়ি তৈরি হচ্ছে। বহুতলটির প্রথম দু’টি তলায় হচ্ছে মার্কেট কমপ্লেক্স। আর বাকি তিনটি তলার প্রত্যেকটিতে রয়েছে তিনটি করে ফ্ল্যাট। এর মধ্যে রাস্তার দিকের ফ্ল্যাটটি দুই বেডরুমের এবং পিছনের দিকের দু’টি ফ্ল্যাট আছে এক বেডরুমের। বহুতলে থাকছে লিফট এবং বেসমেন্টে বিরাট গাড়ি গ্যারাজও।

এই এলাকায় এইরকম বাড়ি আর একটিও নেই। সামাজিক মাধ্যমে এই নির্মীয়মাণ বাড়িটির ছবি পৌঁছে গিয়েছে দূরদূরান্তে। অনেকে আবার সময় করে ব্রজলালচকে এসে দেখেও যাচ্ছেন বাড়ির সাজসজ্জা। অবশ্য দেখার মতো জিনিস বানিয়েছেন বটে মানস দাস।

বাড়ি বানানো সম্প্রতি শুরু হলেও ওই মানস দাসের রমরমা বাজার কিন্তু বহুকাল আগে থেকেই। তৎকালীন তৃণমূলের দাপুটে নেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিশেষ ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলেই জানা যায়৷ দাদার অনুগামী হিসাবে ব্যানারে নাকি নামও থাকত তাঁর। বিরোধীদের পক্ষের অভিযোগ, ২০১৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি থাকাকালীন নিয়োগ এবং বদলিতে একাধিক দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন মানস। বিজেপি প্রভাবিত ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘের রাজ্য সহ-সভাপতি প্রদীপ বিজলী বলেন, ‘সংসদ সভাপতি থাকাকালীন ওঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনেকগুলি অভিযোগ রয়েছে। তা ছাড়া, ওই সময়ই তো রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।’

জানা যাচ্ছে, ব্রজলালচকে নিজের পৈতৃক বাড়ি সংস্কার করে সেটি দোতলা তৈরি করেছেন মানস দাস। তার পরেও এত টাকার প্রাসাদ! শুধুই শিক্ষকতা করে এত রোজগার করা সম্ভব? এই প্রশ্নের উত্তরে রীতিমতো খাতায় কলমে হিসেব দিলেন মানসবাবু। তিনি বললেন, ‘১৯৯০ সাল থেকে স্কুলে চাকরি করছি। ২০০৮-এ প্রধান শিক্ষক হয়েছি। আর জমিটা কিনেছিলাম প্রায় পাঁচ বছর আগেই। আমার এতদিনের সঞ্চয়, সঙ্গে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে বাড়ি বানাচ্ছি। আমার এক শ্যালকও উচ্চ পদে চাকরি করেন। তিনিও বেশ কিছু টাকা সাহায্য সাহায্য করেছেন। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে মানসবাবু বলেন, ‘টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন। আমার নিজের দুই ছেলেই তো বেকার। শুধু শুধু বিতর্ক তৈরি করে কোনও লাভ হবে না।’ তবে মানসবাবু যাই বলুন তাঁর প্রাসাদোপম বাড়ি দেখে ভ্রু কোঁচকাচ্ছেন অনেকেই। এই রোজগার সৎ পথের নয় বলেই দাবি সকলের।


Sudipto

সম্পর্কিত খবর