বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বিগত কিছুদিন ধরেই শিরোনামে রয়েছেন এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি শেখর কুমার যাদব (Shekhar Kumar Yadav)। মাসখানেক আগে এলহাবাদ হাইকোর্টের (Allahabad High Court) বার কাউন্সিলের এক সভায় উদাত্ত কণ্ঠে তিনি বলেছিলেন, ‘এটা হিন্দুস্থান। সংখ্যাগুরু হিন্দুদের ইচ্ছা মতই দেশ চলবে।’ সেই সময় ওই বিচারপতি সাফ জানিয়েছিলেন দেশে আইন কার্যকর হয় সংখ্যাগুরুদের কথা মাথায় রেখে। একটি পরিবার বা সমাজের আঙ্গিকে ভেবে দেখলে বোঝা যাবে যা সংখ্যাগুরুকে সুবিধা দেয় এবং তাদের যা খুশি করে সেটাই দেশের আইন হিসেবে বেশি গ্রহণযোগ্য।
‘বিতর্কিত’ বিচারপতি যাদবেরর বিরুদ্ধে তদন্তের আর্জি! সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court)
এখানেই শেষ নয়! ‘মুসলিম’ শব্দটির উল্লেখ না করেই তিনি বলেছিলেন, ‘একাধিক বিয়ে করা তালাক প্রথা, হালাল… মেনে নেওয়া যায় না।’ একজন বিচারপতিকে প্রকাশ্যে এমন মন্তব্য করতে দেখে তোলপাড় শুরু হয়ে যায় সারা দেশে। বিভিন্ন মহলে শুরু হয়ে যায় সমালোচনা। শেষ পর্যন্ত জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) পর্যন্ত। সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নির্দেশে শেখর যাদবের কাছে তাঁর মন্তব্যের ব্যাখ্যা তলব করেন এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ বনশালী।
বিতর্কিত ওই মন্তব্যের জন্য শেখর যাদবকে ক্ষমা চাইতেও বলা হয়েছিল। কিন্তু নিজের মন্তব্যে অনড় থেকেই ক্ষমা চাইতে সরাসরি অস্বীকার করে দেন তিনি। সর্বোচ্চ আদালতের (Supreme Court) প্রধান বিচারপতিকে লেখা জবাবি চিঠিতে তিনি পাল্টা জানিয়েছিলেন,’আমি ভুল কিছু বলিনি। ক্ষমা চাওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না।’ সরাসরি ধর্ম নিয়ে মন্তব্য করার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ওই বিচারপতি জানিয়েছিলেন, তিনি ধর্ম সংস্কারের কথা বলেছেন। হিন্দু ধর্ম ও সমাজের ইতিবাচক দিকগুলি তুলে ধরে সেগুলির প্রচলনের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। তিনি মনে করেন ইসলামেও এই ধরনের সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। তবে কোনো ধর্মকে আক্রমণ করা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না বলেই জানিয়েছিলেন ওই ‘বিতর্কিত’ বিচারপতি।
আরও পড়ুন: শুধু আবাসের বাড়িই নয়, এবার জমিও দিচ্ছে রাজ্য সরকার! বড় ঘোষণা
জাস্টিস শেখর যাদবের বিরুদ্ধে এবার সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) তদন্তের আর্জি জানালেন ১৩ জন প্রবীণ আইনজীবী। এলাবাদ হাইকোর্টের ওই বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্তের আর্জি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নাকে চিঠি লিখেছেন তাঁরা। সেখানে জানানো হয়েছে, জাস্টিস যাদবের ওই মন্তব্য, ‘হেট স্পিচ’-এর সামিল। তাই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়ার জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন ওই আইনজীবীরা।
মাস খানেক আগে এলাহাবাদ হাই কোর্ট চত্বরে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ওই অনুষ্ঠানে বিচারপতি যাদব বলেছিলেন, ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করা হলে তবেই সমাজে সম্প্রীতি, লিঙ্গসাম্য, ধর্মনিরপেক্ষতা বাড়বে।’ তারপরেই তিনি বলেছিলেন, ‘ বলতে আপত্তি নেই যে, এটা হিন্দুস্তান। সংখ্যাগরিষ্ঠের ইচ্ছে অনুযায়ীই দেশ চলবে। এটাই আইন। আমি হাই কোর্টের বিচারপতি হিসেবে এটা বলতে পারি না যে, এমন কথা বলা চলবে না।’