বাংলা হান্ট ডেস্ক: এবার সরকার নতুন টেলিকম বিল নিয়ে আসার প্রস্তুতি জোরকদমে শুরু করেছে। এমনকি, ইতিমধ্যেই টেলিকমিউনিকেশন বিল ২০২২ (Indian Telecommunication Bill, 2022)-এর খসড়া সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এমতাবস্থায়, আগামী ২০ অক্টোবর পর্যন্ত এই বিলের প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিল্পের সাথে জড়িত ও বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শও চাওয়া হয়েছে। তবে, বর্তমানে শুধু খসড়ার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হলেও আগামী দিনে এই সংক্রান্ত পরামর্শ পাওয়ার পর এটির চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করা হবে বলে জানা গিয়েছে। এরপর সরকার কর্তৃক গঠিত কমিটি এটি অনুমোদন করবে এবং বিলটিকে সংসদের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। সরকারের মতে, এই বিলের প্রধান উদ্দেশ্য হল জালিয়াতি কমানো এবং ব্যবহারকারীদেরকে আরও ক্ষমতা দেওয়া।
এখন কিছুই লুকোনো যাবে না: নতুন এই বিলের অধীনে, এবার থেকে কে আপনাকে কল বা এসএমএস করছেন তা জানার অধিকার আপনার থাকবে। অর্থাৎ কল পাওয়ার সাথে সাথেই স্ক্রিনে ফুটে উঠবে সেই ব্যক্তির নাম। এরপর আপনার ওপর নির্ভর করবে আপনি কলটি রিসিভ করতে চান কি না। পাশাপাশি, সাধারণ নম্বর থেকে আসা কলের পাশাপাশি, হোয়াটসঅ্যাপের মতো ইন্টারনেট কলের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম জারি থাকবে বলে জানা গিয়েছে।
মূলত, সরাসরি KYC মারফত এই নাম সামনে আসবে। এই প্রসঙ্গে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে, KYC-র জন্য এবার থেকে নিজের সঠিক পরিচয় দিতে হবে। এমতাবস্থায়, কেউ এই সংক্রান্ত কোনো অপরাধমূলক কাজ করলে সেক্ষেত্রে পঞ্চাশ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, Apple এমন একটি কোম্পানি যারা তাদের ফোনের অ্যাপে কাউকে অ্যাক্সেস দেয় না। এর ফলে কলার রিকগনিশন অ্যাপগুলি কোনো কাজে আসে না। এমন পরিস্থিতিতে নতুন বিল “গেম চেঞ্জার” হতে পারে।
DND সত্যিই বিরক্ত করবে না: DND বা “Do not Disturb”-এর প্রসঙ্গেও নয়া নিয়ম জারি হতে চলেছে। মূলত, নতুন বিলে এই বিষয়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আপনি যদি এই বৈশিষ্ট্যটি সক্রিয় করে রাখেন, সেক্ষেত্রে এবার থেকে যেকোনো মার্কেটিং কল এবং বার্তা সরাসরি DND অপশনে পৌঁছবে। অর্থাৎ আপনার সম্মতি ছাড়া কেউ আপনাকে বিরক্ত করতে পারবে না।
ইন্টারনেট কলের ক্ষেত্রে খরচ হবে: ভারতীয় টেলিকমিউনিকেশন বিল ২০২২-এর খসড়া অনুসারে, হোয়াটসঅ্যাপ, জুম, টেলিগ্রাম এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মগুলি, যা ওয়াইফাই কলিং এবং মেসেজিং-এর সুবিধা প্রদান করে, তাদের ভারতে কাজ করার জন্য টেলিকম সংস্থাগুলির মতো লাইসেন্স পেতে হবে। পাশাপাশি, ভারতের টেলিকম অপারেটররা যে নিয়মগুলি অনুসরণ করে, সংশ্লিষ্ট অ্যাপগুলিকেও এই নিয়মগুলি অনুসরণ করতে হবে। যার ফলে এখনও পর্যন্ত ইন্টারনেট কলিং বিনামূল্যে করা গেলেও নতুন এই বিলের পরিপ্রেক্ষিতে এবার থেকে এই কলিংয়ের ক্ষেত্রে খরচ বাড়তে পারে। পাশাপাশি, নতুন বিলটি Netflix, Amazon Prime Video, Hotstar-এর মতো OTT অ্যাপগুলিতেও প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ সরকার তাদের কাছ থেকে গ্রাহকের তথ্য চাইতে পারে।
টাওয়ারের পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত: এই নিয়ম টেলিকম সংস্থাগুলিকে যথেষ্ট স্বস্তি দেবে। এখনও পর্যন্ত এমন হয় যে, কারো জমি বা বাড়িতে টাওয়ার বসানো হলে পরবর্তীকালে তিনি তা বিক্রি করে দিলেও টাওয়ারটির ওপর অধিকার কায়েম রাখেন। ফলে আইনি ঝামেলায় পড়তে হয়। এরকম হাজার হাজার মামলা এখনও বিচারাধীন রয়েছে। তবে, নতুন বিল অনুযায়ী, টাওয়ারগুলি টেলিকম কোম্পানির মালিকানাধীন থাকবে।
এছাড়াও, এই বিলে কোনো কোম্পানি দেউলিয়া হওয়ার ক্ষেত্রে সরকারকে স্পেকট্রাম ফেরত দেওয়ার বিষয়ে এবং সংযুক্তিকরণ কিংবা অধিগ্রহণের প্রক্রিয়ার বিষয়টি সহজ করার কথাও বলা হয়েছে। সরকার বলেছে যে সংযুক্তিকরণ এবং অধিগ্রহণের জন্য অনুমতির প্রয়োজন নেই। শুধু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। এছাড়াও, প্রত্যন্ত গ্রামে পরিষেবার জন্য USOF অর্থাৎ Universal Service Obligation Fund-এর প্রসঙ্গটিও নতুন বিলে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি, এর নাম পরিবর্তন করে টেলিকম ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (টিডিএফ) করার প্রস্তাবও রয়েছে।