বন্ধ অর্ধেকের উপর বিদ্যুৎ কেন্দ্র! দীপাবলির আগে এই রাজ্যে প্রবল সঙ্কট! রয়েছে মাত্র ৪ দিনের কয়লা

বাংলা হান্ট ডেস্ক: দীপাবলির আগেই এবার দেশের একটি রাজ্যে প্রবল বিদ্যুতের সঙ্কট পরিলক্ষিত হয়েছে। জানা গিয়েছে, রাজস্থানে (Rajasthan) কয়লা সরবরাহ না করার কারণে রাজ্যের ২৩ টি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে ১১ টি কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এমনকি, বেশ কয়েকটি জেলায় ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে বিদ্যুৎ পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে। যার জেরে প্রবল সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এমতাবস্থায়, ওই রাজ্যের এহেন পরিস্থিতি দেখে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, দীপাবলির সময়েও অন্ধকারে থাকতে পারে রাজস্থান।

রাজস্থানে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১১ টি ইউনিট বন্ধ: এই প্রসঙ্গে দৈনিক ভাস্করের একটি প্রতিবেদন অনুসারে জানা গিয়েছে যে, বর্তমানে রাজস্থানে কয়লা সরবরাহ না করার কারণে মোট ১১ টি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। যার মধ্যে ৪ টি ইউনিট সুরতগড় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অপরদিকে, কোটা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩ টি এবং রাজওয়েস্টের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রেরও ৩ টি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও, ছাবড়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং রামগড়েও ১ টি করে ইউনিট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এমতাবস্থায়, এই ১১ টি ইউনিট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাজ্যে ২,৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এই প্রসঙ্গে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিদিন ৩০ হাজার মেট্রিক টনের বেশি কয়লা সরবরাহ ঘাটতির কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি, কয়লা ঘাটতির পেছনে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কর্মকর্তাদের গাফিলতির বিষয়টিও সামনে এসেছে।

কি বলছে পরিসংখ্যান: প্রতিবেদনটিতে রাজস্থান বিদ্যুৎ বিকাশ নিগম লিমিটেডের অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে যে ২০২২-২৩ সালের পিক আওয়ারে, বিদ্যুতের চাহিদা ১৭,৭৫৭ মেগাওয়াটে পৌঁছতে পারে। যদিও, উপলব্ধ রয়েছে মাত্র ১২,৮৪৭ মেগাওয়াট। এমন পরিস্থিতিতে কয়লা সরবরাহ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধের কারণে বিদ্যুৎ পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে।

বর্তমানে পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষ্যে দীপাবলির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অনেক ব্লকে প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরেই ওই রাজ্যে এমনটাই চলছে। গ্রাম ছাড়া শহরাঞ্চলেও এই সমস্যা ভোগাচ্ছে সবাইকে। রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজস্থানে ১ কোটি ৪৭ লক্ষ বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছেন। এমতাবস্থায়, আধিকারিকরা জানিয়েছেন যে, তাঁদের কাছে আর মাত্র ৪ দিনের কয়লা অবশিষ্ট রয়েছে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রের জারি করা নির্দেশও লঙ্ঘিত হয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশ অনুযায়ী, রাজ্যের কাছে কমপক্ষে ২৬ দিনের স্টক রাখতে হয়।

ছত্তিশগড়ে খনির কাজ নিষিদ্ধ: এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, বর্তমানে রাজস্থানের বিদ্যুৎ এবং কয়লা সংক্রান্ত এই সমস্ত সমস্যার মূলে রয়েছে ছত্তিশগড়। প্রকৃতপক্ষে, রাজস্থান বিদ্যুৎ উৎপাদন নিগম লিমিটেডকে কয়লা সরবরাহের জন্য, ছত্তিশগড়ে “পার্সা ইস্ট অ্যান্ড কান্তা বসন কোল ব্লক” নামে একটি খনি বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু ছত্তিশগড় সরকার সরজুগায় ৮৪১ হেক্টরের এক্সটেনশন ব্লকে খনন নিষিদ্ধ করেছে। মূলত, সেখানকার আদিবাসী থেকে শুরু করে স্থানীয় নেতা ও বেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি জল-বন-জমি সংক্রান্ত আন্দোলন এবং খোদ ছত্তিশগড় সরকারের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই এই খনন নিষিদ্ধ রয়েছে।

কংগ্রেস সরকার (ছত্তিশগড়) কংগ্রেস সরকারের (রাজস্থান) অনুরোধ শুনছে না: রাজস্থানে কংগ্রেস সরকার থাকা সত্ত্বেও মন্ত্রীরা ছত্তিশগড়ের কংগ্রেস সরকারের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করছেন না। এমতাবস্থায়, তাঁরা কেন্দ্রের কাছে অনুরোধ করছে। পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রও কিছু দাবি মেনে নিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। যেমন, ৩ রেক কয়লার সাহায্য করার ঘোষণা করে কেন্দ্র রাজস্থান সরকারকে ছত্তিশগড়ের কংগ্রেস সরকারের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করতে বলেছে।

coal electricity india

প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, রাজস্থানের সমস্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালাতে প্রতিদিন ৩৭ রেক (১ রেক সমান ৪ হাজার মেট্রিক টন) কয়লা প্রয়োজন। তবে কয়েক দিন আগে তা হ্রাস পেয়ে মাত্র ২০ রেকে নেমে এসেছে এবং এখন তা আরও কমে গিয়ে ১৪-তে নেমে এসেছে বলে জানা গিয়েছে।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর