বাংলাহান্ট ডেস্ক : সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসনকে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে, যৌনকর্মীদের কাজে কোনওরকম হস্তক্ষেপ করা যাবে না। যৌনকর্ম অর্থাৎ বেশ্যাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিলো দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, প্রাপ্তবয়স্ক ও সম্মতিক্রমে যৌনকর্ম করা নারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়া কোনও ভাবেই গ্রহন যোগ্য নয়।
সুপ্রিম কোর্ট আরও জানিয়েছে, যৌনকর্মীরাও দেশের নাগরিক। আইনের অধীনে মর্যাদা ও সমান সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারী তাঁরাও। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাও, বিআর গাভাই এবং এএস বোপান্নার একটি বেঞ্চ যৌনকর্মীদের অধিকার রক্ষার জন্য ৬টি নির্দেশ জারি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, যৌনকর্মীরাও আইনের অধীনে সমান সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারী।
বেঞ্চ আরও জানিয়েছে, ‘যৌনকর্মী যদি প্রাপ্তবয়স্ক এবং স্বেচ্ছায় এই পেশায় আসে, তাহলে পুলিশের কোনও অধিকারই নেই তাঁদের কাজে হস্তক্ষেপ করার।’ আদালত জানায়, ভারতের সংবিধানের মৌলিক অধিকার অংশে ২১ নম্বর অনুচ্ছেদে দেশের প্রতিটি মানুষের মর্যাদাপূর্ণ জীবনের অধিকার রয়েছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, পুলিশ অভিযান চালানোর সময়, যৌনকর্মীদের গ্রেফতার বা হয়রানি করা উচিত নয়, কারণ স্বেচ্ছায় যৌন কাজে জড়িত হওয়া কখনোই বেআইনি নয়।
শীর্ষ আদালত এও জানিয়েছে, একজন নারী যদি যৌনকর্মী হন, তাঁর সন্তানকে তাঁর মায়ের থেকে আলাদা করা উচিত নয়। যৌনকর্মী এবং তাঁদের সন্তানদেরও মৌলিক সুরক্ষা এবং মর্যাদাপূর্ণ জীবনের অধিকার রয়েছে। যদি কোনও নাবালককে কোনও পতিতালয়ে বসবাস করতে দেখা যায়, অথবা কোনও যৌনকর্মীর সঙ্গে বসবাস করতে দেখা যায়, তাহলে এটা প্রথমেই ভেবে নেওয়া উচিত নয় যে শিশুটিকে পাচার করা হয়েছে।
কোনও যৌনকর্মী যৌন নিপীড়নের শিকার হলে তাঁকে আইনের আওতায় তাৎক্ষণিক চিকিৎসা-সহ যৌন নিপীড়নের শিকার ব্যক্তিকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। আদালত বলেছে, দেখা গেছে পুলিশ যৌনকর্মীদের প্রতি নিষ্ঠুর ও হিংসাত্মক মনোভাব পোষণ করে। এভাবেই এমন একটি অংশ রয়েছে যাঁদের অধিকার স্বীকৃত হয়নি আজও। পুলিশ ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে যৌনকর্মীদের অধিকারের প্রতি আরও সংবেদনশীল হতে হবে বলেই মনে করে সর্বোচ্চ আদালত।
কোর্ট প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়াকে উপযুক্ত নির্দেশিকা জারি করার জন্য আবেদন করারও নির্দেশ দিয়েছে। যাতে যৌনকর্মীদের পরিচয়, অভিযুক্ত, গ্রেফতার, অভিযান বা অন্য কোনও প্রচারের সময় প্রকাশ না হয়। এছাড়াও, এমন কোনও ছবি সম্প্রচার করা উচিত নয়, যাতে তাঁর পরিচয় প্রকাশ পেতে পারে। সুপ্রিম কোর্টের এই নজিরবিহীন রায়ে যৌনকর্মীদের অধিকার ও সম্মান অনেকাংশেই রক্ষিত হবে বলেই মনে করছে দেশের বিভিন্ন মানবাধিকার গোষ্ঠী।