বাংলাহান্ট ডেস্কঃ এক অভূতপূর্ব বিদায় অনুষ্ঠানের সাক্ষী থাকল হিমাচল প্রদেশ। শহীদ ছেলেকে চোখের জলের বদলে গর্ব এবং মর্যাদার সঙ্গে শেষ বিদায় জানালেন বাবা মা। ১০ কিলোমিটার পথে পুষ্পবৃষ্টি করলেন এলাকাবাসীরা।
শহীদের অঙ্কেশ ভরদ্বাজের শেষকৃত্যে এমনই ঘটনা প্রত্যক্ষ করলেন হিমাচলবাসী। সপ্তাহখানেক আগে অরুণাচল প্রদেশে বরফের ধসে নিখোঁজ হন ২১ বছরের অঙ্কেশ সহ আরও ৬ জওয়ান। অবশেষে দেহ উদ্ধার করে রবিবার অঙ্কেশের গ্রাম হিমাচল প্রদেশের বিলাসপুর জেলার সেউ গ্রামে পৌঁছায়।
বীর শহীদের দেহ গ্রামে পৌঁছালে আতশবাজির রোশনাইতে স্বাগত জানানো হয় তাঁকে। ১০ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে ফুল বর্ষণ করেন উপস্থিত মানুষেরা। প্রতিটি রাস্তা, বাড়ির ছাদ ভরে ওঠে মানুষে। সবাই শুধু একটা বার দেখতে চান অঙ্কেশকে। এই শেষকৃত্যে যোগ দেন প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। তেরঙ্গা হাতে এসে দাঁড়ায় শিশুরা। যুবকেরা তেরঙ্গার সঙ্গেই চমকদার স্বাগত জানান এই তরুণ বীরকে। আবালবৃদ্ধবনিতা সকলেই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তাঁকে। তারাঘেল থেকে শহীদবাড়ি পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ফুল বর্ষণ করে সম্মান জানানো হয় শহীদকে। ইতিহাসে এই প্রথমবার, খোলা জিপে করে শেষকৃত্যের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় ভারতের কোনো শহীদকে।
ছেলের বিয়ে দেখা আর কখনও হবে না তাঁদের। তাই এদিন আদরের ছেলেকে বরবেশে সাজান অঙ্কেশের বাবা মা। অশ্রুসিক্ত চোখে ছেলেকে সেহরা আর নোটের মালা পরিয়ে আদর করে দেন মা। এদিন কোট প্যান্ট, টাই এবং মাথায় পাগড়ি পরেই ছেলের মৃতদেহ নিতে আসেন বাবা বাঞ্ছারামও। বুক ফাটা কষ্ট চেপে ছেলের শেষ যাত্রাকে বিবাহযাত্রার রোশনাইতে মুড়ে ফেলতে চান তিনি।
এদিন অঙ্কেশের মরদেহ বাড়িতে এসে পৌঁছানোর আগে শোকে বন্ধ ছিল এলাকার সমস্ত দোকানপাট। সকাল ৯টা নাগাদ হামিরপুর বিলাসপুর সীমান্তের তারঘেলে শহীদ অঙ্কেশের মরদেহ পৌঁছায়। এই সময় ১০ কিলোমিটার সড়কের সব দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয় শোকে।
শহীদের শেষযাত্রায় অংশ নেওয়া ১৫ হাজার মানুষের জন্য রাস্তার পাশে জলের স্টল বসান গ্রামবাসীরা। অঙ্কেশের নাম অমর রাখার স্লোগানে আলোড়িত হয়ে ওঠে আকাশ বাতাস। রাজ্য সরকারের তরফে শহীদকে শ্রদ্ধা জানান খাদ্য সরবরাহ মন্ত্রী রাজেন্দ্র গর্গ। এছাড়াও তাঁকে শ্রদ্ধার্ঘ জানান জেলা কালেক্টর, পুলিশ সুপার, এসডিএম, ডিএসপি সহ সেনাবাহিনীর একাধিক কর্মকর্তারা।
চোখের জলে নয়, বরং খানিক অভিমান আর অনেকটা গর্ব নিয়েই ঘরের ছেলেকে বিবাহযাত্রার রোশনাই মাখিয়ে শেষ বিদায় জানালেন সেউ বাসী। যা কি না চোখের জল ধরে রাখতে দেয় না কোনো ভারতীয়েরই।