বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: বর্তমান সময়ে সবাই নতুন নতুন উপায়ে অর্থ উপার্জন করতে আগ্রহী। কেউ কেউ অনন্য ব্যবসায়িক ধারণা অবলম্বন করে তাদের ব্যবসায় ধীরে হলেও সফল হচ্ছেন। কে যে কখন কোন উপায়ে সফল হবেন তা আগে থেকে কেউ বলতে পারে না। তাই একজন আগ্রহী মানুষ তার উপার্জনের জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতে থাকে।
আপনি যদি সত্যিই দৃঢ় সংকল্প হয়ে কোনও ব্যবসা করতে চান, তাহলে একটি সঠিক ধারণাও আপনাকে সাফল্য পেতে পারে। আজ আমরা এমন একজন ব্যবসায়ীর কথা শোনাবো যিনি হাতির গোবরের একটি ছোট ব্যবসা শুরু করতে চেয়েছিলেন। বলাই বাহুল্য তার ব্যবসা সফল হয়েছিল এবং এখন তিনি কোটি টাকা আয় করছেন।
আমরা বিজেন্দ্র শেখাওয়াত এবং মহিমা মেহরা সম্পর্কে কথা বলছি। দুজনেই একবার রাজস্থানে অবস্থিত আমের-এর দুর্গ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। যদিও এটি নিছক ভ্রমণই ছিল, কিন্তু ভাগ্যে তাদের জন্য অন্য কিছু পরিকল্পনা করেছিল। সেই দুর্গ পরিদর্শনের সময় তারা একটি দুর্দান্ত ব্যবসায়ের ধারণা পেয়েছিলেন। তারা দেখেছিলেন দুর্গের নিচের অংশে হাতির গোবর পড়ে আছে। এরপর দুজনেই জানতে পারেন যে কীভাবে হাতির গোবর থেকে বিভিন্ন রকম সামগ্রী তৈরি করা সম্ভব। অনলাইনে এই বিষয়ে তারা অনেক তথ্য জোগাড় করে। শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াতেও হাতির গোবর থেকে কাগজ তৈরি হয় বলে তারা জানতে পেরেছেন। সম্পূর্ণ পরিকল্পনা করে তারা প্রতিনিয়ত এই ব্যবসা শুরু করবেন বলে ঠিক করেন।
এরপর দুজনেই ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রায় ১৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে কাঁচামালের জন্য হাতির গোবর দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। ২০০৭ সালে, তারা সারা দেশে তার ‘হাতি ছাপ ব্র্যান্ড’ চালু করেন। এই ব্যবসায় তারা হাতির গোবর থেকে ফটো অ্যালবাম, ব্যাগ, নোটবুক, গিফট ট্যাগ, ফ্রেম ও স্টেশনারি পণ্য তৈরি করে সেই সমস্ত পণ্য ভারতে ১০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি শুরু করেন। এরপর তারা আরও রিসার্চ করে শিশুদের জন্য বিশেষ পণ্যও তৈরি করার কথা ভাবেন।
তাদের উভয়ের এই ধারণা ফলপ্রসূ হয় এবং ব্যবসাটি দুর্দান্ত ভাবে অগ্রসর হতে থাকা। এরপর তারা তাদের পণ্য বিদেশেও রপ্তানি করতে শুরু করেন। এখন তাদের হাতি ছাপ ব্র্যান্ডের কাগজ জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যেও রপ্তানি করা হয়। এই অনন্য কাগজটি তৈরি করতে, প্রথমে হাতির গোবর পরিষ্কার করার জন্য একটি বড় জলের ট্যাঙ্কের প্রয়োজন হয়। তারপর যখন এটি ভালভাবে পরিষ্কার করার পরে, এটি কাগজ তৈরির জন্য প্রস্তুত হয়। এই হাতির গোবর ধোয়ার সময় যে জল ব্যবহৃত থাকে তাও পরে গাছের জন্য সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
হাতির গোবর থেকে তৈরি পণ্যগুলির একটি বড় সুবিধা হল যে তা কোনওভাবেই পরিবেশের ক্ষতি করে না। এই কাজটি ইকো ফ্রেন্ডলি বিজনেস। মহিমা তার অন্যান্য গ্রামবাসীদের সাথে একটি ছোট দল গঠন করে এবং তারপর তারা সেই দলের সাথে হাতির গোবর থেকে কাগজ তৈরির কাজ করে। এই কাজে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল, কাগজ তৈরিতে অন্য কোনও প্রাণী বা প্রাণীর জায়গায় কেন শুধু হাতির গোবর ব্যবহার করা হয়, তাহলে উত্তর হল হাতির পরিপাকতন্ত্র বেশির ভাগই খারাপ, এই কারণে তার হজম প্রক্রিয়া ঠিকমতো হয় না। যার কারণে তার গোবরে আঁশের পরিমাণ অনেক বেশি। এ কারণে এই গোবর থেকে কাগজও জাতীয় সামগ্রীও তৈরি করা যায় প্রচুর পরিমাণে।