বাংলা হান্ট ডেস্কঃ নিয়তি একজন মানুষকে এমন কিছু করতে বাধ্য করে যা সে কখনো কল্পনাও করেনি। শীলা বুয়ার (Shila Bua) ক্ষেত্রেও তেমনই কিছু ঘটেছে। ৪০ বছর আগে নিয়তির খেলায় তার স্বামী মারা যান এবং তারপরে সে কাসগঞ্জে (Kasganj) তার মায়ের বাড়িতে চলে আসে। বিধবার পোশাক পরে ভাগ্য তার জীবন থেকে সবকিছু কেড়ে নিয়েছে, কিন্তু শীলা বুয়া কঠিন পরিস্থিতিতে শুধু নিজেকে সামলে নেননি, মাতৃগৃহে থেকে তার পুরো পরিবারের দায়িত্বও নিয়েছেন। এখন গত ২৪ বছর ধরে পশুপালন করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। এখন তার ৫টি মহিষ রয়েছে যা থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪০ লিটার দুধ পাওয়া যায়। চলুন জেনে নিই ওনার পুরো কাহিনী…
৬২ বছর বয়সী শীলা বুয়া এত বৃদ্ধ হয়েও সাইকেল চালিয়ে বাড়ি বাড়ি দুধ বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। খেদার বাসিন্দা রামপ্রসাদ জির বড় মেয়ে শীলার বিয়ে হয়েছিল ৪০ বছর আগে অবগড়ের রামপ্রকাশের সঙ্গে ১০৮০ সালে, কিন্তু ভাগ্যের সামনে কার জোরাজুরি চলে? তার বিয়ের এক বছরও পূর্ণ হয়নি যখন হঠাৎ তার স্বামী মারা যান। এরপর স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি আবার মাতৃগৃহে এসে বসবাস শুরু করেন। তিনি যখন আবার বিয়ে করার কথা ভাবলেন, তখন তাঁর ভাই কৈলাশ অসুস্থ হয়ে মারা যান। এরপর শীলা বুয়া বিয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে একাকী জীবন যাপনের সিদ্ধান্ত নেন।
স্বামীর মৃত্যুর পর শীলা বুয়া মাতৃগৃহে থেকে বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ শুরু করা শুরু করলেন। ধীরে ধীরে তার চার বোন ও ভাই বিনোদেরও বিয়ে হয়ে যায়। এরপর ১৯৯৬ সালে তার বাবাও শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এবং কিছুদিন পর মাও মারা যান। বাবা ও মায়ের মৃত্যুর পর শীলা বুয়া তাদের পুরো পরিবারের দায়িত্ব নেন। তিনি শিক্ষিত ছিলেন না তাই চাকরি করতে পারেননি।
তিনি প্রথমে একটি মহিষ কিনলেন, তারপর দুধ বিক্রি শুরু করলেন। তিনি সাইকেলে চরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দুধ বিক্রি করতে থাকেন। এভাবে ধীরে ধীরে তার দুধ বিক্রির ব্যবসা বাড়তে থাকে। এখন তার পাঁচটি মহিষ রয়েছে, তিনি প্রতিদিন ভোর চারটায় ঘুম থেকে উঠে দুধের ট্যাঙ্ক ভর্তি করে এবং সাইকেলে চরে বিক্রি করতে বের হন।
শীলা বুয়া বলেন, তার এখনও অনেক দায়িত্ব রয়েছে, তাই তিনি চাইলেও অসুস্থ হতে পারেন না। শীলা বুয়ার ভাই বিনোদের ৬টি মেয়ে রয়েছে যার মধ্যে বড় মেয়ে সোনমও একজন বিধবা এবং তার সঙ্গেই থাকে। সোনমেরও ৬ মেয়ে রয়েছে। এভাবেই তার মাতৃগৃহে মানুষের সংখ্যাই বেশি হয়ে যায়। আর তাঁদেরই দেখাশোনা করার জন্য শীলা বুয়া এই বয়সেও কঠোর পরিশ্রম করেন।
শীলা বুয়া তার জীবনের সব লড়াইয়ের সঙ্গে সংগ্রাম করে বিচক্ষণতা ও পরিশ্রমের সঙ্গে পরিবারের দায়িত্ব পালন করেছেন। কারো সামনে কোনদিনও হাত পাতেন নি তিনি, হাত পাতার বদলে নিজেই স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন।