বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ‘চিকেনস নেক’ করিডোর তথা গোটা উত্তরবঙ্গ (Siliguri) জুড়ে সড়ক সম্প্রসারণ ও বিকল্প সড়ক তৈরী এবং সেতু নির্মাণের ওপর জোর দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ এবং মহাসড়ক মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী। কিন্তু এই পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য যে পরিমাণ সবুজের আচ্ছাদন ধ্বংস হচ্ছে তা নিয়ে এবার রীতিমত উদ্বিগ্ন বিজেপিরই বিধায়ক শংকর ঘোষ। তাই এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন এবং মহাসড়ক মন্ত্রী নীতিন গড়করিকে একটি উদ্বেগপূর্ণ চিঠি লিখেছে পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ির বিধায়ক শংকর ঘোষ।
‘চিকেন্স নেক’ করিডর নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে চিঠি BJP বিধায়কের (Siliguri)
চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন জাতীয় সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে পাহাড়-ডুয়ার্সের জঙ্গল কতটা ধ্বংস হতে পারে তা যেন ভুলে না যাওয়া হয়। ২০১৭ সালে ডোকলাম সংঘাতের পর থেকেই দ্রুত এই সড়ক-সম্প্রসারণের কাজে জোর দিয়েছিল কেন্দ্রের মোদি সরকার। এই পরিকল্পনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল জাতীয় সড়কের মানোন্নয়ন সম্প্রসারণ এবং বিকল্প সড়ক নির্মাণ। এই প্রকল্পের আওত্তায় ইতিমধ্যেই ইসলামপুর থেকে শিলিগুড়ি (Siliguri) হয়ে কোচবিহার পর্যন্ত মূল রাস্তার বেশিরভাগ অংশের কাজ হয়ে গিয়েছে।
পরবর্তী ধাপে শিলিগুড়ির (Siliguri) ভিতর দিয়ে বালাসন সেতু থেকে সেবকের সেনা ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার সড়ককে চার থেকে ছয় লেনে সম্প্রসারিত করা হবে। তারপর বন ও বন্যপ্রাণ বাঁচিয়ে প্রায় ১৪ কিলোমিটার ‘এলিভেটেড’ সড়ক নির্মাণের কথা রয়েছে। আর তৃতীয় পর্যায়ে তিস্তার ওপর দিয়ে করোনেশন সেতুর একটি বিকল্প সেতু নির্মাণ করার কথা আছে। তার দৈর্ঘ্য হবে সাড়ে ছয় কিলোমিটার। এই তিনটি পরিকাঠামো ১০ নম্বর এবং ১৭ নম্বর জাতীয় সড়ককে পরস্পরের সঙ্গে জুড়ে দেবে। যার ফলে শিলিগুড়ি সাথে সরাসরি জুড়ে যাবে গ্যাংটক। এর ফলে ভারত-চীন সীমান্তে অবস্থিত নাথুলায় পৌঁছানো হবে অনেক সহজ।
বিজেপি বিধায়ক শংকর বলেছেন, উন্নয়’ন ও চিকেনসনেক পরিকাঠামোর বৃদ্ধিতে আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু পাহাড়ে এবং ডুয়ার্সে ইতিমধ্যেই অনেক জঙ্গল ধ্বংস হয়েছে। পরিকাঠামো উন্নয়নের তাগিদে এই অঞ্চলের প্রকৃতির ওপর আর যেন চাপ না পরে আমি সেই কথাই বলতে চেয়েছি’। গড়কড়িকে পাঠানো চিঠিতে উন্নয়নকে সাদরে স্বাগত জানিয়েও তিনি বলেছেন পরিবেশের উপর এইসব প্রকল্পের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষত তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য সবুজের আচ্ছাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা নিয়ে। পাহাড়ি অঞ্চল এবং ডুয়ার্সের জন্য সড়ক সম্প্রসারণ এবং উন্নয়ন প্রকল্প গুলি বাস্তবায়িত হয়েছে সেগুলি জন্য বিপুল সংখ্যক গাছ কাটতে হবে যা এই অঞ্চলের (Siliguri) পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে দিতে পারে বলেই আশঙ্কা করেছেন বিজেপি বিধায়ক।
শংকর বাবুর কথায় এই সরকারি প্রকল্পগুলির মধ্যে শিলিগুড়ি (Siliguri) থেকে সেবক যাওয়ার বিকল্প রাস্তা বাগরাকোট হয়ে কালিম্পঙের দিকে ওঠার রাস্তা, তিস্তার উপরে নতুন বিকল্প সেতু,এই প্রকল্পগুলিই পরিবেশের উপর বেশি প্রভাব ফেলতে পারে। জানা যাচ্ছে ২০২২ সালে এই চিকেনসনেক কাজের জন্য প্রায় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। পরে এই প্রকল্পে বরাদ্দের পরিমাণ আরও বাড়ানো হয়েছে। এই প্রকল্পের আওত্তায় তিস্তা নদীর ওপর বিকল্প সেতু নির্মাণ করা হলে ওই সেতুর সাথে যুক্ত করেই জঙ্গল এলাকার মধ্য দিয়ে ‘এলিভেটেড করিডর’ তৈরির সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পটি শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্ক এবং ‘মহানন্দা ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি’র মধ্যে দিয়ে যাবে। এরফলে সড়কটি উড়ালপুলের উপর বানানো হলে বৃক্ষ নিধনের আশঙ্কা রয়েছে।
আরও পড়ুন: রাজাভাতখাওয়ায় পর্যটকদের জন্য দারুন সুখবর! আলিপুরদুয়ার বনবিভাগকে কড়া নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর
অরণ্য পরিসংখ্যান সংস্থার দেওয়া তথ্য এ প্রসঙ্গে আরও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। যা থেকে জানা যাচ্ছে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে সবুজ কমার হার সবচেয়ে বেশি। ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মোট ৭১৯ হেক্টর সবুজ আচ্ছাদন নষ্ট হয়েছে। রাজ্যে সবচেয়ে দ্রুত জঙ্গল ধ্বংস হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলায়। তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ১২৮ হেক্টর সবুজ আচ্ছাদন হারিয়েছে এই জেলা। এই জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারের মধ্যেই রয়েছে ডুয়ার্স। তাই এই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে এই ডুয়ার্স নিয়ে উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছে। বিজেপি বিধায়ক বলেছেন লাটাগুড়ির দিকে ভয়ংকর ভাবে সবুজ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। এরপরে প্রকৃতির উপর আরও চাপ পড়লে পাহাড় (Siliguri) কিংবা ডুয়ার্সে যে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে তা ভয়ানক।
একইসাথে তিনি জানিয়েছেন ‘চিকেন্স নেক’ প্রকল্প অবশ্যই অত্যন্ত জরুরী। তাই এইসব প্রকল্প তিনি বন্ধ করতেও বলছেন না। কিন্তু পাশাপাশি এলাকায় সামাজিক বনসৃজনের ব্যবস্থা করতে বলেছেন তিনি। বিশেষ করে ফাঁকা জায়গায় নতুন জঙ্গল তৈরির কথা উল্লেখ করেছেন। এছাড়া কিভাবে, কোন এলাকা দিয়ে রাস্তা বানালে জঙ্গলের ক্ষতি কম হবে সেটা ভেবেই এই প্রকল্পের রূপরেখা তৈরি করা উচিত বলে জানিয়েছেন এই বিজেপি বিধায়ক।