বাংলাহান্ট ডেস্কঃ ভারতের ছ’টি সংস্থা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে জোরকদমে। ৭০ রকমের ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট নিয়ে গবেষণা চলছে, যার মধ্যে তিনটি মানুষের উপর পরীক্ষামূলক প্রয়োগের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে।করোনাভাইরাসকে জব্দ করার মতো ভ্যাকসিন বা সার্বিক স্তরে কার্যকরি ড্রাগ এখনও বাজারে আসেনি। এখনও অবধি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বায়োটেক ফার্ম মোডার্নাই (Biotech firm Modernai) তাদের এমআরএনএ ভ্যাকসিন ক্যানডিডেটের (MRNA Vaccine Candidate) ট্রায়াল করেছে মানুষের উপর। চিন দাবি করেছে তাদের দুটি ভ্যাকসিন ক্যানডিডেটের হিউম্যান ট্রায়াল হতে পারে খুব তাড়াতাড়ি। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) জানিয়েছে, ভারতের ছ’টি সংস্থা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে জোরকদমে। ৭০ রকমের ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট নিয়ে গবেষণা চলছে, যার মধ্যে তিনটি মানুষের উপর পরীক্ষামূলক প্রয়োগের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে।
We'd suggested repurposing of Valproic acid Co-A as inhibitor of #SARSCoV2 #RdRp using a modelled structure (EM+MD). Today cryoEM structure came (PDB id 7BTF) and I happy to say that Anupam had done a great job. The RMSD between both structures is 0.69 Å. https://t.co/Awk7mb2a07 pic.twitter.com/5ePHN5CogK
— नील सरोवर भवेश Neel Sarovar Bhavesh 🇮🇳 (@neelbs) April 8, 2020
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর অনুমোদনে দেশে জাইদাস ক্যাডিলাতে প্রথম অ্যান্টি-ভাইরাল ভ্যাকসিন ও ড্রাগ নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। তারপরেই রয়েছে দেশের অন্যতম বড় ভ্যাকসিন ও ড্রাগ নির্মাতা সংস্থা সেরাম ইনস্টিটিউট। জাইদাস সিপলা কাজ করছে দু’রকমের ভ্যাকসিন নিয়ে। সেরাম ইনস্টিটিউট, বায়োলজিক্যাল ই, ভারত বায়োটেক, ইন্ডিয়ান ইমিউনোলজিক্যালস এবং মিনভ্যাক্স তাদের মতো করে ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। ফরিদাবাদের ট্রান্সলেশনাল হেলথ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের একজিকিউটিভ ডিরেক্টর গঙ্গাদীপ ক্যাং বলেছেন, “আগামী বছরের মধ্যেই ভ্যাকসিন চলে আসবে আশা করা যায়। তবে তিনটি ভ্যাকসিন সাফল্যের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। মানুষের উপর ট্রায়াল করা হতে পারে।“ কেরলের রাজীব গান্ধী সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজির (RGCB)সায়েন্টিফিক অফিসার ই শ্রীকুমার বলেছেন, “ভ্যাকসিন তৈরির প্রক্রিয়া খুবই লম্বা। এই মারণ ভাইরাস সার্স-কভ-২ যেভাবে জিনের গঠন বদলে ফেলেছে, তার প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরির প্রক্রিয়া খুব একটা সহজ নয়। মানুষের শরীরের কোষে কীভাবে ঢুকতে হবে তার উপায় জেনে ফেলেছে এই ভাইরাস। এখন একে আটকাতে গেলে মানুষের দেহকোষের সেই বাহক প্রোটিনের সঙ্গে ভাইরাল প্রোটিনের জোট বাঁধার প্রক্রিয়াটাকে বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়াতে হবে।” তিনি জানান, এমন ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট তৈরি হয়েছে, যাতে মানুষের শরীরে এই ভাইরাসকে জব্দ করার মতো শক্তিশালী অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। ভবিষ্যতে এই জাতীয় কোনও সংক্রামক ভাইরাস ফের হানা দিলে যাতে শরীর তার বর্ম নিজেই তৈরি করে নিতে পারে।
করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে বহু আগেই কাজ শুরু করেছে ভারত বায়োটেক। ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন-ম্যাডিসন এবং ফ্লু-জেন ভ্যাকসিন কোম্পানির সঙ্গে হাত মিলিয়ে ন্যাজাল ভ্যাকসিন তৈরির কাজ চলছে ভারত বায়োটেকে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ক্লোরো-ফ্লু (CoroFlu) এই ভ্যাকসিন হবে ন্যাজাল ড্রপের মতো। শরীরে গিয়ে যে কোনও সংক্রামক রোগ-প্রতিরোধী শক্তিশালী অ্যান্ডিবডি তৈরি করবে। ফ্লু-ভ্যাকসিন ক্যানডিডেটকেই কাজে লাগানো হচ্ছে এই ভ্যাকসিন তৈরির উপাদান হিসেবে। ভারত বায়োটেকের গবেষকরা বলেছেন, যে কোনও ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট তৈরি করতেই অনেক সময় লাগে। হয় গোটা ভাইরাসকে শরীরে ঢুকিয়ে অ্যান্টিবডি তৈরির প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা হয়, অথবা ভাইরাসের কোনও অংশ (সারফেস প্রোটিন) মানুষের দেহকোষে ঢুকিয়ে মেমরি-বি সেল তৈরি করা হয়। এই মেমরি বি-সেল সেই ভাইরাসের প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি করে রাখে। অনেক সময় বিপুল পরিমাণে ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট তৈরি করতে হলে ভাইরাল প্রোটিনগুলোকে বিশুদ্ধ (Purify)করতে হয়, যেটা অনেক সময়সাপেক্ষ। বিটা-করোনাভাইরাসের পরিবার সার্স-কভ-২ ভাইরাল স্ট্রেনের সঙ্গে যেহেতু ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মিল আছে, তাই সেই ভ্যাকসিনের ক্যানডিডেটকেই প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যবহার করা হয়েছে।
ছয় সংস্থার তালিকায় না থাকলেও ভ্যাকসিন ও ড্রাগ নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন দিল্লির ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজির (ICGEB) গবেষকরা। মৃগীরোগের প্রতিষেধক ভ্যাল্পরোয়িক অ্যাসিড (valproic acid) নিয়ে গবেষণা চলছে আইসিজিইবি-তে। সেখানকার ট্রান্সক্রিপশনাল রেগুলেশন বিভাগের প্রধান ড. নীল সরোবর ভবেশ বলেছেন, “চেনা ওষুধেই সারছে কিনা করোনার সংক্রমণ সেটাই এখন চেষ্টা বিজ্ঞানীদের। অ্যান্টি-ভাইরাল যত রকমের ড্রাগ আছে সব নিয়েই পরীক্ষা চলছে। দেখা গেছে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঠেকানোর ক্ষমতা আছে মৃগীরোগের দাওয়াই ভ্যাল্পরোয়িক অ্যাসিডের। তবে গবেষণার চলছে।” পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি (এনআইভি) এবং আইসিএমআরের ল্যাবে এই ড্রাগ নিয়ে গবেষণা জন্য বিজ্ঞানীদের আবেদনও জানিয়েছেন তিনি। ড. ভবেশ বলেছেন, Depacon ও Stavzor এই দুই ব্র্যান্ডে বিক্রি হত মৃগীরোগের এই দাওয়াই। ভ্যাল্পরোয়িক অ্যাসিডকে নতুন ভাবে ফিরিয়ে আনলে করোনা-প্রতিরোধী ভাল ড্রাগ হতে পারে বলেই দাবি করেছেন তিনি।