বাংলা হান্ট ডেস্ক: করোনা আবহে একনাগাড়ে দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ ছিল স্কুল। এমতাবস্থায়, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে স্কুল সম্পর্কে তৈরি হয়েছে অনীহা। এমনকি, পড়াশোনার প্রতিও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছে আগ্রহ। এদিকে, এর আগেই আমরা বিভিন্ন পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের খাতাতে উদ্ভট সব উত্তর দেখতে পেয়েছি। আর সেক্ষেত্রেও স্কুলের সঙ্গে দূরত্ব বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিকেই উপস্থাপিত করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা।
এই আবহেই জলপাইগুড়িতে দেখা মিলল এক অদ্ভুত চিত্রের। তীব্র দাবদাহের মাঝেই সেখানে দুপুরে ভ্যাপসা গরমের মধ্যে ভ্যানরিকশা বোঝাই তরমুজ বিক্রি করছে বছর বারোর বালক। এমতাবস্থায়, তাঁকে স্কুল সম্পর্কিত প্রশ্ন করতেই ফের উঠে এল অবাক করা তথ্য। বাংলা আর ইতিহাস পড়তে ভালো লাগলেও স্কুলে আর যেতে ভালো লাগেনা তার। কিন্তু কেন?
এর উত্তরে সে জানিয়ে দেয় ‘‘আসলে অনেক দিন তো স্কুল বন্ধ থাকায় সেখানে যাইনি। তাই এখন আর যেতে ভাল লাগে না।’’ পাশাপাশি, ওই খুদে আরও জানায়, তার বাবাও তরমুজ বিক্রি করেন। আর এভাবেই কোনোমতে সংসার চলছে তাদের। এমনকি, ছেলেকে যে বাধ্য হয়েই ফল বিক্রি করতে রাস্তায় নামতে হয়েছে তা একপ্রকার মেনেও নিলেন ওই ছাত্রের মা।
তিনি জানিয়েছেন, “খুব ইচ্ছে ছিল ছেলেটাকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করব। কিন্তু, করোনা এসে আমাদের সব স্বপ্ন এক্কেবারে ভেঙে দিয়ে গিয়েছে। দু’বছর আগে লকডাউনের সময়ে কেরল থেকে কাজ ছেড়ে চলে আসেন আমার স্বামী। তারপর থেকেই আর কোনো কাজের সুযোগ আসেনি। এমনকি, ছোট ছেলেটাকেও এখন কাজ করতে হচ্ছে।”
এদিকে, শুধু যে এই ছাত্রের সঙ্গেই এমন ঘটেছে তা নয়, বরং জেলা জুড়ে এমন নজির আরও মিলেছে। মূলত, স্কুল খোলার পরেও কিছু পড়ুয়া স্কুলে না গিয়ে উপার্জনের পথ বেছে নিয়েছে। এমনকি, এই ছবি মিলছেও বহু সংখ্যায়। শহরেরই অন্য একটি হাই স্কুলের দশম শ্রেণির এক ছাত্র এখন স্কুলের গন্ডী ত্যাগ করে টোটো চালাচ্ছে। পাশাপাশি, সে জানিয়েছে, ‘‘স্কুলে যেতে এখন আর ইচ্ছে করে না। টোটো চালানোর পরে রাতে বাড়িতে বই নিয়ে পড়তে বসলেও মন দিতে পারিনা পড়ায়।”
এদিকে, স্কুলের সঙ্গে পড়ুয়াদের এই ক্রমবর্ধমান দূরত্বের বিষয়টি মেনে নিয়েছেন বিশেষজ্ঞরাও। এমতাবস্থায়, মনোবিদদের মতে, পড়ুয়াদের একাংশ অনেক সময় মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। সেক্ষেত্রে কাউন্সেলিংয়ের উপর জোর দিতে পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। পাশাপাশি, বিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের আসার প্রসঙ্গে জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক ধর্মচাঁদ বাড়ুই জানিয়েছেন, ‘‘পড়াশোনার প্রতি পড়ুয়াদের আগ্রহ বাড়াতেই হবে। এ ক্ষেত্রে দুঃস্থ পড়ুয়াদের সব ধরনের সহযোগিতা করতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।’’