বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে আজও মহিলাদের ফুটবল খেলা বিষয়টা গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করে উঠতে পারেনি। কোনও মেয়ে ফুটবল নিয়ে মাঠের মধ্যে দৌড়ে বেড়াচ্ছে দেখলে আজও বাংলার অনেক জায়গায় অনেক মানুষের চোখ কপালে উঠে যায়। ঠিক এমনটাই হয়েছিল কালনার হত-দরিদ্র কৃষক পরিবারের মেয়ে সোনালী সোরেনের সঙ্গে। আজ বাংলাদেশের মাটিতে ভুটানের বিরুদ্ধে ভারতীয় অনূর্ধ্ব ২০ মহিলা দল যখন সাফ কাপের ম্যাচ খেলতে মাঠে নামবে তখন সোনালীও সেই দলের অংশ থাকবেন।
কিন্তু পূর্ব বর্ধমানের কালনার ধাত্রীগ্রাম পঞ্চায়েতের বাধাগাছি গ্রামের কৃষক পরিবারের মেয়ে সোনালীর যাত্রাটা এতটা সহজও ছিল না। অত্যন্ত চাপা স্বভাবের মেয়ে সোনালী নিজে থেকে কারও সঙ্গে যেচে কথাটুকু বলতে পারেনা। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই তার প্রবল আগ্রহ ফুটবলে। আদিবাসী পরিবারে জন্ম নেওয়া মেয়েটি স্বভাবে লাজুক হলেও নিজের লক্ষ্যের প্রতি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
যখন ফুটবল খেলা শুরু করেছিলেন তার সম্প্রদায়ের অনেকেই তার সামনে পেছনে নানান কথা বলতো তাকে নিয়ে। কিন্তু সোনালী জানতেন যে তিনি যে স্বপ্ন দেখছেন তা পূরণ করতে গেলে লোকের আজেবাজে কথায় কান দিলে চলবে না। তার বাবা একজন দিনমজুর এবং মা একজন শিক্ষক। বাবা হরি সোরেনের ফুটবলের ব্যাপারে কোন স্পষ্ট ধারনা না থাকলেও তার মা শেফালী দেবী তাকে নিয়মিত উৎসাহ জুগিয়ে গিয়েছেন।
নিজের জেদ ও মায়ের সমর্থনকে পুঁজি করে কালনার আটঘরিয়া, কেশবপুর ও কালনার স্টেডিয়াম ময়দানে দিনের পর দিন প্রশিক্ষণও চালিয়ে গিয়েছেন সোনালী। তাঁর বাঁ পায়ে খেলার দক্ষতা দেখতে আগ্রহী হয়ে উঠতেন অনেকেই। কোচ রঘুনাথ মুর্মু ও মুকুল দেবনাথের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হয়ে ফুটবলে ধীরে ধীরে দক্ষতা বাড়তে থাকে সোনালীর। নিজের কঠোর পরিশ্রমের ফল তিনি পান ২০১৯ সালে যখন ভারতের অনূর্ধ্ব ১৭ মহিলা দলের জন্য আয়োজিত অনুশীলন ক্যাম্পে তিনি ডাক পান।
এই সময় টানা তিন বছর রাজ্যের সেরা মহিলা ফুটবলার হয়েছিলেন তিনি। ইস্টবেঙ্গলের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগও পেয়েছিলেন সোনালী। মাঝে কলকাতা নেপাল ফুটবল টুর্নামেন্টের সেরা পারফর্মার হয়ে তার কাছে সুযোগ এসেছিল ইতালির নেপলসে ফুটবল প্রশিক্ষণের অফার দিয়েছিলেন কনস্যুলেট জেনারেল। গত বছর অনূর্ধ্ব ১৭ জাতীয় মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রূপ পর্বে ৯ গোল করে নজর কেড়েছিলেন। দলের প্রয়োজনের লেফট উইং এবং মিডফিল্ড ২ পজিশনেই খেলতে পারেন সোনালী।
বর্তমানে ৩-৯ ফেব্রুয়ারি জুড়ে আয়োজিত হতে চলা অনূর্ধ্ব ২০ মহিলা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে বাংলাদেশের মাটিতে রয়েছেন তিনি। নিজের সাফল্যের মধ্যে দিয়ে নিজের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মেয়েদের ফুটবলের প্রতি উৎসাহী করে তুলতে চান সোনালী। সেই সঙ্গে নিজেও ক্রমশ উন্নতি করে যেতে চান। তার বাবা-মা ও আজ গর্বিত। দেশকে জিতিয়ে তাদের নাম উজ্জ্বল করুক তাদের ঘরের মেয়ে, এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।