বাংলাহান্ট ডেস্ক : গতকাল সোমবারই তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার দলের বর্তমান অবস্থা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলেছিলেন। আজ মঙ্গলবার তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় (Sougata Roy)। জহরকে ‘স্বার্থপর’ তকমা দিয়ে সৌগত বলেন, ‘জহর সরকার যে স্বার্থপর এবং স্বার্থকেন্দ্রিক সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন। এই ধরনের আমলারা এরকমই হন। এঁরা উপকার নেন। তার পরে ক্ষতি করার আগে এক বারও ভাবেন না।’
পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পর তিনি অস্বস্তি নিয়েই তৃণমূলে রয়েছেন বলে দাবি করেন জহর। সোমবার সংবাদমাধ্যমের সামনে তিনি বলেন দলের একটা দিক পচে গিয়েছে। এমন দল নিয়ে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করা সম্ভব নয়। বাড়ির লোকেরা ও বন্ধুবান্ধবেরা তাঁকে রাজনীতি ছাড়তে বলছেন। তিনি বলেন, ‘এক সাইড পচা শরীর নিয়ে ২০২৪ সালে লড়াই করা মুশকিল।’
এরপর ইডি হেফাজতে থাকা প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে বলেন, ‘পার্থবাবুকে তো শিক্ষামন্ত্রী হিসাবে দেখেছি। কথাও বলেছি অনেক বার। টিভিতে দেখে আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ও রকম ভদ্রলোকের ইমেজ! তিনি কার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছেন, তা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু দুর্নীতির টাকা দিয়ে তাঁকে অলঙ্কৃত করা। এটা দেখলে কী রকম গা শিরশির করে ওঠে।’
জওহর বাবু আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের মোহর লাগিয়ে যত ইচ্ছা টাকা বানাবো, বান্ধবীর নামে ফ্ল্যাট বানাবো, গাড়ির পরে গাড়ি কিনব, এগুলো মানতে পারছি না।’ দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাড়ির লোকেরা সঙ্গে সঙ্গে বলল, তুমি ছেড়ে দাও। বন্ধুরা বলছে, তুই এখনও আছিস? কত পেয়েছিস? এই ধরনের লাঞ্ছনা তো জীবনে কখনওই শুনতে হয়নি।’
এরপরই মঙ্গলবার জহরকে আক্রমণ করেলেন সৌগত। তিনি বলেন, ‘জহর সরকার কোনও দিন তৃণমূলের মিছিলে হাঁটেননি। ওঁকে সব চেয়ে লোভনীয় পদ রাজ্যসভার সাংসদ করেছিল দল। তিনি কিনা দলের ভিতরে না বলে প্রকাশ্যে দলবিরোধী কথা বলে দিলেন! এটা খুবই লজ্জার কথা। ওঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’ সৌগত আরও বলেন, ‘আমার মনে হয় যে, এই ধরনের স্বার্থপর, স্বার্থকেন্দ্রিক লোকেদের সাংসদ করা উচিত নয়। দল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, উনি গিয়েছিলেন সেটা ঠিকই আছে। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই উনি ওঁর রূপ দেখালেন।’
সোমবার জহর দাবি করেন, তিনি রাজনীতির মানুষ না হলেও ভাল বক্তা হিসাবে তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠায় তৃণমূল। সেই বিষয়ে সৌগত দাবি করেন, জহর আদৌ ভাল বক্তা নন। সৌগত বলেন, ‘ভরসা করার কোনও কারণ নেই। উনি তো খুব ভাল বক্তাও নন।’ জহরের মুখ খোলা নিয়ে সৌগত বলেন, ‘দল একটা খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সেই সময়ে বাড়ির লোকের কথা শুনে প্রকাশ্যে যা বলেছেন সেটা খুবই অনৈতিক কাজ।’
এর পরেই সৌগত সাংসদপদ ছেড়ে দিতে বলেন জহরকে। সৌগত বলেন, ‘ওঁর যদি ভালই না লাগে তবে সাংসদ পদটা ছেড়ে দিন। তাতেও পেনশন পাবেন। তবে এখন যে দু’লাখ টাকা বেতন এবং যাতায়াতের খরচ পান সে সব ত্যাগ করুন।’