বাংলা হান্ট ডেস্ক: চিনের কাছ থেকে নেওয়া ঋণ যে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। ইতিমধ্যেই শ্রীলঙ্কায় তীব্র আর্থিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছনোর পাশাপাশি খাদ্য সামগ্রীর দাম বেড়েছে এবং সরকারি কোষাগার দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে।
অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে, আশঙ্কা করা হচ্ছে শ্রীলঙ্কা চলতি বছরেই দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে। এখন প্রশ্ন হল শ্রীলঙ্কার এই অবস্থা হল কিভাবে! প্রাথমিক ভাবে এর পেছনে অনেকগুলি কারণ খুঁজে পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রথমত, বিশ্বজুড়ে চলা করোনা মহামারীর জেরে ইতিমধ্যেই শ্রীলঙ্কার পর্যটন শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি, একই সাথে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি এবং করের হ্রাস পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। সর্বোপরি, চিনের ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে শ্রীলঙ্কার পিঠ ভেঙে গিয়েছে। এমনকি, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। দেশীয় ঋণ ও বিদেশি বন্ড পরিশোধের জন্য সরকারকে নতুন করে টাকা ছাপতেও হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাঙ্কের হিসেব অনুযায়ী, মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে সেদেশে প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ চরম দারিদ্র্যতার মধ্যে পড়েছেন। নভেম্বরে মুদ্রাস্ফীতি রেকর্ড হারে সর্বোচ্চ ১১.১ শতাংশে পৌঁছেছে। এই কারণে, যে পরিবারগুলি আগে স্বচ্ছল বলে বিবেচিত হত, সেগুলির পক্ষেও পরিবারের সদস্যদের মুখে খাওয়ার তুলে দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পাশাপাশি, দেশের অধিকাংশ পরিবারের জন্য তাদের মৌলিক চাহিদা মেটানোও কঠিন হয়ে পড়েছে। দেশে অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা ঘোষণার পাশাপাশি সেনাবাহিনীকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করার দায়িত্ব দেওয়া হলেও তাতেও জনগণের সমস্যার সমাধান হয়নি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কার মোট জিডিপির প্রায় ১০ শতাংশ নির্ভর করে পর্যটন শিল্পের উপর। কিন্তু, মহামারীর কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই শিল্প। ভ্রমণ ও পর্যটন খাতে প্রায় ২ লক্ষেরও বেশি মানুষ তাঁদের চাকরি হারিয়েছেন। দেশের বিপুল সংখ্যক তরুণ ও শিক্ষিত মানুষ দেশ ছাড়তে চান। বর্তমান ছবিটি প্রবীণ প্রজন্মের কাছে সত্তরের দশকের স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে যেখানে আমদানি নিয়ন্ত্রণ এবং দেশজ উৎপাদন কম হওয়ার ফলে তীব্র মুদ্রাস্ফীতির আবহ তৈরি হয়েছিল।
এদিকে, শ্রীলঙ্কার এই অবস্থার জন্য চিন থেকে নেওয়া ঋণও বিশেষভাবে দায়ী। চিনের কাছ থেকে শ্রীলঙ্কার প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঋণ রয়েছে। গত বছর, দেশটি আর্থিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে চিন থেকে আরও ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে। আগামী ১২ মাসে দেশি-বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে প্রায় ৭.৩ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। পাশাপাশি ৫০০ মিলিয়ন ডলারের আন্তর্জাতিক সার্বভৌম বন্ডও জানুয়ারিতে পরিশোধ করতে হবে দেশটিকে। নভেম্বর পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ১.৬ বিলিয়ন ডলার।