“পবিত্র” হাতির মৃত্যুতে শোকে কাতর শ্রীলঙ্কা! উপহার দিয়েছিলেন ভারতের এক রাজা

বাংলা হান্ট ডেস্ক: প্রাণীদের সাথে মানবজীবনের একটা চিরকালীন সম্পর্ক সবসময় বজায় রয়েছে। প্রাচীন কাল থেকেই এই রেশ ক্রমশ স্পষ্ট। তাছাড়া, গত কয়েক শতাব্দী যাবৎ সক্রিয়ভাবে পশুপালনও করে এসেছে মানুষ। যার ফলে কখনও কখনও প্রাণীদের সাথে এমন সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায় যে, তারা একে অপরের বন্ধুও হয়ে ওঠে।

পাশাপাশি, এমন ঘটনা বন্যপ্রাণীদের সাথেও লক্ষ্য করা যায়। ঠিক যেমন ঘটেছে পড়শি দেশ শ্রীলঙ্কায়। প্রিয় হাতির মৃত্যুতে সেখানে কার্যত নেমে এসেছে শোকের ছায়া। আবেগের টান যে সমস্ত বাধা ছিন্ন করে ফেলতে পারে তা ফের একবার প্রমাণিত হয়েছে এই ঘটনায়। দেশের পবিত্রতম হাতির মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয়ভাবে শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়েছে শ্রীলঙ্কায়।

“দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট”-এ প্রকাশিত খবর অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, এই পবিত্র হাতিটির নাম ছিল “নাদুংমুওয়া রাজা”। ৬৮ বছর বয়সে কলম্বোর কাছে মারা যায় হাতিটি। এটি এশিয়ার বৃহত্তম গৃহপালিত হাতি হিসাবে বিবেচিত ছিল। পাশাপাশি এর উচ্চতায় ছিল প্রায় ১০.৫ ফুট। এই হাতিটি বৌদ্ধ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত এবং তার জীবদ্দশায় সবচেয়ে বিখ্যাত হাতিগুলির মধ্যেও অন্যতম একটি ছিল।

১৯৫৩ সালে রাজা ভারতে জন্মগ্রহণ করে। মহীশূরের তৎকালীন রাজা শ্রীলঙ্কার একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীকে এটি উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। প্রতি বছর ক্যান্ডি শহরে অনুষ্ঠিত গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান “এসলা পেরাহেরা পেজেন্ট”-এ হাতিটি ভগবান বুদ্ধের পবিত্র দাঁতের স্মৃতিচিহ্নটি তার পিঠে বহন করত। পাশাপাশি, এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানটি পর্যটকদের কাছেও বেশ জনপ্রিয়।

রাজা অগ্নি ভক্ষক এবং বাদ্যকারদের মধ্যে চলাফেরা করত বলে জানা গিয়েছে। এমনকি তার নিজের নিরাপত্তাও ছিল। এসলা পেরাহেরা প্রতিযোগিতাটি প্রতি বছর জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত হয় এবং সেখানে হাতিটি দীর্ঘ ১১ বছর যাবৎ এতে অংশ নিয়েছে। এই প্রসঙ্গে শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি গোটাবায়া রাজাপাকসে (President Gotabaya Rajapaksa) টুইট করে জানিয়েছেন যে, “হাতির রাজা, যে বহু বছর ধরে দেশ এবং বিদেশের মানুষদের দ্বারা শ্রদ্ধেয়। মহান ব্যক্তিদের অনুপ্রেরণায় ভবিষ্যতের মহান আত্মাকে কামনা করি। নির্বাণ অর্জিত হোক।”

পাশাপাশি, রাজাপাকসের কার্যালয় জানিয়েছে যে, রাষ্ট্রপতি এই পবিত্র হাতির মরদেহ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং এটিকে একটি জাতীয় সম্পদ হিসেবেও ঘোষণা করেছেন। বৌদ্ধ মতে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে হাতিটির দেহাবশেষ ভরাটের জন্য বিশেষজ্ঞদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

WhatsApp Image 2022 03 09 at 8.23.26 PM 1

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, স্থানীয় ঐতিহ্য অনুসারে, শুধুমাত্র নির্দিষ্ট শারীরিক বৈশিষ্ট্য সহ হাতিদের ভূমিকার জন্য বেছে নেওয়া যেতে পারে। এর জন্য হাতির পিঠে চ্যাপ্টা এবং বিশেষভাবে বাঁকা দাঁত থাকা প্রয়োজন এবং যখন তারা দাঁড়িয়ে থাকে, তখন হাতির সাতটি বিন্দু, তাদের ৪ টি পা, শুঁড়, পুরুষাঙ্গ এবং লেজ মাটিতে স্পর্শ করাও প্রয়োজন।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর