বাংলাহান্ট ডেস্ক: সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা বেশ সক্রিয় থাকেন, তারা জানেন এই মুহূর্তে সেখানে চলছে বাংলা মিডিয়াম (Bengali Medium) বনাম ইংরেজি মিডিয়াম (English Medium)। এমন বিবাদ অবশ্য নতুন নয়। তবে এবারে শহরের এক নামজাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে উঠেছে আঙুল। ইংরেজি মাধ্যম ছাড়া অন্য কোনও মাধ্যমের পড়ুয়ারা বিএ/বিএসসিতে ভর্তির আবেদন করতে পারবে না, লোরেটো কলেজের এহেন বিজ্ঞপ্তি নিয়ে ছড়িয়েছিল বিতর্ক। এর মাঝেই জড়িয়ে যায় সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের (Srijit Mukherjee) নাম।
ইংরেজি ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যমের পড়ুয়া লোরেটো কলেজে বিএ বা বিএসসিতে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন না, এমনটাই বলা হয়েছিল কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে। সেই বিজ্ঞপ্তির ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয় শোরগোল। ফের ইংরেজি মিডিয়াম বনাম বাংলা মিডিয়াম তরজা শুরু হয়।
কলকাতার একটি কলেজে বাংলা মিডিয়ামের ছাত্রছাত্রীদের অবমাননার অভিযোগে ফুঁসে ওঠেন নেটিজেনদের একাংশ। এমনকি কিছু ইংরেজি মিডিয়াম ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে নিজের মাতৃভাষাকে অপমানের অভিযোগ আনেন কয়েকজন। পালটা তোপ দাগেন ইংরেজি মাধ্যমের পড়ুয়ারাও। এর মধ্যে সৃজিত মুখোপাধ্যায় কীভাবে জড়িয়ে পড়লেন?
আসলে কিছুদিন আগেই শহরে অনুষ্ঠিত এক অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে নেমেছিল তারকাদের ঢল। উপস্থিত ছিলেন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ও। মঞ্চে পুরস্কার নিতে উঠে গড়গড়িয়ে ইংরেজি বলতে শোনা যায় তাঁকে। ইংরেজিতেই নিজের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। হঠাৎই পরিচালককে মাঝপথে থামিয়ে সঞ্চালনার দায়িত্বে থাকা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় পত্নি অর্পিতা চট্টোপাধ্যায় তাঁকে বাংলায় বলার জন্য অনুরোধ করেন।
কিন্তু তবুও ইংরেজি বলা থামাননি সৃজিত। ওই অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের ভিডিও নিয়েই শুরু হয়েছে কটাক্ষ। অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়ের অনুরোধকে উপেক্ষা করেই যেভাবে সৃজিত ইংরেজিতেই নিজের বক্তব্য রাখলেন তা দেখে অনেকে প্রশ্ন করছেন, যেখানে নামী ব্যক্তিত্বরাই শহরের বুকে অনুষ্ঠিত বাংলা অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে ইংরেজিতে কথা বলছেন সেখানে লোরেটো কলেজের দোষ কোথায়?
বিতর্কের মুখে পড়ে অবশেষে মুখ খুলেছেন সৃজিত। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘একটি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে, যেখানে সন্চালনা ইংরেজি এবং বাংলা দুই ভাষাতেই হচ্ছিল, সেখানে আমার ইংরেজিতে কথা বলা নিয়ে কিছু মানুষ আপত্তি জানিয়েছেন দেখলাম।
তাঁদের জ্ঞাতার্থে বলি যে, যে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অবাঙালি, যেখানে তিনি মুখের সামনে বসে আছেন আর যেখানে কোনও অনুবাদক বা অনুবাদ যন্ত্র নেই, সেখানে আমি ইংরেজিতে কথা বলা ভদ্রতা বলে মনে করি। যাঁরা এই ব্যপারে দ্বিমত পোষণ করেন, করতেই পারেন, এই ব্যাপারে আমি অপারগ। আমার মাতৃভাষার প্রতি প্রেম এবং সাধারণ সহবত, এর মধ্যে স্ট্যাটিস্টিক্সের ভাষায় ‘Spurious correlation’ আছে বলে আমার বদ্ধমূল বিশ্বাস’।
উল্লেখ্য, ফেসবুকে তুমুল বিতর্ক আর সংবাদ মাধ্যমে লেখালেখির জেরে নিজেদের অবস্থান থেকে পিছু হটে লোরেটো কলেজ কর্তৃপক্ষ। নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। সেখানে সব মাধ্যমের পড়ুয়াদেরই সমানাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।