মন্ত্রীর মেয়ের থেকে নম্বর বেশি পেয়েও পাঁচ বছর ধরে বেকার ববিতা, তবে এখনও ছাড়েননি হাল

বাংলাহান্ট ডেস্ক : ছিল প্রথম কুড়ির মধ্যে নাম, এক রাতের মধ্যে ওলটপালট হয়ে যায় সবকিছু। রাতারাতি পাল্টে গেল ববিতার জীবন। আর সেই সঙ্গেই ক্ষমতার কাছে হেরে যায় সততা। প্রথম কুড়ির মধ্যে নাম দেখে সাময়িকভাবে প্রশান্তি নিয়ে বাড়ি ফিরলেও গত পাঁচ বছরে এক মুহূর্তও শান্তিতে তিষ্ঠোতে পারেননি ববিতা সরকার। যে স্কুলের চাকরি পেতে দিনরাত এক করে ফেলেছেন, হাজারো কাজ সামলে চালিয়ে গিয়েছেন পড়াশোনা, মন্ত্রবলে এক নিমেষে সব ওলটপালট হয়ে যাবে, তা মেনে নিতে পারেননি ববিতা। তাই সামনের জন কতটা প্রভাব-প্রতিপত্তিশালী, তা না ভেবেই নিজের অধিকার আদায়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তাঁর সেই একরোখা মনোভাবেই আজ এসএসসি দুর্নীতি মামলায় কাঠগড়ায় স্বয়ং রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারী। প্রভাব খাটিয়ে নিজের কম নম্বর পাওয়া মেয়েকে তিনি চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ। তার জেরে বিচারপতি তাঁকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানোর সুপারিশ করেছে।

জানা গিয়েছে, পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারী রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষিকা হিসাবে কোচবিহারে চাকরি করছেন। কিন্তু মেধাতালিকায় নাম না থেকেও তিনি পার্সোনালিটি টেস্টে না গিয়েই চাকরি পেয়ে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। এনিয়ে ব্যাপক শোরগোল পড়ে গিয়েছে গোটা বাংলায়। রাজ্যের শিক্ষা দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী পরেশচন্দ্র অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতাকে বেআইনি ভাবে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ করার অভিযোগ উঠেছে।

ববিতার কথায়, ২০১৬ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা হয়েছিল। ২০১৭ সালের ২ মে সেই পরীক্ষার ফল বেরোয়। অভিযোগ, SSC-র প্রথম তালিকায় অঙ্কিতা অধিকারীর নামই ছিল না। ২০ নম্বরে নাম ছিল ববিতার। এর পর যখন নতুন করে মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয় এসএসসি-র তরফে, তাতে নিজের নাম ২১ নম্বরে দেখতে পান ববিতা। প্রথমে অতশত মাথাতেই আসেনি তাঁর। বরং একধাপ নেমে গেলেন কী ভাবে, সেই প্রশ্নই তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল। তাতেই মাথা ঠান্ডা করে ফের তালিকায় চোখ বোলাতে শুরু করেন। তাতেই চোখে পড়ে এক নম্বরে জ্বলজ্বল করছে অঙ্কিতা অধিকারীর, আগে যাঁর নাম প্রথম ২০-র মধ্যেই ছিল না। সেই থেকে শুরু হয় দৌড়ঝাঁপ।

এরপরেই ববিতা কর্মপ্রার্থী হিসেবে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। এর পর একে একে এসএসসি কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া থেকে তথ্য জানার অধিকার আইনে RTI ফাইল করা, কিছুই বাদ দেননি তিনি। আশানুরূপ সাড়া এখনও পর্যন্ত না পেলেও ববিতা অবশ্য হাল ছাড়েননি। সংসারে দুই সন্তান সামলে আইন-আদালতের পাশাপাশি, আন্দোলনেও নিয়মিত অংশ নিয়ে চলেছেন বিগত পাঁচ বছর ধরে।

আজ তার সেই লড়াই সফলের পথে। SSC মামলায় মুখ থুবড়ে পড়েছেন মন্ত্রী পরেশ অধিকারী। তাঁকে সিবিআই তলবও করেছে। আর গতকাল রাতে ট্রেনে করে কলকাতায় আসার সময়ই তিনি মাঝপথেই কোথাও উধাও হয়ে যান। এই নিয়ে বর্তমানে রাজ্য রাজনীতিতে তুমুল জল ঘোলা চলছে।

Soumita

আমি সৌমিতা। বিগত ৩ বছর ধরে কর্মরত ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমে। রাজনীতি থেকে শুরু করে ভ্রমণ, ভাইরাল তথ্য থেকে শুরু করে বিনোদন, পাঠকের কাছে নির্ভুল খবর পৌঁছে দেওয়াই আমার একমাত্র লক্ষ্য।

সম্পর্কিত খবর