বাংলা হান্ট ডেস্কঃ এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় (SSC Recruitment Scam) সম্প্রতি এক নজিরবিহীন রায় দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ। তবে ব্যতিক্রম সোমা দাস। মানবিক কারণে বীরভূমের এই ক্যান্সার আক্রান্ত শিক্ষিকার চাকরি বহাল রেখেছে আদালত (Calcutta High Court)। এদিকে সোমার চাকরি বহাল থাকলেও চাকরি হারিয়েছেন বাঁকুড়ার (Bankura) ছাতনা ব্লকের ঘোড়ামুলী গ্রাম নিবাসী বিধান বাউড়ি। ক্যান্সার আক্রান্ত হলেও আদালতের রায়ে চাকরি হারিয়েছেন তিনি।
এসএসসি নিয়ে কলকাতায় গান্ধী মূর্তির পাদদেশের হওয়া আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠেছিলেন ক্যান্সার (Cancer) আক্রান্ত সোমা। হকের চাকরি পাওয়ার জন্য প্রচুর লড়াই করেছেন তিনি। অন্যদিকে বিধানের জীবনটাও সোমার মতোই প্রতিকূলতায় ভর্তি। ছেলেবেলা থেকে অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা চালিয়েছেন। মেধার জোরে ২০১৪ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় পাশ করলেও প্রশিক্ষণ না থাকায় চাকরি পাননি বিধান। এরপর এসএসসির পরীক্ষায় পাশ করার পর কপাল খুলে যায় তাঁর।
২০১৮ সালে চাকরি পান বাঁকুড়া নিবাসী এই যুবক। ছেলে সরকারি চাকরি পাওয়ার পর স্বাচ্ছন্দ্য ফেরে বাউড়ি পরিবারে। যদিও সেই সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। একদিন স্কুলে কাজ করতে করতে আচমকা হাতে কাঁপুনি অনুভব করেন বিধান। চিকিৎসা শুরু হলে জানা যায় ব্রেন টিউমার হয়েছে। এরপর সেই টিউমারের অস্ত্রোপচার করা হলে শরীরে বাসা বাঁধে ক্যান্সারের জীবাণু। সেই চিকিৎসা করাতে গিয়ে দিল্লি গিয়ে আবার ভুয়ো ডাক্তারের খপ্পড়ে পড়েন বুঝকা হাই স্কুলের এই অশিক্ষক কর্মী। প্রায় ৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা খোয়ান তিনি।
আরও পড়ুনঃ বাম আমলে নিয়োগ দুর্নীতি! হাই কোর্টের এক রায়ে চাকরিহারা ২২০০ শিক্ষক! তোপ দাগল তৃণমূল
এরপর চিকিৎসার খাতিরে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, ব্যাঙ্ক সহ একাধিক জায়গা থেকে ঋণ নেন বিধান। এসবের মাঝেই হাই কোর্টের এক রায়ে ওলটপালট হয়ে গেল তাঁর সম্পূর্ণ জীবন। বিধান জানান, টানা ৫ বছর চেষ্টা করার পর চাকরি পেয়েছিলেন তিনি। কোনও শর্টকাট নেননি তিনি।
বিধানের মা সনকা বাউড়ি বলেন, ‘আমার তিন মেয়ে এক ছেলে। লোকের বাড়ি পরিচারিকার কাজ করে ছেলেকে পড়াশোনা শিখিয়েছি। ৬ বছর চাকরি করেছে। পরিবারের একমাত্র চাকুরে ও। এখন ও কাজ হারানোয় দু’চোখে অন্ধকার দেখছি’। ছেলের চিকিৎসা কীভাবে চালাবেন সেই নিয়ে এখন চিন্তায় পড়েছেন সনকাদেবী। অন্যদিকে বিধানের প্রশ্ন, ‘মানবিকতার কারণে আদালত যদি সোমার চাকরি বহাল রাখে তাহলে আমারটা নয় কেন?’