বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে বাতিল হয়েছে ২৫,৭৫২ জনের চাকরি (SSC Recruitment Scam)। চলতি মাসেই ২০১৬ সালের এসএসসির সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করেছে শীর্ষ আদালত (Supreme Court)। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না (CJI Sanjiv Khanna) ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ এই রায় দিয়েছে। এরপর থেকেই বিপাকে পড়েছেন রাজ্যের হাজার হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী। এই পরিস্থিতিতে সামনে আসছে বড় খবর। এবার অনিশ্চয়তায় ভুগছেন কয়েকশো শিক্ষক।
৪২৩ জন শিক্ষক অনিশ্চয়তায় ভুগছেন কেন (SSC Recruitment Scam)?
দুর্নীতির জেরে গত বছরই ২০১৬ সালের এসএসসির সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। পরবর্তীতে জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট অবধি। তবে চাকরি বাঁচানো যায়নি। উচ্চ আদালতের মতোই সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিলের নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। তবে একটি ‘স্বস্তি’র নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ ছিল, চাকরিহারারা চাইলে নিজেদের পুরনো কর্মস্থলে ফিরে যেতে পারবেন (SSC Recruitment Scam)। এবার এই নিয়েই চিন্তায় পড়েছেন কয়েকশো শিক্ষক। পুরনো কাজের জায়গায় ফেরা নিয়েই দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
আরও পড়ুনঃ ঘরছাড়াদের ফিরিয়ে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক! মুর্শিদাবাদ কাণ্ডে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা
এমনই একজন শিক্ষিকা হলেন কেষ্টপুর নিবাসী সুনেত্রা সেনগুপ্ত। ২৬ বছর বয়সে প্রথম এসএসসি (School Service Commission) দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে পুরুলিয়ার প্রান্তিক স্কুলে চাকরি পান সুনেত্রা। এরপর ২০১৬ সালে ফের এসএসসি পরীক্ষায় বসেন। সেই বার দক্ষিণ ২৪ পরগণার ভাঙরের একটি বিদ্যালয়ে চাকরি পান তিনি। কিন্তু এবার সুপ্রিম-রায়ে সেই চাকরি বাতিল হয়েছে। এরপরেই চিন্তা গ্রাস করেছে শিক্ষিকাকে। তাহলে কি ফের পুরুলিয়া ফিরতে হবে? দেখা দিয়েছে এই প্রশ্ন।
এই বিষয়ে সুনেত্রা বলেন, ‘৬ বছরের মেয়ের দায়িত্ব আমার ওপরেই। বাড়িতে বৃদ্ধ মা-বাবা, শ্বশুর-শাশুড়ি রয়েছেন। দূরত্ব কমাব বলেই ২০১৬ সালের এসএসসি দিয়েছিলাম। এখন কী করব?’ একই ধন্দে ভুগছেন পশ্চিম বর্ধমানের একটি বিদ্যালয়ের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক (School Teacher) সুনীল ঘোষও (৫৪)।
২০০৯ সালে এসএসসি-তে (SSC) বসে প্রথম চাকরি পেয়েছিলেন সুনীল। এরপর বাড়ির কাছে পোস্টিং পাওয়ার জন্য আরও চারবার পরীক্ষা দেন। অবশেষে ২০১৬ সালে বাড়ির কাছে একটি বিদ্যালয়ে পোস্টিং পান তিনি। তবে শীর্ষ আদালতের রায়ে সেই চাকরি বাতিল হয়েছে। সুনীল বলেন, ‘পুরনো বিদ্যালয়ে ফিরে যেতে হলে সেই যাতায়াত করার মতো শক্তি এখন নেই। ঠিক করেছি, ১৬ অথবা ১৭ এপ্রিল সব কাগজপত্র তৈরি করে স্কুল শিক্ষা দফতরে জমা দিয়ে আসব’।
জানা যাচ্ছে, শুধুমাত্র সুনেত্রা বা সুনীল নন, এমন শতাধিক শিক্ষক রয়েছেন। এমন ৪২৩ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী আদালতে গিয়েছিলেন। সব দিক খতিয়ে দেখার পর তাঁদের পুরনো কাজের জায়গায় ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। যদিও এই বিষয়ে স্কুল শিক্ষা দফতর মুখে কুলুপ এঁটেছে।
আরও পড়ুনঃ মুর্শিদাবাদে বাবা-ছেলেকে কুপিয়ে খুন! ২ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ! গোয়েন্দাদের জালে কারা?
অন্যদিকে জানা যাচ্ছে, বিটিএ থেকে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ, প্রধান শিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠন থেকে পুরনো কাজের জায়গায় ফিরে যেতে পারেন এমন শিক্ষক-শিক্ষিকারা একাধিকবার মেল, চিঠি পাঠিয়েও কোনও জবাব পাননি। এই প্রক্রিয়া কবে শুরু হবে? এই বিষয়ে দপ্তরের কর্তারা কিছু জানাতে পারেননি। বিকাশ ভবন সূত্র উদ্ধৃত করে একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, যতদিন অবধি কোনও ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে না, ততদিন এই প্রক্রিয়া চালু করা মুশকিল।
উল্লেখ্য, নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ড নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সরগরম বাংলা। দুর্নীতির জেরেই ২০১৬ সালের এসএসসির (SSC Recruitment Scam) পুরো প্যানেল বাতিল করেছে সুপ্রিম কোর্ট। একধাক্কায় চাকরিহারা হয়েছেন ২৫,৭৫২ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী।