বাংলা হান্ট ডেস্কঃ এসএসসির ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলা (SSC Recruitment Scam) আপাতত ঝুলেই রইল সুপ্রিম কোর্টে। সোমবার দুপুরে মামলাটি ওঠে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চে। ২ ঘণ্টা ধরে সেই শুনানি চললেও মিলল না উত্তর। ১০ ফেব্রুয়ারি ফের মামলার শুনানি হবে সর্বোচ্চ আদালতে। সবমিলিয়ে অন্ধকারেই ২৬ হাজার চাকরিপ্রাপকের ভবিষ্যৎ।
এদিন ‘যোগ্য’ চাকরিহারাদের হয়ে আদালতে জোড়ালো সওয়াল করেন তাদের আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। বিকাশ বলেন, ‘পরীক্ষায় না বসেই মিলেছে চাকরি’,। ‘নিয়োগ দুর্নীতির স্পনসর’ বলে রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় তোলেন বিকাশবাবু। পাল্টা প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, আপনি বলতে চাইছেন পরীক্ষা না দিয়েই চাকরি পেয়েছে?
চিফ জাস্টিসের প্রশ্নে বিকাশরঞ্জন বলেন, ‘এখানে মন্ত্রীর মেয়ে এভাবেই চাকরি পেয়েছিলেন, কোর্ট টাকা ফেরাতে বলেছিল।’ শুধু তাই নয়, উদাহরণ তুলে আইনজীবী বলেন, ‘একজন পরীক্ষার্থী রুদ্রপ্রসাদ ভট্টাচার্যের ওএমআর শিটে দেখা যাচ্ছে ২৩ পেয়েছিলেন। কিন্তু এসএসসি-র সার্ভার দেখাচ্ছে তার নম্বর দেখাচ্ছে ৫৩।’
এছাড়া প্যানেলের সময়সীমা শেষ হওয়ার পরেও ২ জন পরীক্ষার্থীকে চাকরির জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল বলে আদালতে জোর সওয়াল করেন বিকাশরঞ্জন। গোটা ঘটনাকে ‘প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। জোর সওয়াল করে বলেন, এই দুর্নীতি এমনভাবে করা হয়েছিল যাতে কেউ অবৈধ নিয়োগ অর্থাৎ অযোগ্যদের খুঁজে বার করতে না পারে। হাইকোর্টেও যোগ্য-অযোগ্য পৃথক করা সম্ভব হয়নি।
এখানেই শেষ নয়। আইনজীবী আরও বলেন, ‘মন্ত্রীর থেকে সোনা ও গয়না ছাড়াও ৫০ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছিল’। নিজের যুক্তির সমর্থনে জাস্টিস বাগ কমিটির দেওয়া তথ্যও তুলে বেআইনি নিয়োগের সংখ্যার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ধরেন বিকাশরঞ্জন। ‘এটাই কি নির্দিষ্ট সংখ্যা ?’ প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করলে বিকাশ বলেন, এটি এখনও পর্যন্ত পাওয়া সংখ্যা। নির্দিষ্ট সংখ্যা বোর্ডও বলতে পারেনি।
আদালতে বিকাশ বলেন, ‘বোর্ড জানিয়েছে ৪ ধরনের পদের জন্য পদের সংখ্যার থেকেও বেশি নিয়োগ হয়েছে। এই বাড়তি চাকরি কারা পেয়েছে কীভাবে চিহ্নিত করা হবে।’প্রশ্ন তোলেন তিনি। ‘সন্দেহ থাকলে পুরো প্যানেল বাতিল করে নতুন ভাবে নিয়োগ করা উচিত।’ বলেও জোড়ালো সওয়াল করেন বিকাশ।
এই সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘নতুনভাবে নিয়োগ মানে অনেক জটিলতা রয়েছে। ‘ পুরো প্যানেল বাতিল করে যারা ২০১৬-য় এসএসসি পরীক্ষায় বসেছিলেন শুধুমাত্র তাদেরই শুধুমাত্র নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া হোক বলে সওয়াল করেন বিকাশ।
আরও পড়ুন: সঞ্জয়ের লড়াইয়ে শিবসেনার ‘এন্ট্রি’? ঘুরে যাবে আরজি কর মামলার মোড়? তোলপাড় বাংলা
উল্লেখ্য, গত বছর ১৮ এপ্রিল নিয়োগ দুর্নীতির জেরে এসএসসি ২০১৬ সালের গোটা প্যানেল বাতিল করে দেয় কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। আদালতের এই রায় নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে যায় গোটা রাজ্যে। উচ্চ আদালতের রায়ে এক ধাক্কায় চাকরি যায় প্রায় ২৬০০০ জনের।
হাইকোর্টের রায়ের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই তা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য সরকার, এসএসসি, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। সুপ্রিম কোর্টে সেই মামলা উঠলে আপাতত সকলেরই চাকরি বহাল রাখা হয়েছে। সকলকে রক্ষাকবচ দিয়েছে আদালত। তবে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, দুর্নীতি প্রমাণ হলে শিক্ষকদের (ssc recruitment scam) চাকরি তো যাবেই পাশাপাশি ফেরত দিতে হবে বেতনও। সেই মামলাই এখনও ঝুলছে শীর্ষ আদালতে। ঝুলছে ২৬০০০ মানুষের ভাগ্যও।