বাংলা হান্ট ডেস্ক: সফলতার কাহিনি (Sucess Story) মানেই সেখানে থাকবে অদম্য লড়াইর এক জ্বলন্ত উদাহরণ। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে, এই সফলতার কাহিনির শুরুটা সকলের চাইতেই ছিল আলাদা। দীর্ঘদিন ধরেই নিজের জীবনে কোনো লক্ষ্য ছিলনা রাজকোটের এই যুবকের। এদিকে, ক্রমশ ব্যর্থতার জন্য তিনি দূষতে থাকেন তাঁর বাবাকেও!একনাগাড়ে তিনি নষ্ট করে চলেছিলেন বছরের পর বছর। উদ্দেশ্যহীন ওই জীবনযাপনের পরেও তিনি বর্তমানে পৌঁছে গিয়েছেন সফলতার শিখরে। শুধু তাই নয়, এখন তিনি এমন একটি কোম্পানির নেতৃত্ব দিচ্ছেন যেখানে হাজার হাজার কর্মী কাজ করেন এবং তাঁদের বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ৬০০ কোটি টাকা (Indian Rupee)।
আজকের এই কাহিনির নায়ক হলেন পরাক্রমসিংহ জাদেজা। তাঁর জীবনের প্রথমভাগটা কেটেছে এক্কেবারে ছন্নছাড়া অবস্থায়। তিনি রাজকোটের এমন একটি পরিবেশে বড় হয়েছেন যেখানে লোকেরা সারাদিন জুয়া খেলে এবং মদ খেয়ে সময় কাটাত। তিনি প্রথম থেকেই সাধারণ মানের ছাত্র ছিলেন।তবে, পরাক্রম দাবা খেলতে খুব পছন্দ করতেন। এমনকি, দাবার প্রতি তাঁর এতটাই আসক্তি ছিল যে, তিনি এই খেলার জন্য দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা পর্যন্ত দেন নি। স্বভাবতই তিনি শিক্ষাগত দিক থেকেও বেশি দূর এগোতে পারেন নি। এমতাবস্থায়, দাবা খেলার জন্য তিনি তাঁর বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা চান।
সেই অনুযায়ী, কিছু দিন পর তাঁর বাবা তাঁকে প্রাথমিকভাবে ১০,০০০ টাকা, তারপর কয়েক সপ্তাহ পর ৫,০০০ এবং দশদিন পর আরও ৫,০০০ টাকা দেন। কিন্তু, এভাবে টাকা দেওয়ায় পরাক্রম তাঁর বাবার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে জানান যে, “আমার তিনদিন নষ্ট হয়ে গেল? তুমি আমাকে একবারে সব টাকা দিলে না কেন?”
এদিকে, পরাক্রমের দরিদ্র বাবা তাঁকে বুঝিয়েছিলেন যে, তিনি তাঁর প্রভিডেন্ট ফান্ড, ক্রেডিট সোসাইটি এবং বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করে টাকা পেয়েছেন। আর সেই টাকাই তুলে দিয়েছেন ছেলের হাতে। ঠিক এই কথা শুনেই চমকে যান পরাক্রম। পাশাপাশি, কথাগুলি তাঁর মনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। এরপরই তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, দাবার প্রতি তিনি তাঁর আবেগ ত্যাগ করবেন এবং পরিবারকে সাহায্য করার জন্য কিছু কাজ করবেন।
এরপরই পরাক্রমের এক বন্ধু তাঁকে জানান যে, সরকারের এমন একটি স্কিম রয়েছে যাতে কোনও সুদ ছাড়াই ৩৫,০০০ টাকা পাওয়া যায়। সেই অনুযায়ী, পরাক্রম একটি মেটাল কাটিং লেদ মেশিন কিনে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে নেন। তাঁর এক কাকু তাঁর ব্যবসায় অনেক সাহায্য করেছিলেন। কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে এক বছরের মধ্যে সব ঋণ পরিশোধ করে দেন পরাক্রম।
তিনি মেশিনিস্ট-অ্যাপ্রোন তৈরির জন্য সমস্ত রকম চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিলেন। নতুন ব্যবসায়ী হওয়ার জন্য এতে কিছুটা সময়ও লাগে তাঁর। এরই মধ্যে তাঁর কাকুর পাঁচটি অ্যাপ্রোনের দরকার ছিল। পরাক্রম ২০ দিনের মধ্যে সেগুলি দিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তারপরেই তিনি শহর জুড়ে অ্যাপ্রোন সরবরাহের জন্য বিখ্যাত হয়ে ওঠেন।
১৯৯১ সালে তাঁর ব্যবসায়িক পারফরম্যান্স দেখে স্থানীয় একটি ব্যাঙ্ক তাঁকে এক শতাংশ সুদে পাঁচ লক্ষ টাকা ঋণের প্রস্তাব দেয়। পরাক্রম সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি এই টাকা দিয়ে অটোক্যাড কম্পিউটার কিনবেন যা মেশিন ডিজাইন করতে সাহায্য করবে। তখন ওই কম্পিউটারের মূল্য ছিল ১৬ লক্ষ টাকা।
তাঁর সিদ্ধান্ত সঠিক বলে প্রমাণিত হয় এবং কম্পিউটারের ফলে তাঁদের পণ্য আগের তুলনায় আরও সঠিক এবং নিখুঁত হয়ে ওঠে। ১৯৯৩ সালে আরেকটি বড় পদক্ষেপ নেন পরাক্রম। তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, লেদ মেশিন তৈরি করে তা কির্লোস্কর এবং এইচএমটি-র মতো বড় কোম্পানিগুলিতে সরবরাহ করা হবে। তখন তাঁর দলে মাত্র ১৬ জন কর্মচারী ছিল এবং এরপরে তাঁদের বার্ষিক টার্নওভার ২৫ লক্ষ টাকা হয়ে যায়।
এভাবেই সবার প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাব এবং কারোর সাথে আপস না করে সর্বদা সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করার মাধ্যমে আজ তাঁদের বার্ষিক টার্নওভার ৬০০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে এবং প্রায় ১২০০ জন কর্মী বর্তমানে নিয়োগ করা হয়েছে৷ এভাবেই ৩৫ হাজার টাকা লোন নিয়ে শুরু করা এক যুবকের ব্যবসায়িক পথচলা, আজ দেশের নামকরা কোম্পানির তালিকায় স্থান পেয়েছে।