বাংলা হান্ট ডেস্ক: ভালো কাজের জন্য সঠিক লক্ষ্য এবং ঝুঁকি নেওয়া খুবই প্রয়োজন। কারণ কখনও কখনও জেদের মাধ্যমে নেওয়া পদক্ষেপও এগিয়ে যেতে সাহায্য করে মানুষকে। ঠিক এইরকমই ঘটনা ঘটেছে উমং শ্রীধরের জীবনেও। যিনি তাঁর স্বপ্ন পূরণের জন্য শুধু ঝুঁকিই নেননি, পাশাপাশি বর্তমানে চরম সফলতাও পেয়েছেন। এই প্রতিবেদনে সেই উত্তরণের কাহিনিটিই বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরা হল।
মধ্যপ্রদেশের ভোপালে বসবাসকারী উমং শ্রীধর গত বছর বিখ্যাত ব্যবসায়িক ম্যাগাজিন ফোর্বসের অনূর্ধ্ব-৩০ বছরের সেরাদের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, ভারতের শীর্ষ-৫০ সামাজিক উদ্যোক্তাদের তালিকায়ও রয়েছে উমং-এর নাম। তবে, গভীর নিষ্ঠা এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই উমং আজ এসে পৌঁছেছেন এই স্থানে।
উমং শ্রীধর মাত্র ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে KhaDigi নামে একটি কোম্পানি শুরু করেছিলেন। যা শীঘ্রই দেশে একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড হয়ে ওঠে। KhaDigi-র প্রধান কার্যালয় ভোপালে অবস্থিত, যার বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা। পাশাপাশি, এই কোম্পানিটির মাধ্যমে কয়েকশ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং তাঁরা এর মাধ্যমেই জীবিকা নির্বাহ করছেন।
তবে, উমং কোম্পানি শুরু করার আগে কোম্পানির নাম সম্পর্কে এবং এতে তৈরি পোশাক সম্পর্কে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা করেছিলেন। তারপরেই তিনি কোম্পানির নামটি KhaDigi রাখার সিদ্ধান্ত নেন। KhaDigi আসলে দু’টি শব্দ নিয়ে গঠিত। যার মধ্যে রয়েছে খাদি এবং জি।
উমং শ্রীধরের KhaDigi কোম্পানিটি ডিজিটাল আকারে মানুষের কাছে চরকা উপস্থাপন করে, যার মাধ্যমে তাঁতের কাপড় এবং খাদির কাপড় বিক্রি করা হয়। এই কোম্পানির মাধ্যমে শুধু মধ্যপ্রদেশই নয়, পাশাপাশি, মহারাষ্ট্র ও পশ্চিমবঙ্গ থেকেও তাঁতিরা কর্মসংস্থান পান।
পাশাপাশি, KhaDigi বিভিন্ন শিল্পে খাদি সরবরাহের কাজ করে। যার মধ্যে ডিজাইনার, খুচরো বিক্রেতা এবং পাইকারি শিল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। উমং শ্রীধর মূলত মধ্যপ্রদেশের দামোহ জেলার বাসিন্দা। তবে পড়াশোনা এবং কাজের কারণে তিনি ভোপালে স্থায়ী হন। তাঁর মা ছিলেন জেলার সভাপতি। উমং তাঁর মাকে দেখেই বড় কাজ করার স্বপ্ন দেখতেন।
এই স্বপ্ন পূরণের জন্যই উমং ৩০ হাজার টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করার ঝুঁকি নিয়েছিলেন, কিন্তু এই ঝুঁকিই লিখতে থাকে সাফল্যের নতুন গল্প। তবে, বর্তমানে KhaDigi-র নাম ভারতের শীর্ষ ব্র্যান্ডগুলিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও, উমং এটিকে আরও বড় করতে চান। যার জন্য তিনি দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করছেন।
উমং তুলো, বাঁশ এবং সয়াবিন থেকে প্রাপ্ত বর্জ্য উপাদান ব্যবহার করে পরিবেশ-বান্ধব কাপড় তৈরি করতে চান, যা দারুণ লাভের মাধ্যমে লন্ডন এবং ইউরোপের দেশগুলিতে বিক্রি করা যেতে পারে। পাশাপাশি, উমং-এর KhaDigi কোম্পানি লকডাউন চলাকালীন ২ লক্ষেরও বেশি মাস্ক তৈরি করেছে এবং সেগুলি দুস্থ মানুষদের মধ্যে বিতরণও করা হয়েছে।
এই কাজের কারণে, লকডাউনের মধ্যে ৫০ জন মহিলাকে কর্মসংস্থান দেওয়া হয়েছিল। যার দ্বারা তাঁরা তাঁদের সংসার চালাতেও সমর্থ হয়েছিলেন। তবে, উমং-এর মতো, ভারতের প্রতিটি বাড়ির একজন নাগরিক যদি একটি ছোট স্টার্টআপ শুরু করেন, তাহলে এর ফলে শত শত লোকের কর্মসংস্থান হতে পারে। শুধু তাই নয়, দেশের দারিদ্র্যতার মত সমস্যারও সমাধান হবে, তবে এর জন্য ঝুঁকি নেওয়া খুবই জরুরি।