বাংলাহান্ট ডেস্কঃ বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন নিজের ছোট্ট মেয়ের স্মৃতিকে। বাবা কারশানভাই চেয়েছিলেন তাঁর ছোট্ট মেয়েটির অনেক নাম ডাক হোক। কিন্তু একটি দুর্ঘটনা সমস্ব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দেয়। তবে হেরে না গিয়ে, মেয়ের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে একটা ডিটারজেন্ট পাউডারের কোম্পানি খুলে ফেললেন বাবা। মেয়ে ‘নিরুপমা’র নাম থেকেই কোম্পানির নাম রাখলেন ‘নিরমা’ (nirma)।
‘নিরমা… ওয়াশিং পাউডার নিরমা…’ একটা সময় এই গানটা আইকন হিসাবে পরিণত হয়েছিল। সকলের মুখে মুখে ঘুরে বেড়াত এই গান। আর ডিটারজেন্ট পাউডারের প্যাকেটে দেখা যেত একটি ছোট্ট মেয়ে সাদা রঙের ফ্রক পরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তবে সব সাফল্যের পেছনেই যেমন একটি কঠোর পরিশ্রম থাকে, তেমনই এই ‘নিরমা’ ডিটারজেন্ট পাউডার কোম্পানি গড়ে ওঠার পেছনেও একটা দুঃখের কাহিনী রয়েছে।
১৯৬৯ সালে গুজরাতের ব্যবসায়ী কারশানভাই প্যাটেল এই নিরমা ডিটারজেন্ট পাউডারের ব্যবসা শুরু করেন। তাঁর আদরের ছোট মেয়ে নিরুপমা সকলের প্রিয় ছিলেন। কিন্তু একটি দুর্ঘটনা মেয়েকে কেড়ে নিলেও, মেয়েকে সারাজীবন নিজের কাছেই রাখতে চাইলেন বাবা কারশানভাই। তাই মেয়ের নাম থেকেই ডিটারজেন্ট পাউডারের নাম রাখলেন ‘নিরমা’।
প্রথম দিকে তিনি আমদাবাদে ভূতত্ত্ব এবং খনি দফতরের অধীনে চাকরী করতেন এবং সেই কাজের ফাঁকে সকাল বিকেল সাইকেলে করে বাড়ি বাড়ি এই ডিটারজেন্ট পাউডার বিক্রি করতেন। কিন্তু সেইসময়ে এই ডিটারজেন্ট পাউডারের জনপ্রিয়তা না থাকার কারণে কেউই সেভাবে কিনতে চাইতেন না। তখন ব্যবসায়িক বুদ্ধি প্রয়োগ করে ১ কেজি সার্ফের দাম রাখলেন মাত্র ৩ টাকা। এরপর থেকেই বেশ ভালোভাবেই চলতে শুরু তাঁর ব্যবসা।
কিন্তু অফিসে সময় দিয়ে ব্যবসা সামলানো তাঁর পক্ষে অসুবিধার হয়ে যায়। তাই সাহস করে চাকরী ছেড়ে দিয়ে কয়েকজন লোক নিয়ে ডিটারজেন্ট পাউডারের ব্যবসা আরও বাড়ানোর চিন্তাভাবনা শুরু করলেন। কিন্তু সমস্যা হল, দোকানদাররা ধারে ডিটারজেন্ট পাউডার কিনলেও, ঠিক সময়ে দাম দিতেন না। যার ফলে তাঁর পুঁজিতেও ঘাটতি পড়তে থাকে।
এরপর তিনি এক বিজ্ঞাপনী সংস্থাকে ডিটারজেন্ট পাউডারের প্যাকেটের উপর ‘নিরমা গার্ল’-র একটি ছবি আঁকার বরাত দেন। মেয়ের নামে যেহেতু কোম্পানি চালু করেছেন, সেই কারণে ডিটারজেন্ট পাউডারের প্যাকেটের উপর একটি মেয়ের ছবিই রাখতে চাইছিলেন তিনি। বাঙালি ইলাস্ট্রেটরের নাম ধীরেন্দ্রনাথ শূরের তুলির ছোঁয়ায় প্যাকেটের গায়ে ফুটে ওঠে ‘নিরমা’র ছবি।
আমদাবাদের দোকানদাররা ঠিক সময়ে সার্ফের দাম না দেওয়ায়, দোকান থেকে সমস্ত সার্ফ তুলে নেন কারশানভাই। এরপর তিনি বুদ্ধি খাটিয়ে টিভিতে বিজ্ঞাপন দেন এবং সেইসঙ্গে ব্যাকগ্রাউন্ডে গান বাজতে থাকে ‘ওয়াশিং পাউডার নিরমা… ওয়াশিং পাউডার নিরমা! দুধ সি সফেদি নিরমা সে আয়ি…সবকি পসন্দ নিরমা’। আর এই গান যেমন জনপ্রিয় হয় সকলের মুখে মুখে, তেমনই এই সার্ফের চাহিদাও বাড়তে থাকে দোকানে দোকানে। এইভাবে একদিকে যেমন কোম্পানিও বেড়ে উঠল, তেমনই এই কোম্পানির মধ্যে দিয়ে তাঁর মেয়ের স্মৃতিও বেঁচে থাকল।