ভারতের আজব গ্রাম, যেখানে কোটিপতিরাও থাকেন কাঁচা বাড়িতে! রয়েছে বহু প্রাচীন ধার্মিক বিশ্বাস

বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান যুগে ভারতের প্রায় প্রতিটি প্রান্তেই পৌঁছে গিয়েছে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি, জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রায় সব গ্রামেই পাওয়া যায় এখন। তবে, এই প্রতিবেদনে যে গ্রামটি নিয়ে আলোচনা করা হবে সেটা সম্পর্কে জানলে চমকে যাবেন আপনিও!

সমস্ত সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি বাসিন্দারা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হয়েও রাজস্থানের আজমীর জেলার দেবমালি গ্রামটিতে নেই কোনো পাকা বাড়ি! কোটিপতি হয়েও বাসিন্দারা এখনও মনের আনন্দে বসবাস করে আসছেন মাটির বাড়িতেই।

   

পাশাপাশি, এই গ্রামের বাড়িগুলিতে নেই কোনো তালাও। এমনকি, গত পাঁচ দশকে কোনো বাড়িতেই চুরির ঘটনা ঘটেনি এবং থানাতেও কোনো অভিযোগ আসেনি। গ্রামের পুরো জমিটিই ভগবান দেবনারায়ণের নামে খোদাই করা আছে। গোটা গ্রাম এখনও পর্যন্ত নিরামিষাশী। এই গ্রামে পাকা ছাদের একটি ঘরও তৈরি হয়নি। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, পাকা ছাদ তৈরি করলে গ্রামে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। যেকারণে, গ্রামের কোটিপতিরাও বসবাস করেন কাঁচা বাড়িতে।

পাশাপাশি, গ্রামে বসবাসের জন্য কিছু নিয়মও আছে। সমস্ত গ্রামবাসী ভোরবেলা গ্রামের পাহাড়ে খালি পায়ে ঘুরে বেড়ান। ওই পাহাড়ে দেবনারায়ণের একটি মন্দির রয়েছে। গ্রামবাসীদের গভীর বিশ্বাস রয়েছে ভগবান দেবনারায়ণের প্রতি।

মনে করা হয় যে, দেবনারায়ণ যখন এই গ্রামে একবার এসেছিলেন, তখন তিনি গ্রামবাসীদের সেবামূলক মনোভাব দেখে খুবই খুশি হন। যেই কারণে তিনি গ্রামবাসীদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে বরও দিতে চেয়েছিলেন। তবে, গ্রামবাসীরা কিছুই চায়নি। কথিত আছে, দেবনারায়ণই বলে গিয়েছিলেন যে, যদি শান্তিতে থাকতে চাও, তাহলে পাকা ছাদ দিয়ে বাড়ি তৈরি কোরোনা। আর সেই কথাই অনুসরণ করে আসছে গ্রামবাসীরা। এখনও দেবমালী গ্রামে পাকা ছাদের একটি ঘরও তৈরি হয়নি।

এই প্রসঙ্গে প্রায় ২৫ বছর ধরে গ্রামের সরপঞ্চ পদে থাকা ভাগী দেবী গুর্জর বলেন যে, “পুরো গ্রামে আমাদের পৌরাণিক বিশ্বাস এবং দেবনারায়ণের প্রতি বিশ্বাসের কারণে আমরা মাটি-পাথর থেকে কাঁচা ঘর তৈরি করি এবং সেখানে বসবাস করি। এই গ্রামের স্বচ্ছল মানুষরাও মাটির তৈরি কাঁচা ঘরে বসবাস করে। ওই বাড়িতেই সব সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়, তবে বাড়িগুলো অবশ্যই কাঁচা। ঘরে টিভি, ফ্রিজ, কুলার ও দামি বিলাসবহুল যানবাহন থাকা সত্বেও রয়েছে কাঁচা বাড়ি।”

IMG 20220101 210709

এমনকি জানা গিয়েছে যে, গ্রামবাসীরা পাকা ছাদ বসানোর চেষ্টা করলেও ক্ষতি হয়েছে। গ্রামবাসীদের মতে, অনেকে পাকা ছাদ বসানোর চেষ্টা করলে বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। কেউ এখানে মদ, মাংস এবং ডিম স্পর্শ করেনা। পাশাপাশি, গ্রামে বিদ্যুৎ চলে গেলে কেরোসিনের ব্যবহারও করা হয়না। তিলের তেল দিয়ে জ্বালানো হয় প্রদীপ। এই গ্রামে জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ২০০০।

গ্রামের প্রবীণরা জানান, এই গ্রামে কখনো চুরির ঘটনা ঘটেনি। একবার পাহাড়ের ওপর নির্মিত মন্দিরে চোরেরা ঢুকে প্রণামীর বাক্সে রাখা টাকা চুরি করলেও আর এগোতে পারেনি। পরে গ্রামবাসীদের হাতে ধরা পড়ে যায় চোরেরা।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর