সৌতিক চক্রবর্তী,বোলপুর,বীরভূমঃ জাতিসংঘ শিশু তহবিলের তথ্য অনুসারে প্রায় ৭০℅ মেয়েদেরকে ১৮ বছর বয়সের আগেই বসতে হয় বিয়ের পিড়ীতে। সামগ্রিকভাবে বাল্যবিবাহ একটি সমাজিক সমস্যা। অপ্রাপ্তবয়স্ক বালক বা বালিকারা এই অপরাধের
ভিকটিম। কিন্তু তারা এই বিষয়ে কোন প্রকার প্রতিবাদ করতে পারে না। কিংবা সাহস হয় না নালিশ করার। কারণ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকেন কনে বা বরপক্ষের অভিভাবক গন। উভয়পক্ষের সম্মতিতে এই ঘটনা ঘটে বলে তারা কোন প্রতিবাদ করতে পারে না। বাল্যবিবাহ সমাজের একটি উদ্বেগের কারণোও। তাই প্রতি বছরের মতো এই বছরেও বোলপুর থানার
অন্তর্গত ছোটো শিমুলিয়া গ্রামে আবীর পড়াশোনা কেন্দ্রের উদ্যোগে সাধারণ মানুষদের সচেতন করতে আয়োজিত হলো এক বিশেষ কর্মসূচি। এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্যগুলি ছিল,’বাল্যবিবাহ রোধ’, ‘পণপ্রথা রোধ’, ‘ঘরে,ঘরে শৌচাগার নির্মাণ’ ইত্যাদি ব্যানারে লিখে ও বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে সাধারণ মানুষদের সচেতন করতে এগিয়ে আসেন ওই পড়াশোনা কেন্দ্রের ছাত্র,ছাত্রী ও শিক্ষকেরা। এছাড়াও ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেয়া চক্রবর্তী নামে এক পড়ুয়া কনে সাজে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় এই সচেতনতা প্রদান করে।
ছবিঃ প্রধান শিক্ষক স্লোগান দিতে ব্যস্ত।
আবীর পড়াশোনা কেন্দ্রের প্রধান শিক্ষক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য জানান,“এই সামাজিক পদযাত্রার মাধ্যমে আমরা নাবালিকার মা,বাবার কাছে পৌঁছে দেব একাধিক বার্তা। আমি বলবো তাদের মেয়ে তাদের কাছে রত্ন। তাদের কাছে বোঝ নয়। কেন তাদের ১৮ বছর বয়সের আগেই বিবাহ দেব? কেন তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবো? আমি বারবার প্রতিবছর এই
অনুষ্ঠানটা করি। এ বছরেও আমার সবথেকে বড় পদক্ষেপ এই পদযাত্রাটি। এই সমস্ত সচেতন মূলক কথা বার্তা নিয়ে আমি পৌঁছে যাব নাবালিকাদের বাড়িতে, বাড়িতে। এছাড়াও আজ এই কর্মসূচিতে আমি আরোও একটি কথা বলবো যে,পণ নেব না,পণ দেবনা। যত অত্যাচার মেয়েদেরকে সহ্য করতে হয় এই পণ প্রথার জন্য। কেন আমরা পণপ্রথার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবোনা? তাই প্রত্যেকের কাছে আমি হাত জোড় করে বলব সবাই এগিয়ে আসুন ও বাল্যবিবাহ এবং পণপ্রথা রোধ নিয়ে এক বিরাট ঝড় তুলুন। যাতে আমাদের বোনেরা বাঁচতে পারে।” তিনি আরও জানান,“গতবছর আমি ২৬-শে আগষ্ট এইরকম একটি পদযাত্রা করেছিলাম। আমি ১৭ টি গ্রামে ঘুরে ছিলাম। তারমধ্যে নতুন গ্রামের মানুষেরা বেশি সচেতন হয়েছে।”
ওই পড়াশোনা কেন্দ্রের ক্লাস ফাইভের পড়ুয়া শ্রেয়া চক্রবর্তী বলে,“আজ আমরা একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও আমাদের ভাবতে হচ্ছে কী করে বাল্যবিবাহ রোধ করা যায়?আমরা এখনো পর্যন্ত লড়াই করছি পণ প্রথার বিরুদ্ধে। কিন্তু কেনো? আমরা মেয়ে বলে কী আমাদের বাঁচার অধিকার নেই? এই সমস্ত বার্তা নিয়েই আজ আমরা এই পদযাত্রার আয়োজন করেছি।”
আজ এই পদযাত্রাটিতে প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ জন ছাত্র-ছাত্রী যোগদান করে। তাদের একটাই অভিযোগ,”এই শিকার কবে বন্ধ হবে?”এই কর্মসূচিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকেই।