বাংলা হান্ট ডেস্ক : গত রবিবারই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Jadavpur University) হস্টেলে রেখে গিয়েছিলেন ছেলেকে। বুধবার সন্ধ্যাবেলাই ছেলের ভয় মিশ্রিত ফোন পেয়ে উতলা হয়ে উঠেছিলেন স্বপ্নদীপের বাবা মা। সেদিন সন্ধ্যায় ছেলে নাকি বারবার ফোনে বলছিল, “চাপে আছি বাবা, তোমরা এসে আমাকে বাঁচাও।’ সেই রাতেই হোস্টেল থেকে ফোন করে জানানো হয়, স্বপ্নদীপ নাকি অসুস্থ এবং সে এখন হাসপাতালে ভর্তি। যদিও সেই অসুস্থতা আর সেরে ওঠেনি।
খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসেন রামপ্রসাদ কুণ্ডু আর মা স্বপ্না কুণ্ডু। এসে জানতে পারেন যে, বছর ১৮ এর ছেলেটা আর নেই। কর্তৃপক্ষ জানায়, আত্মহত্যা করেছে স্বপ্নদীপ। তবে বিষয়টাকে আত্মহত্যা বলে মানতে নারাজ কুণ্ডু দম্পতি। ছেলের রহস্যমৃত্যুর নেপথ্যে ‘র্যাগিং’-এর অভিযোগ করেছেন তারা। এইদিন পরিবারের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়ে যাদবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
পুলিশ সূত্রে খবর, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের ‘এ’ ব্লকের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে স্বপ্নদীপের। হোস্টেল কর্তৃপক্ষ তাঁর মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলতে চাইলেও সেই জল্পনা উড়িয়ে দিয়েছেন তাঁর মামা অরূপ কুণ্ডু। তিনি জানিয়েছেন, কাল রাতেও মায়ের সাথে কথা বলেছিল স্বপ্নদীপ। মামার কথায়, ‘‘ও বলে, ‘মা, আমি ভাল নেই। আমার খুব ভয় করছে।’ আমার বোন জিজ্ঞেস করেন, ‘কী হয়েছে’? ও বলে, ‘তুমি শীঘ্রই এসো, তোমার সঙ্গে অনেক কথা রয়েছে’।’’ শেষ বার ফোন কেটে যাওয়ার পর ছেলেকে মা ফোন করেন। কিন্তু আর ফোন ধরেননি স্বপ্নদীপ।
তার পর অভিভাবকের কাছে ফোনটি আসে। জানানো হয় স্বপ্নদীপ ছাদ থেকে পড়ে গিয়েছেন। ভাগ্নের মৃত্যু প্রসঙ্গে অরূপ আরও বলেছেন, ‘‘ও আত্মহত্যা করেনি। যে ভাল ছেলে, সে কী ভাবে হঠাৎ মারা যায়। ও পাগল নয়।” তবে কি মৃত্যুর কারণ অন্যকিছু? তিনি বলেন, ‘‘সন্দেহ তো হচ্ছে। চিকিৎসক একটা কাগজে সই করালেন। তাতে লেখা, স্বপ্নদীপের গায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। র্যাগিং অবশ্যই হয়েছে। র্যাগিং না হলে কী করে হয়?’’
এদিকে হোস্টেলের অন্যান্য পড়ুয়াদের দাবি, গত বুধবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিট নাগাদ তারা ভারী কিছু পড়ার শব্দ পান। ঘর থেকে বেরিয়ে দেখেন, নীচে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন স্বপ্নদীপ। সেখান থেকে এক সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে বৃহস্পতিবার ভোর ৪ টের সময় ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। ঘটনা জানা মাত্র অভিযোগ দায়ের করেছেন স্বপ্নদীপের মামা অরূপ। অরূপের আবেদন, ‘‘আমাদের বাচ্চা চলে গেল, আর কোনও বাচ্চার মায়ের কোল যাতে খালি না হয়!’’
সূত্রের খবর, এই রহস্যমৃত্যুর কিনারা করার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেখানে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। শিক্ষকরাও এটিকে কোন সাধারণ মৃত্যু বলে দেখছেনা। এই বিষয়ে বাংলা বিভাগের শিক্ষক রাজ্যেশ্বর সিনহা বলেছেন, ‘‘এই মৃত্যু মর্মান্তিক। র্যাগিং হিসাবে বিষয়টিকে ধরে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবিলম্বে এফআইআর করা উচিত। স্বপ্নদীপ নিজে ভালবেসে বাংলা পড়তে এসেছিল। ওর পড়তে ভাল লাগছিল। সে কথা ওর বাবাকে নিজেই জানিয়েছে। তার পর এই ঘটনা ঘটল কী করে?’’
বিতর্ক উসকে অধ্যাপক কুণাল চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘একটি প্রথম বর্ষের ছাত্র র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে একটু আগে মারা গেছে। আমার মনে পড়ে, র্যাগিং সত্যিই ‘র্যাগিং’ কি না, সেটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দিয়ে ঠিক করতে হবে, এই কথা বলে প্যামফ্লেট প্রকাশ করে ঐ সব কাজের ন্যায্যতা প্রমাণ করতে চাওয়া হয়েছিল। মৃত্যুর পর নিজেদের গা বাঁচানোর চেষ্টা অনেকেই করবে।’’