পেশায় শিক্ষক নির্মল এখন বিজেপি বিধায়ক, ভাগচাষির এই গুণী ছেলেকে ছাড়তে নারাজ পড়ুয়ারা

বাংলাহান্ট ডেস্কঃ একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির (bjp) সর্বাধিক দরিদ্র প্রার্থীদের মধ্যে একাধারে যেমন ছিলেন শালতোড়ার চন্দনা বাউরি, তেমনই অন্যদিকে আরও একজন ছিলেন ইন্দাসের (indas) নির্মল ধাড়া (nirmal dhara)। হলফনামায় লিখেছিলেন, তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ মোট ১৭০০ টাকা। এককথায় রাজ্যের সবচেয়ে গরিব এই বিজেপি প্রার্থী গেরুয়া শিবিরকে জয় এনে দিয়ে এখন ইন্দাসের বিধায়ক।

পেশায় প্রাইভেট টিউটর নির্মল ধাড়ার বাবা একজন ভাগচাষি। নিজে দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করলেও বাবা নয়নের স্বপ্ন ছিল ছেলেকে অনেক লেখাপড়া শেখাবেন, যা তিনি নিজে করতে পারেননি। সেইমত দারিদ্রতাকে পাশ কাটিয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে ‘মাস্টার্স’ ডিগ্রি অর্জন করে গ্রামে ফিরে নিজের মত আরও অনেক ‘নির্মল’ তৈরির যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন নির্মল ধাড়া।

IMG 20210608 191258

ইংরেজিতে ‘মাস্টার্স’ করলেও বাংলা, ইতিহাস, ভূগোলও দেখিয়ে দেন ছাত্রছাত্রীদের। কিন্তু এই অভাবী গ্রামের গৃহশিক্ষক নির্মল এখন ইন্দাসের বিধায়ক। কিন্তু এই অবস্থাতেও তাঁকে ছাড়তে নারাজ ছাত্র ছাত্রী থেকে তাঁদের অভিভাবকরা। তাঁদের বক্তব্য- ভালো কোন শিক্ষক না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা নির্মলকে ছাড়তে নারাজ। তাঁদের কথায়, ‘নির্মলের কাছে মেয়েকে পড়তে পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত ছিলাম। তবে এখন উনি যদি টিউটোরিয়াল সেন্টার তৈরি করেন, তাহলে আমাদের ছেলেমেয়ের মঙ্গলই হবে, ওনার পাশে আছি’।

এই একই কথা শোনা গেল নির্মলের এক ছাত্রীর মুখেও। জানালেন, ‘স্যার এমএলএ হয়েছেন বলে ভালো লাগলেও, ওনার কছে আর পড়তে পারব না বলে খারাপও লাগছে। সেই ক্লাস ফাইভ থেকে এই স্যারের কাছে পড়ছি, উনি খুব ভালোবেসেই পড়ান’।

vbbvbdbk

ছোট্ট এক গ্রামে জন্মের পর থেকেই অভাবের সঙ্গে লড়াই করে বেড়ে ওঠা নির্মল কোনদিন স্বপ্নেও ভাবেননি যে সে একদিন বিধায়কের আসনে বসবেন। আজকের দিনে এই সম্মান পেয়ে নির্মল জানিয়েছেন, ‘বাবা অনেক কষ্ট করে আমাকে পড়াশুনা শিখিয়েছেন। অভাবের সংসারে প্রয়োজনেও প্রাইভেট টিউটরের কাছে যেতে পারিনি। তাই কুশমুড়ির পড়ুয়াদের যাতে সেই কষ্টের দিন দেখতে না হয়, সেজন্য অনেক কম মাইনেতেই আমি টিউশন করতে শুরু করি’।

বিধায়ক হওয়ার পরও গ্রামের মানুষের পাশে থাকার পাশাপাশি নিজের ছাত্রছাত্রীদের জন্যও কিছু করতে চান নির্মল। তিনি জানান, ‘এখন বিধায়কের আসনে বসে, দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে বড় হওয়ার অতীতটা ভুলতে পারবে না। গোটা বিধানসভা এলাকার দায়িত্ব সামলানোর সঙ্গে নিজের গ্রামবাসীর পাশেও থাকব। পাশাপাশি বিধানসভার বেতন শুরু হলে, একটি অবৈতনিক টিউটোরিয়াল সেন্টার খুলব। সেখানে গ্রামের শিক্ষিত ছেলেরা বিনা বেতনেই ছাত্রছাত্রীদের পড়াবে’।

এসবের মধ্যেই বিজেপিতে তাঁর যোগদানের প্রসঙ্গে বললেন, ‘নরেন্দ্র মোদীর প্রতি একটা টান তৈরি হয়েছিল। ওনাকে খুবই ভালো লাগত। সেইকারণে মোদীজিকে প্রধানমন্ত্রী করার লক্ষ্য নিয়ে ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে বিজেপিতে যোগ দিই। আর সেই পথে হেঁটেই এখন বিধায়কের আসনে বসলাম’।

Smita Hari

সম্পর্কিত খবর