বাংলা হান্ট ডেস্কঃ আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করে দেশ স্বাধীন করার জন্য ডঙ্কা বাজানো নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর আজ ১২৫ তম জন্মজয়ন্তী। এবছর কেন্দ্র সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এবার থেকে প্রতি বছর ২৩ জানুয়ারি নেতাজির জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষ্যে গোটা দেশে প্রয়াক্রম দিবস পালিত হবে। আসুন জেনে নিই নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুকে নিয়ে কিছু তথ্য।
সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্ম ১৮৯৭ সালে ২৩ জানুয়ারি উড়িষ্যার কটক শহরে হয়েছিল। ওনার পিতার নাম জানকীনাথ বসু আর মায়ের নাম প্রভাবতী দেবী। জানকিনাথ বসু কটক শহরের একজন খ্যাতনামা আইনজীবী ছিলেন। কটকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পূর্ণ করার পর নেতাজি রাভেনশো কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। এরপর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেন। ১৯১৯ সালে বিএ পরীক্ষায় তিনি ফার্স্টক্লাসে পাশ করেন। গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি দ্বিতীয় হয়েছিলেন।
জানকীনাথ বসু চেয়েছিলেন সুভাষ ICS হোক। সুভাষ নিজের বাবার ইচ্ছে পূরণ করেন। ১৯২০ সালে আইসিএস পরীক্ষায় তিনি চতুর্থ স্থান দখল করেন। কিন্তু সুভাষ ইংরেজদের চাকরি করতে চেয়েছিলেন না। ২২ এপ্রিল ১৯২১ সালে তিনি ইস্তফা দেন। ২০ জুলাই ১৯২১ সালে গান্ধীজির সাথে প্রথমবার সাক্ষাৎ হয় সুভাষের। গান্ধীজির পরামর্শেই তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের পথ বেছে নেন।
স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে সাথে সমাজসেবা মূলক কাজের জন্যও উনি এগিয়ে আসতেন। বাংলার বন্যা কবলিত মানুষদের খাবার, বাসস্থান সমেত নানারকম সুবিধা প্রদান করেছিলেন তিনি। সমাজসেবা কাজ চালানোর জন্য যুবক দল গঠন করেছিলেন সুভাষ।
ভগৎ সিংকে ফাঁসির সাজা থেকে মুক্ত করতে তিনি নানাবিধ প্রয়াস করেছিলেন। গান্ধীজির সাথেও তিনি ভগৎ সিংয়ের মুক্তির জন্য কথা বলেছিলেন। তিনি গান্ধীজিকে বলেছিলেন যে, ভগৎ সিংয়ের মুক্তি নিয়ে ইংরেজদের সাথে করা চুক্তি যেন তিনি ভেঙে দেন। ওই চুক্তিতে জেলে থাকা কয়দিদের রেহাই দেওয়া কথা বলা হয়েছিল। গান্ধীজি ব্রিটিশ সরকারের সাথে করা চুক্তি ভাঙবেন না বলে জানিয়েছিলেন। এরপর ভগৎ সিংয়ের ফাঁসি হয়। আর এই ঘটনার পর থেকেই গান্ধী আর কংগ্রেসের কাজের ধরণে ক্ষুব্ধ হন সুভাষ।
নিজের জীবনে মোট ১১ বার জেলে গিয়েছিলেন নেতাজি। সবার আগে ১৯২১ সালে ১৬ জুলাই ওনাকে ছয় মাসের জন্য জেলে পাঠানো হয়। ১৯৪১ সালে একটি মামলায় ওনাকে কলকাতার আদালতে পেশ হওয়ার কথা ছিল, আর তখন তিনি পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। এরপর তিনি জার্মানি পৌঁছান। জার্মানিতে গিয়ে তিনি হিটলারের সাথে সাক্ষাৎ করেন। ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য আজাদ হিন্দ ফৌজের গঠন করেন আর বলেন, ‘তোমরা আমার রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব।”
১৮ আগস্ট ১৯৪৫ সালে তিনি বিমানে করে মাঞ্চুরিয়া যাচ্ছিলেন। এই সফরের সময় তাইহোকু বিমান বন্দরে ওনার বিমান দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়। এই দুর্ঘটনায় ওনার কি হয়েছিল সেটা এখনো রহস্য। ওনার এই রহস্য নিয়ে সময়ে সময়ে অনেক কথাই সামনে এসেছে। কেউ বলেন উনি এই দুর্ঘটনায় মারা যান। আবার কেউ বলেন, ওনার বিমান দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়নি। সেদিন যাই হয়ে থাকুক না কেন, নেতাজি আজও ১৩০ কোটি মানুষের মধ্যে বেঁচে আছেন।