বাংলা হান্ট ডেস্ক: প্রত্যেক সফল ব্যক্তির সফলতার পেছনে থাকে অদম্য জেদ এবং হার না মেনে যাওয়া লড়াইয়ের কাহিনি (Success Story)। যেই কাহিনি উদ্বুদ্ধ করে অন্যদেরও। বর্তমান প্রতিবেদনে আমরা ঠিক সেই রকমই এক লড়াকু ব্যক্তির প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব। যিনি মাত্র ৩৭ বছর বয়সে হয়েছেন ১.৩ বিলিয়ন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা) সম্পদের মালিক। শুধু তাই নয়, তিনি ১২ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা) মূল্যের একটি কোম্পানি চালাচ্ছেন। এই সফল ব্যক্তির নাম হল অপূর্ব মেহতা (Apoorva Mehta)। তবে, জেনে অবাক হবেন যে, সফলতা হাসিলের আগে তিনি ২০ টি স্টার্টআপ শুরু করলেও প্রত্যেকটিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। যদিও, তিনি উদ্যম না হারিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যান।
NRI বাবা-মায়ের সন্তান অপূর্ব প্রথমে ভারত থেকে লিবিয়া যান এবং সেখান থেকে কানাডায় স্থায়ী হন। তিনি কয়েক বছর আগে একটি গ্রসারি ডেলিভারি সংস্থা ইন্সটাকার্ট (Instacart) শুরু করেছিলেন এবং আজ এটি প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকার মার্কেট ক্যাপ সহ একটি ফার্মে পরিণত হয়েছে। কোম্পানিটির বর্তমানে ৭৭ লক্ষ ব্যবহারকারী রয়েছে এবং এখনও পর্যন্ত আমেরিকায় এই কোম্পানির ৮০ হাজারেরও বেশি নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটি আমেরিকান স্টক মার্কেটে ৯.৯ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা মূল্যের একটি বিশাল IPO লঞ্চ করেছে।
সাফল্যের আগে রয়েছে ব্যর্থতাও: এমনটা নয় যে অপূর্ব একটি মাত্র স্টার্টআপ তৈরি করেই কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেছেন। অপূর্ব প্রথমে অ্যামাজন, তারপর কোয়ালকম এবং তারপর ব্ল্যাকবেরিতে কাজ করেন। তিনি ওয়াটারলু ইউনিভার্সিটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক হওয়ার পর প্রায় ২০ টি স্টার্টআপ শুরু করেন এবং সবই ব্যর্থ হয়। ২০১০ সালে, অপূর্ব অ্যামাজনের সাপ্লাই চেনে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করতেন। তারপর তিনি তাঁর চাকরি ছেড়ে সিয়াটল থেকে ফ্রান্সিসকোতে চলে আসেন এবং বেশ কয়েকটি স্টার্টআপের চেষ্টা করেন।
আরও পড়ুন: ট্রেন দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বড় সিদ্ধান্ত রেলের! ১০ গুণ বাড়ল ক্ষতিপূরণের পরিমাণ
তারপর মাথায় আসে একটা আইডিয়া: এই প্রসঙ্গে অপূর্ব একটি লিঙ্কডইন পোস্টে লিখেছেন যে, “আমার ২০ টি আইডিয়া ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু আমি একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করতে প্রস্তুত ছিলাম। এটা প্রায় এক দশক আগের ঘটনা। আমি আমার অ্যাপার্টমেন্টে বসে ছিলাম। আমি যখন আমার ফ্রিজ খুললাম, তখন শুধু হট সসের বোতল ছিল। যদিও আমি হট সস পছন্দ করি কিন্তু এটি দিয়ে খাবার তৈরি করা যায় না।”
আরও পড়ুন: এবার ট্রেন ছাড়ার ১০ মিনিট আগেও মিলবে কনফার্ম টিকিট! যাত্রীদের জন্য বড় পদক্ষেপ রেলের
….এবং হয়ে গেল ইন্সটাকার্টের জন্ম: অপূর্ব লিখেছেন, “খালি ফ্রিজ দেখে আমার মাথায় একটাই কথা এসেছিল যে, আমার মতো এমন লক্ষাধিক মানুষ থাকবেন যাঁদের ফ্রিজ গ্রসারির জিনিসপত্র থেকে খালি থাকবে। ইন্সটাকার্টের জন্ম সেখান থেকেই। এটি ছিল ২০১২ সাল। সেই সময়ে আপনি গ্রোসারি ছাড়া অনলাইনে সবকিছু কিনতে পারতেন। আমি ততদিনে ইন্সটাকার্টের অ্যাপ তৈরি করেছি এবং লোকেদের বাড়িতে তাঁদের সুবিধামত গ্রোসারি সরবরাহ করা শুরু করে দিই।” উল্লেখ্য যে, আমেরিকার খুচরো বাজারের সবচেয়ে বড় বিভাগ হল গ্রসারি। যার বার্ষিক আয় হল ১.১ ট্রিলিয়ন ডলার।
এইভাবে শুরু করেন ডেলিভারি: অপূর্ব জানান যে, ইন্সটাকার্ট তৈরি করার সময়ে, তাঁর কাছে একটি গাড়িও ছিল না এবং তিনি উবের ক্যাবের মাধ্যমে ডেলিভারি করতেন। এক বছরের মধ্যে কোম্পানিটির সাথে ৬ লক্ষ ক্রেতা যুক্ত হয়ে যায়। এর পরে, সিকোইয়া ক্যাপিটাল, এন্ডসিন এবং পেপসিকোর মতো সংস্থাগুলি থেকে বড় বিনিয়োগ মেলে। সব ফান্ডিং রাউন্ড এবং IPO-র পরে, এক সময় কোম্পানির মূল্য ৩৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গিয়েছিল।