বাংলা হান্ট ডেস্ক: সাফল্য (Success) কখনোই বয়সের ওপর নির্ভর করে না। বরং, তা নির্ধারিত হয় সঠিক পরিশ্রম এবং অদম্য জেদের মাধ্যমে। এমতাবস্থায়, বর্তমান প্রতিবেদনে আজ আমরা আপনাদের কাছে এমন এক যুবকের সাফল্যের কাহিনি (Success Story) উপস্থাপিত করব যিনি মাত্র ২১ বছর বয়সেই দাঁড় করিয়েছেন ৫০০ কোটি টাকার কোম্পানি। পাশাপাশি, সারাদেশে রয়েছে ২ হাজারেরও বেশি স্টোর, করেছেন দশ হাজারেরও বেশি কর্মসংস্থানও। এমতাবস্থায়, স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে যে কে সেই যুবক? তিনি হলেন জেনেরিক আধারের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও অর্জুন দেশপান্ডে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, তাঁর কর্মকান্ড অবাক করে দিয়েছে ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পপতি রতন টাটাকেও।
প্রথমেই জানিয়ে রাখি যে, জেনেরিক আধারের পথচলা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। তখন অর্জুন দেশপান্ডের বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর। এই উদ্যোগের মাধ্যমে, অর্জুন দেশপান্ডে উচ্চমানের জেনেরিক ওষুধ সরাসরি গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছিলেন। এই কাজের জন্য, তিনি মার্কেট, ডিস্ট্রিবিউটর এবং স্টকিস্টদের পুরো চেনকে আলাদা করে দিয়েছিলেন। যার প্রভাব পড়ে দামেও। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে তিনি ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ছাড়ের মাধ্যমে ওষুধ দিতে শুরু করেন।
১১০ টাকার ওষুধের দাম হয়ে যায় মাত্র ৬ টাকা: জেনে অবাক হবেন যে, ডায়াবেটিসের ওষুধ Glimipiride-এর একটি পাতার দাম প্রায় ১১০ টাকা। কিন্তু জেনেরিক আধারে এটির দাম ৫ টাকার সামান্য বেশি। পাশাপাশি, অ্যান্টি-অ্যালার্জিক ড্রাগ লেভোসিট্রাজিনের দাম ৫৫ টাকা। কিন্তু জেনেরিক আধারে এটির দাম ৬ টাকা। এমন আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ খুব কম দামে পাওয়া যায় সেখানে।
আর এইভাবেই প্রতিষ্ঠার মাত্র দুই বছরের মধ্যে এই ফার্মা স্টার্টআপ দেশের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি, অর্জুন দেশপান্ডের প্রথম TED টকও ভাইরাল হয়ে যায়। যেটি সরাসরি রতন টাটার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। তিনি জেনেরিক আধারের উদ্ভাবনী মডেল দেখে অত্যন্ত মুগ্ধ হয়েছিলেন এবং এই উদ্যোগে বিনিয়োগ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। সেই থেকে টাটা এই কোম্পানির পার্টনার এবং দেশের প্রতিটি কোণে জেনেরিক আধারকে পৌঁছে যেতেও তিনি সাহায্য করছেন।
গ্রামেও পৌঁছতে চান: এই প্রসঙ্গে অর্জুন দেশপান্ডে জানান যে, তাঁর লক্ষ্য শুধুমাত্র শহুরে এলাকায় সীমাবদ্ধ নয়। বরং তাঁরা থ্রি টায়ার সিটি থেকে শুরু করে গ্রামেও পৌঁছে যেতে চান। তিনি বিশ্বাস করেন যে মুম্বাই, দিল্লি এবং বেঙ্গালুরুর মতো শহরগুলি থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে থেকেই আসল ভারত শুরু হয়।
সম্প্রতি, তিনি বিহারের কুশেশ্বর স্থান নামে একটি গ্রামে তাঁদের একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি চালু করেছেন। এটি এমন একটি গ্রাম যেখানে দশ হাজার জন মানুষের জন্য মাত্র একজন ডাক্তার, একটি ফার্মেসি এবং একটি হাসপাতাল রয়েছে। পাশাপাশি, কোম্পানিটি সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশ সরকারের সাথেও একটি চুক্তি করেছে। যার আওতায় শুধুমাত্র সরকারি হাসপাতালে ৭০০ টি স্টোর খোলা হবে। একইভাবে, মানুষ যাতে সাশ্রয়ী মূল্যে চিকিৎসা পেতে পারে সেই লক্ষ্যে মহারাষ্ট্র সরকারের সাথেও তাঁদের আলোচনা চলছে।
বিদেশেও রয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজি স্টোর: উল্লেখ্য যে, কোম্পানিটি এখন দেশের বাইরেও তাদের অবস্থান শক্ত করছে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী ও মায়ানমারের মতো ভারতের নিকটবর্তী দেশগুলিতে জেনেরিক আধারের ফ্র্যাঞ্চাইজি স্টোর খোলা হয়েছে। অর্জুন দেশপান্ডের মতে, খুব শীঘ্রই দুবাই, ওমান, কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনামেও স্টোর চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।