সারাতেন সাইকেলের পাংচার, ছিলনা স্কুলের ফি-র টাকা, সেই ছেলেই আজ IAS অফিসার

বাংলা হান্ট ডেস্ক: প্রত্যেক সফল মানুষের সফলতার পেছনেই থাকে এক অদম্য লড়াইয়ের কাহিনি (Success Story)। পাশাপাশি, সাহস, নিষ্ঠা এবং আত্মবিশ্বাসের ওপর ভর করে নিজেদের লক্ষ্যপূরণ করে ফেলেন তাঁরা। আর এইভাবেই তাঁরা হয়ে ওঠেন সকলের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস। বর্তমান প্রতিবেদনে আমরা ঠিক সেইরকমই এক লড়াকু ব্যক্তির প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব। যিনি একটা সময়ে সাইকেলের পাংচার সারিয়ে পরিবারের সদস্যদের জন্য খাদ্যের সংস্থান করতেন। তবে, আজ তিনি কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে IAS (Indian Administrative Service) অফিসার হয়ে রীতিমতো নজির গড়েছেন।

মূলত, আজ আমরা আপনাদের IAS অফিসার বরুণ বারানওয়ালের প্রসঙ্গে জানাবো। বরুণ ছিলেন এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তাঁর বাবা সাইকেল মেরামত করতেন। কিন্তু ২০০৬ সালের ২৪ মার্চ হার্ট অ্যাটাকে অকালেই প্রাণ হারান বরুণের বাবা। যার ফলে তাঁর পরিবার চরম আর্থিক সঙ্কটের সম্মুখীন হয়। শুধু তাই নয়, সমগ্র পরিবারের দায়িত্ব এসে পড়ে বরুণের কাঁধেই।

তিনি তাঁর বাবার সাইকেল মেরামতের দোকানটিতে কাজ শুরু করেন। এদিকে, তারই মধ্যে বরুণ দশম শ্রেণির পরীক্ষায় ভালোভাবে উত্তীর্ণ হন। এমনকি, সমগ্ৰ শহরের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। কিন্তু অর্থের অভাবে পরবর্তী পড়াশোনার জন্য ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি না হয়ে বাধ্য হয়েই সাইকেলের পাংচার মেরামতে দিনরাত ব্যস্ত ছিলেন তিনি।

পরিচিত এক ডাক্তার তাঁকে ভর্তি করান: মূলত, দশম শ্রেণির পরীক্ষার পর বরুণ পড়াশোনা করতে চাইলেও আর্থিক অনটনের কারণে তিনি ভর্তি হতে পারেননি। এমতাবস্থায় তাঁর এক পরিচিত ডাঃ কাম্পলি বরুণের পড়াশোনার প্রতি ইচ্ছে দেখে তাঁকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। আর এইভাবেই ফের শুরু হয় বরুণের পড়াশোনার সফর। ডাঃ কাম্পলি বরুণকে সময়ে সময়ে সাহায্য করতেন।

সাইকেল মেরামত করে টিউশন পড়ান: এমতাবস্থায়, দ্বাদশ শ্রেণির পর প্রথমে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন বরুণ। কিন্তু সেখানে অত্যধিক ফি-র কারণে সেটি ছেড়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। বরুণ পুণের এমআইটি কলেজে ভর্তি হন। সেখানে কলেজের ফি মেটাতে অত্যন্ত পরিশ্রম করতে হয় তাঁকে। তিনি দিনের বেলা কলেজে যেতেন এবং সন্ধ্যের সময়টা সাইকেল মেরামত করতেন। তারপর টিউশনও পড়াতেন তিনি। তবে, সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে দূরে সরিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রথম সেমিস্টারে প্রথম হন বরুণ। এরপর কলেজ তাঁকে স্কলারশিপ প্রদান করে।

Success Story Of IAS Varun Baranwal

মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি: এদিকে, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়া শেষ করে বরুণ একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি পান। এমতাবস্থায়, তাঁর পরিবার চেয়েছিল যে তিনি ওই সংস্থাতেই চাকরি চালিয়ে যান। কিন্তু, তিনি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দিতে চেয়েছিলেন। আর তাঁর এই লক্ষ্যে একটি এনজিও তাঁকে বই সরবরাহ করে। কঠোর পরিশ্রমের ওপর ভর করে বরুণ ২০১৩ সালে UPSC পরীক্ষায় সর্বভারতীয় স্তরে ৩২ তম স্থান অর্জন করে IAS অফিসার হয়ে নিজের স্বপ্নপূরণ করতে সক্ষম হন।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর