সংসার চালাতে বাঁধতেন বিড়ি, আমেরিকায় বিচারক পদে আসীন হলেন ভারতের সেই ছেলে

বাংলা হান্ট ডেস্ক: কথায় আছে, লক্ষ্য স্থির থাকলে সফর করার পথ যতই কঠিন হোক না কেন সফলতা অবশ্যই হাসিল করা সম্ভব। সম্প্রতি আমেরিকার (America) টেক্সাসে বিচারক হয়ে তা প্রমাণ করেছেন ভারতেরই এক কৃতী সন্তান। যাঁর নাম হল সুরেন্দ্রন কে প্যাটেল (Surendran K Patel) ভারতের কেরালার বাসিন্দা সুরেন্দ্রনকে অবশ্য এই অবস্থানে পৌঁছতে দীর্ঘ লড়াই করে সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে হারাতে হয়েছে। এমতাবস্থায়, সুরেন্দ্রন কে প্যাটেলের সাফল্যের কাহিনি নিঃসন্দেহে অনুপ্রাণিত করবে সবাইকে। উল্লেখ্য যে, গত ১ জানুয়ারি সুরেন্দ্রন কে প্যাটেল টেক্সাসের ফোর্ট বেন্ড কাউন্টিতে ২৪০ তম জেলা বিচারক হিসেবে শপথ নিয়েছেন।

এই প্রসঙ্গে প্রথমেই জানিয়ে রাখি যে, সুরেন্দ্রন কে প্যাটেল কেরালার কাসারগোদে একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এমতাবস্থায় সুরেন্দ্রনকে স্কুল-কলেজে পড়ার সময়ে তাঁর খরচ চালানোর জন্য দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করতে হয়েছিল। অর্থ উপার্জনের জন্য একটি বিড়ি কারখানায় কাজ শুরু করেন তিনি। এমনকি, সুরেন্দ্রনের বোন বিড়িতে তামাক ভর্তি এবং তারপর প্যাকিং করার কাজেও সাহায্য করতেন। আর এভাবেই চলত সংসার।

দশম শ্রেণিতে ছেড়ে দিতে হয় পড়াশোনা: জেনে অবাক হবেন যে, সুরেন্দ্রনের জীবনে এমন একটি সময় এসেছিল যখন তাঁকে তার দশম শ্রেণির পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয়েছিল। কিন্তু শীঘ্রই তিনি আবার স্কুলে ভর্তি হন এবং ল (Law) অর্থাৎ আইনের ক্ষেত্রে কেরিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। অনেক সময়ে চাকরির কারণে কলেজে যেতে না পারলেও তাঁর বন্ধুরা তাঁকে নোট তৈরিতে সাহায্য করতে থাকেন।

কলেজে পরীক্ষা দিতে বাধা: এমতাবস্থায়, কলেজে কম উপস্থিতির কারণে সুরেন্দ্রনকে পরীক্ষায় বসতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। এরপর সুরেন্দ্রন তাঁর অধ্যাপকের কাছে পরীক্ষায় বসার জন্য অনুরোধ করেন। পাশাপাশি, তিনি এও জানান নম্বর ভালো না হলে তাঁকে কলেজে আসা থেকে তাঁরা আটকাতে পারেন। এরপর প্রফেসররা তাঁকে পরীক্ষায় বসতে দেন এবং সুরেন্দ্রন কলেজে শীর্ষস্থান অর্জন করেন।

ধার নিয়ে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন: কলেজ শেষ করার পর, সুরেন্দ্রন ল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর কাছে এত টাকা ছিল না। এরপর বন্ধুদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এমতাবস্থায়, ১১৯৫ সালে সুরেন্দ্রন প্যাটেল তাঁর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন এবং কেরালার হোসদুর্গে অনুশীলন শুরু করেন। পরে দিল্লিতে সুপ্রিম কোর্টেও কাজ শুরু করেন তিনি।

surendran k pattel

স্ত্রীর কারণে আমেরিকা যেতে হয়: সুরেন্দ্রনের আমেরিকা সফর বেশ আকর্ষণীয়। মূলত, সুরেন্দ্রনের স্ত্রী একজন নার্স। ২০০৭ সালে আমেরিকার একটি বিখ্যাত হাসপাতালে চাকরি করার সুযোগ পান তিনি। এরপর সুরেন্দ্রন তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে হিউস্টনে চলে যান। সেখানে তিনি ওকালতি করার জন্য নতুন করে পড়াশোনা করেন এবং ২০১১ সালে স্নাতক হন।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর