বাংলা হান্ট ডেস্ক: আমাদের চারপাশে এমন অনেক কিছুই থাকে যেগুলিকে আপাতভাবে “পরিত্যক্ত” বলে মনে হলেও সেগুলিকে সঠিকভাবে কাজে লাগালে সেখান থেকেই করা যায় বিপুল অঙ্কের উপার্জন। পাশাপাশি পৌঁছনো যায় সফলতার শীর্ষেও (Success Story)। এমতাবস্থায়, বর্তমান প্রতিবেদনে আজ আমরা আপনাদের কাছে এমন এক যুবতীর প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব যিনি ঠিক সেইরকমই এক “পরিত্যক্ত” জিনিসকে ভালোভাবে কাজে লাগিয়ে আয়ের একটি বড় উৎসে পরিণত করেছেন। মূলত, তিনি নারকেলের খোল দিয়েই তৈরি করেছেন অনবদ্য সব জিনিসপত্র। শুধু তাই নয়, তাঁর কোম্পানি নারকেলের খোল ও ছিবড়ে দিয়েই টেকসই, পরিবেশ বান্ধব হস্তনির্মিত দ্রব্য তৈরি করে। আর যিনি এই অনন্য নজির গড়েছেন তিনি হলেন মারিয়া কুরিয়াকোস।
কিভাবে হল শুরু: মারিয়া ২০১৯ সালে “থেঙ্গা কোকো” নামে একটি ভেঞ্চারের প্রতিষ্ঠা করেন। কেরালার এই মহিলা-নেতৃত্বাধীন ভেঞ্চারটি কারিগরদের কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রদান করে। এটি ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ১ কোটি টাকা আয় করেছে। হাতে তৈরি এই সব পণ্যের চাহিদা রয়েছে দেশে-বিদেশেও। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, ২০১৯ সালে, মারিয়া কেরালার ত্রিশুরে কিছু নারকেলের কিছু খোল সংগ্রহ করেছিলেন। মারিয়া সেগুলিকে ভালোভাবে পরিষ্কার করেন। তারপর স্যান্ডপেপার ব্যবহার করে তাদের পৃষ্ঠকে মসৃণ করে ওই এই ফেলে দেওয়া নারকেলের খোলগুলি দিয়েই স্টাইলিশ, পরিবেশ বান্ধব বাটিতে রূপান্তরিত করা হয়। তারপরে একে একে আরও গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত পণ্য তৈরি করা হয়। মারিয়া তাঁর এই ব্যবসার নাম দিয়েছেন “থেঙ্গা কোকো”। মালায়লাম ভাষায় থেঙ্গা মানে হল নারকেল।
সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়াশোনা করেছেন: নারকেল হল একটি বিশেষ গাছ। যেটিকে “কল্পবৃক্ষ”-ও বলা হয়। এই গাছের প্রতিটি অংশই ব্যবহার করা যায়। মারিয়া নারকেল গাছের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। ২০১৬ সালে, তিনি মুম্বাইয়ের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক হন। এরপর মারিয়া কুরিয়াকোস আরও পড়াশোনার জন্য স্পেনে যান।
আরও পড়ুন: ফের বড় ঝটকা খেল পড়শি দেশ! কাঙাল পাকিস্তানকে “ধোকা দিলেন” সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স
ছেড়েছেন ভালো বেতনের চাকরি: মারিয়া ২০১৭ সালে মুম্বাইয়ের Aon Hewitt-এ কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন। চাকরির পাশাপাশি নিজের ব্যবসা নিয়েও ভাবতে থাকেন মারিয়া। তিনি এমন কিছু করতে চেয়েছিলেন যা পরিবেশ এবং সমাজের উপকার করতে পারে। পরের বছরই, তিনি ভালো বেতনের চাকরি ছেড়ে ময়না মহিলা ফাউন্ডেশনের অংশ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এটি একটি সংস্থা যেটি মহিলাদের স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ায়। ওই সংস্থাটি মুম্বইয়ের বস্তিতে সস্তায় স্যানিটারি প্যাডও সরবরাহ করে।
আরও পড়ুন: ঘাতক ড্রোন সহ যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন! ভারত বিরোধী মুইজ্জু তুরস্কের সাথে করছেন ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা
বিদেশে রপ্তানি হয় পণ্য: মারিয়ার নেতৃত্বাধীন থেঙ্গার আজ কেরালার বিভিন্ন অঞ্চল জুড়ে কৃষক এবং কারিগরদের একটি চমৎকার নেটওয়ার্ক রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কোট্টায়াম, কোডুঙ্গাল্লুর, মেট্টুপালায়ম এবং আলেপ্পি। ৩০ জনেরও বেশি এই উদ্যোগে কাজ করেন। যাঁদের মধ্যে ৮০ শতাংশই মহিলা। কারিগররা তাঁদের দক্ষতার সাথে তৈরি করা জিনিসগুলি থেকে মাসিক ২০-২৫ হাজার টাকা উপার্জন করেন। এদিকে, এই পণ্যের চাহিদা চেন্নাই থেকে শুরু করে হায়দ্রাবাদ, মুম্বাই, আহমেদাবাদ, কলকাতা এবং দিল্লি-এনসিআরের মতো শহরগুলি ছাড়াও ডেনমার্ক, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেনের মতো দেশেও প্রবলভাবে রয়েছে। তবে, স্থানীয় অর্ডারের চেয়ে এই পণ্যের আন্তর্জাতিক চাহিদা অনেকটাই বেশি রয়েছে।