পাচারের হাত থেকে বাঁচিয়ে স্বাবলম্বী করেছেন পাঁচ হাজার মহিলাকে! এভাবেই বাবার স্বপ্নপূরণে ব্যস্ত বাংলার শুক্লা

বাংলা হান্ট ডেস্ক: “আমার বাবা বলতেন, জুতো সেলাইয়ের কাজ করলেও এমনভাবে করো যেন সারা শহর তোমার কাছেই জুতো সেলাই করতে আসে। আমি তাঁর কথা মেনে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম যে সমাজসেবার মাধ্যমে এমন একটি উদাহরণ স্থাপন করব যাতে তরুণ প্রজন্ম তা দেখে অনুপ্রাণিত হয় এবং অন্যদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসে।” প্রতিবেদনটি যাঁর উক্তি দিয়ে শুরু করা হল তাঁর নামশুক্লা দেবনাথ। তাঁর অন্যতম পরিচয় হল তিনি আমাদেরই বাংলার (West Bengal) একজন সমাজসেবিকা। ইতিমধ্যেই তিনি দার্জিলিং (Darjeeling) এবং তার আশেপাশের চা বাগানের আদিবাসী মহিলাদের স্বাবলম্বী করে তোলার মহৎ কাজ করছেন।

দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ প্রত্যক্ষভাবে সমাজসেবার সাথে যুক্ত রয়েছেন শুক্লা। সম্প্রতি তিনি “ইন্টারন্যাশনাল বুক অফ রেকর্ডস”-এ “কনিষ্ঠতম সমাজকর্মী” সম্মানেও ভূষিত হয়েছেন। ডুয়ার্সের আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনি ব্লকে অবস্থিত নিউ হাসিমারায় জন্মগ্রহণ করা শুক্লা ছোটবেলা থেকেই তাঁর মাকে অভাবী মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখেছেন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে শুক্লা তাঁর চারপাশের চা বাগানের আদিবাসী মহিলাদের দুর্দশাও খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন।

এই প্রসঙ্গে তিনি জানান, শৈশবকাল থেকেই তিনি মনস্থির করে রেখেছিলেন যে, ওই মহিলাদের জন্য তিনি এমন কিছু করবেন যাতে তাঁদের অন্যের অধীনে আর কাজ করতে না হয়। এমতাবস্থায়, তিনি একাই তাঁদের স্বাবলম্বী করে তোলার কাজে যুক্ত হন। ইতিমধ্যেই শুক্লা পাঁচ হাজারেরও বেশি মহিলাকে জীবনের নতুন পথ দেখিয়েছেন।

অন্যদের সাহায্য করার জন্য চাকরির পথে হাঁটেননি তিনি: শুক্লা সবসময় বিশ্বাস করেন যে, কোনো কাজই ছোট বা বড় নয়। এই কারণেই পড়াশোনা শেষ করে চাকরি বেছে নেওয়ার পরিবর্তে, তিনি এমন কিছু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যাতে তিনি চা বাগানে কাজ করা আদিবাসী মহিলাদের পাশে দাঁড়াতে পারেন। শুক্লা ১৪ বছর বয়সে একটি বিউটিশিয়ান কোর্স করেছিলেন। যার জন্য তাঁকে তাঁর সাইকেলটি বিক্রি করতে হয়। ১০ বছর আগেই শুক্লা একজন মেক-আপ আর্টিস্ট এবং প্রাইভেট টিউটর হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর থেকে তিনি উত্তরবঙ্গের সুভাষিনী চা বাগান, কালচিনি চা বাগান, মাছ পাড়া চা বাগান এবং চামুর্চি চা বাগানের ৫ হাজার দরিদ্র ও নিঃস্ব মহিলাকে স্বাবলম্বী করে তুলছেন।

whatsapp image 2022 12 27 at 12906 pm 63aafc289be00

এই প্রসঙ্গে শুক্লা জানান, তিনি দেখেছেন কিভাবে প্রত্যন্ত গ্রামের মহিলারা কাজের সন্ধান করতে গিয়ে মানব পাচারকারীদের ফাঁদে পড়ে যায়। এমতাবস্থায় তিনি চা বাগান এলাকায় কর্মরত তরুণী ও মহিলাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। এমতাবস্থায়, তাঁদের আত্মনির্ভরশীল করার পাশাপাশি শুক্লা তাঁদের অন্যান্য প্রয়োজনগুলি পূরণ করারও চেষ্টা করেন।

বাবার স্বপ্নপূরণে ব্যস্ত তিনি: শুক্লা জানান, তাঁর জীবনে তাঁর বাবার সবচেয়ে বেশি প্রভাব ছিল। যদিও তিনি এখন আর তাঁর সাথে নেই। তবুও বাবার দেখানো পথেও হাঁটছেন তিনি। পাশাপাশি, করোনার সময়ে তিনি অভিনেতা এবং সমাজকর্মী সোনু সুদের কাজ দেখেও খুব মুগ্ধ হয়েছিলেন।

320508661 840461120594995 7688082729488560786 n 63aafc707ab46

অনেক পুরস্কার পেয়েছেন: এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, বিভিন্ন সামাজিক কাজের জন্য শুক্লা বহু পুরস্কার ও সম্মান পেয়েছেন। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল বুক অফ রেকর্ডসে সর্বকনিষ্ঠ সমাজকর্মীর সম্মান পেয়েছেন তিনি। এর সাথে, তিনি পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো “দিদি নাম্বার ওয়ান”-এর একটি পর্বেও উপস্থিত হন। বাংলাদেশের নারী সচেতনতামূলক সামাজিক সংগঠন বঙ্গ সমাজ পুরস্কারেও তিনি ভূষিত হয়েছেন। ৩৫ বছর বয়সী শুক্লা দেবনাথ নিজেকে সমাজসেবায় এমনভাবে উৎসর্গ করেছেন যে তিনি বিয়ে পর্যন্ত করেননি। তাঁর মতে, কাউকে সাহায্য করার জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা প্ল্যাটফর্মের প্রয়োজন নেই। একজন ব্যক্তি যদি দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হন, তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে হাজার হাজার মানুষকে সাহায্য করতে পারেন।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর