বাংলা হান্ট ডেস্ক: কোয়েম্বাটোরে (Coimbatore) স্থিত পোল্ট্রি ফার্মিং কোম্পানি সুগুনা ফুডস (Suguna Foods) বর্তমানে শুধুমাত্র একটি ব্যবসায়িক কোম্পানি নয় বরং যাঁরা ব্যবসা শুরু করার কথা ভাবছেন তাঁদের কাছে একটি অনুপ্রেরণাও বটে। সুগুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান বি সুন্দররাজন এবং তাঁর ভাই জি বি সুন্দররাজন তাঁদের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ওই কোম্পানিটিকে হাজার হাজার কোটি টাকার কোম্পানিতে পরিণত করেছেন। সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, আজ এই ভাইয়েরা কয়েক হাজার টাকার কোম্পানি পরিচালনা করলেও তাঁরা একটা সময়ে কলেজে পড়ার সুযোগটুকু পান নি।
পড়তে পারেননি কলেজে: জানা গিয়েছে, ১৯৭৮ সালে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করার পর, বাবা বঙ্গরাসামীর পরামর্শ অনুযায়ী বি. সুন্দররাজন কৃষিকাজ শুরু করেন। এমতাবস্থায়, তিনি ওই এলাকার অন্যান্য কৃষকদের মতো তুলা চাষ না করে সবজি চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন। ২০ একর পৈতৃক জমিতে এই চাষ শুরু করেন তিনি। যদিও, তিন বছর ধরে সবজি চাষ করলেও তেমন লাভ হয়নি। বিপরীতে, ঋণ বাড়তে থাকে। তারপরে তিনি হায়দ্রাবাদে তার খুড়তুতো ভাইয়ের কৃষি-মোটর উৎপাদন সংস্থায় যোগদান করার সিদ্ধান্ত নেন।
১৯৮৬ সালে শুরু হয় সুগুনা ফুডস: ১৯৮৬ সালে সুগুনা ফুডস চালুর মাধ্যমে স্বপ্ন বাস্তবায়িত করেন দুই ভাই। ইওর স্টোরি অনুসারে, তাঁরা কোয়েম্বাটোরে সুগুনা ফুডস প্রাইভেট লিমিটেড একটি ছোট পোল্ট্রি ট্রেডিং কোম্পানি হিসাবে মাত্র ৫০০০ টাকা দিয়ে শুরু করেছিলেন। মূলত, তাঁরা অন্যান্য পোল্ট্রি সংস্থাগুলিতে পোল্ট্রি, ফিড এবং এই সম্পর্কিত অন্যান্য পণ্য সরবরাহ করতেন।
অনেকে করেছেন উপহাস: ১৯৯০ সালে সুগুনা ফুডস মাত্র তিনটি ফার্ম নিয়ে মুরগি পালনে উদ্যোগী হয়। সুন্দররাজন ইওর স্টোরিকে একটি সাক্ষাৎকারে জানান যে, “যখন তিনি এই ব্যবসা শুরু করেছিলেন, তখন সবাই তাঁকে নিয়ে হাসাহাসি করতেন। সবাই বলেছিলেন যে কখনোই এই ব্যবসার মডেল সফল হবে না।” কিন্তু এই দুই ভাই সবাইকে অবাক করে দেন ১৯৯৭ সালে। তখন কোম্পানি ৭ কোটি টাকার ব্যবসা করে। বর্তমানে সুগুনা ফুডস এই মডেলের মাধ্যমে ৪০,০০০-এরও বেশি কৃষককে লাভবান করছে। এমনকি, সংস্থাটি বিদেশেও পণ্য রপ্তানি করে।
আজ কোম্পানিটির মূল্য ৯,০০০ কোটি টাকা: মূলত, সুন্দররাজন নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর খাবার সরবরাহ করার লক্ষ্যে সুগুনা ফুডসকে ভারতে “প্রোটিন লিডার” বানাতে চান। তিনি এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, “বাংলাদেশ, পাকিস্তান সহ অন্যান্য দেশে মুরগি জীবিত মুরগির মতো নয় বরং প্রক্রিয়াজাত মুরগি হিসেবে বিক্রি হয়। ভারত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে খুব ধীর গতিতে রয়েছে। কিন্তু আমরা এই পরিবর্তনের অংশ হতে চাই এবং সেটাকে ৪ শতাংশে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করতে চাই।”
উল্লেখ্য যে, মাত্র ৫,০০০ টাকা দিয়ে শুরু করা এই কোম্পানিটি বর্তমান টার্নওভার হল ৯,০০০ কোটি টাকা। আজ এই সংস্থাটি দেশের ১৮ টি রাজ্যের প্রায় ৯,০০০ গ্রামে ২৩,০০০ জন কৃষকের সাথে কাজ করছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, এই সংস্থাটি এক সপ্তাহে প্রায় ৮০ লক্ষ চিকেন উৎপাদন করে। পাশাপাশি, সংস্থার সারা দেশে ২৫০ টি ব্রাঞ্চ রয়েছে। যেখানে ৫,৫০০ জনেরও বেশি কর্মী কাজ করেন।