ধনী পরিবারের পুত্রবধূ হয়েও রাস্তার ধারে “ছোলে কুলচে” বিক্রি করে আজ সফল উর্বশী

বাংলা হান্ট ডেস্ক: জীবন যুদ্ধে এমন কিছু কিছু লড়াইর ঘটনা ঘটে যা বিশ্বাস করা অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু, কঠোর বাস্তবে সম্ভব সবই! তাই তো এই ঘটনাগুলি দাগ কেটে যায় সকলের মনে। জীবনের চরম অনিশ্চয়তায় যে সবকিছুই ঘটতে পারে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে উর্বশী যাদবের জীবনযুদ্ধে।

তাঁর জীবনের কাহিনি যেমন আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে ঠিক তেমনি ভাবতে বাধ্য করবে যে কোনো কাজই ছোট নয়! উর্বশী যাদবের জীবন সিলভার স্ক্রিনের সিনেমার গল্পের চেয়ে কম কিছু নয়। ধনী পরিবারের পুত্রবধূ হওয়া থেকে রাস্তার ধারে “ছোলে কুলচে” বিক্রির মতো ঘটনা সবকিছুরই সাক্ষী থেকেছেন উর্বশী।

উর্বশী গুরুগ্রামের একটি ধনী পরিবারে বিয়ে করেছিলেন। তাঁর স্বামীর নাম অমিত যাদব। তিনি একটি নির্মাণ সংস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করতেন। উর্বশীর পরিবার খুব সম্ভ্রান্ত ছিল এবং সেখানে অর্থের কোনো অভাবও ছিলনা। কিন্তু, কার ভাগ্যে যে কি লেখা আছে সেটা তো কেউ জানতে পারেনা। উর্বশীর সুখের সংসারে নেমে আসে অন্ধকার!

তাঁর স্বামী অমিত হঠাৎ দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। ওই ঘটনার পর অমিতকে বেশ কিছু অস্ত্রোপচার করতে হয়। তবে, চিকিৎসার পরও অমিতের অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি, কারণ তিনি গুরুতর আঘাত পেয়েছিলেন। এই কারণে, অমিতের শরীর কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং পুরো পরিবারের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রাতারাতি উর্বশীর কাঁধে এসে পড়ে।

এদিকে, তাঁর স্বামীর চিকিৎসার কারণে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে ফেলেন উর্বশী। এমতাবস্থায়, বাচ্চাদের স্কুলের ফি, স্বামীর ওষুধ এবং খাবার ও পানীয়ের চাহিদা মেটাতে উর্বশীর কাছে ক্রমশ ফুরিয়ে আসে টাকার পরিমাণ। যদিও, এই সময়ে উর্বশী একটি নার্সারি স্কুলে শিক্ষিকার চাকরি পেয়েছিলেন। কিন্তু, সেখানে তিনি এতই কম টাকা পেতেন যে, সেই টাকায় সংসারের খরচ চালানো খুব কঠিন ছিল।

উর্বশী তা বুঝতে পেরে নতুন কোনো উপায় খুঁজতে থাকেন। তারপরেই উর্বশী রাস্তার ধারে একটি খাওয়ারের দোকান শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। উর্বশী যখন এই ধারণাটি তাঁর পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছিলেন তখন তাঁরা পরিবারের কথা ভেবে এই সিদ্ধান্তের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করেছিলেন। তবে, অনেক চেষ্টার পরে, উর্বশী তাঁর পরিবারকে রাজি করিয়ে রাস্তার ধারে একটি “ছোলে কুলচে”-র দোকান খোলেন।

3aajkinaari 5e68933d863bd

উর্বশীর নিরন্তর পরিশ্রম এবং খাবারের চমৎকার স্বাদের কারণে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই গুরুগ্রামের ১৪ নম্বর সেক্টরে তাঁর “ছোলে কুলচে”র স্টলটি বিখ্যাত হয়ে ওঠে। পাশাপাশি, উর্বশী ইংরেজিও বলতে পারতেন। স্বভাবতই, তাঁর মত একজন স্মার্ট এবং সম্ভ্রান্ত পরিবারের গৃহবধূকে এই কাজ করতে দেখে অবাকও হতেন অনেকেই। প্রথমদিকে, উর্বশী তাঁর দোকান থেকে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতেন। যা তাঁর নার্সারি স্কুলের উপার্জনের চেয়ে অনেক বেশি ছিল।

আজ উর্বশীর এই দোকানে লম্বা লাইন দেখা যায়। পাশাপাশি, সোশ্যাল মিডিয়াতেও এটি বিপুল জনপ্রিয়। তিনি তাঁর দোকানটিকে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে তুলেছেন। এমনকি, বর্তমানে তিনি তাঁর স্বামীর থেকেও বেশি উপার্জন করেন। সময়ের সাথে সাথে উর্বশীর আর্থিক অবস্থা আবার ভালো হতে থাকে এবং তাঁর স্বামী অমিতের শারীরিক অবস্থারও চিকিৎসার কারণে উন্নতি হতে থাকে। এদিকে, উর্বশীর এই লড়াকু কাহিনি সামনে আসার সাথে সাথেই সকলে তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। পাশাপাশি, তিনি যেভাবে সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে গেছেন সেই কারণে সকলেই তাঁকে স্যালুট জানিয়েছেন।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর