অন্য রকম হওয়ার কথা ছিল শেষটা, ‘সপ্তপদী’র ক্লাইম্যাক্স বদলাতে বাধ্য করেন সুচিত্রা! কিন্তু কেন?

Published On:

বাংলাহান্ট ডেস্ক : বাংলা ছবির ‘স্বর্ণযুগ’ বলতে কী বোঝায়? দশজনের মধ্যে হয়তো সাত-আটজনই উত্তর দেবেন উত্তম-সুচিত্রা (Suchitra Sen) জুটি। সে এমন এক সময় যখন বাংলা ছবির ভাঁড়ার ছিল পরিপূর্ণ। পরিচালক, অভিনেতা অভিনেত্রীদের নিয়ে একের পর এক কালজয়ী ছবি উপহার দিয়েছে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। একাধিক দিকপাল ব্যক্তিত্বদের মধ্যে উত্তম কুমার এবং সুচিত্রা সেন (Suchitra Sen) ছিলেন বাংলা ছবির প্রাণ। তারপর থেকে কত জুটিই এসেছে গিয়েছে, কিন্তু উত্তম-সুচিত্রার মতো ‘ম্যাজিক’ কেউই তৈরি করতে পারেনি পর্দায়।

সপ্তপদীর ক্লাইম্যাক্স বদলাতে বাধ্য করেন সুচিত্রা (Suchitra Sen)

একসঙ্গে যেকটি ছবি করেছিলেন তাঁরা, সেই সবগুলিই হয়েছে কালজয়ী। তার মধ্যে থেকেও আবার কিছু ছবির নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে গিয়েছে চলচ্চিত্রের ইতিহাসে। আর সেই তালিকাতেই অন্যতম নাম ‘সপ্তপদী’। ১৯৬১ সালে অজয় করের পরিচালনায় মুক্তিপ্রাপ্ত সপ্তপদী বাংলা ছবির জগতে এক অমূল্য সম্পদ। বিশেষ করে উত্তম সুচিত্রা (Suchitra Sen) ভক্তদের জন্য এ ছবি আক্ষরিক অর্থেই ‘মাস্ট ওয়াচ’। সিনেমা প্রেমীরা না জানি কতবার করে দেখেছেন ছবিটি। তবুও যেন এর গল্প, গান পুরনো হওয়ার নয়। কিন্তু জানেন কি, সপ্তপদীর শেষটা আসলে অন্য রকম হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এক বিশেষ কারণে বদলে দেওয়া হয় তা। আর সেখানেও রয়েছে সুচিত্রা সেনের অবদান। কীরকম?

Suchitra sen insisted to change saptapadi climax

আসলে কী ছিল গল্প: তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের একই নামের উপন্যাস থেকে তৈরি হয়েছিল ‘সপ্তপদী’। পরিচালক প্রথমে ভেবেছিলেন, উপন্যাসে যেমনটা আছে তেমন ভাবেই ছবিও শেষ করবেন। অর্থাৎ সেক্ষেত্রে ছবির শেষে উত্তম কুমারের চরিত্রটিকে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত দেখানো হত। কিন্তু এমন পরিণতি শুনেই বেঁকে বসেন সুচিত্রা (Suchitra Sen)। তাঁর স্পষ্ট যুক্তি ছিল, ছবিতে উত্তমের চরিত্রটিকে যেমন রোম্যান্টিক হিরো হিসেবে দেখানো হয়েছে তাতে এমন পরিণতি দেখালে দর্শকদের মন ভেঙে যাবে। তাঁরা মানতে পারবেন না।

আরো পড়ুন : শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ‘বন্ধুত্ব’ বৃদ্ধিতে জোর, চিনকে চাপে রেখে পড়শিকে নিয়ে বার্তা মোদীর

কী বুদ্ধি বাতলান সুচিত্রা: শোনা যায়, ছবির শুটিং শুরু হওয়ার পরপরই নাকি সুচিত্রা সেন (Suchitra Sen) নিজের চরিত্রটিকে নিজের মতো করে সাজাতে শুরু করেছিলেন। সুচিত্রার কথা মতো সিনেমার শেষটা বদলাতে পরিচালক যোগাযোগ করেন লেখক তারাশঙ্করের সঙ্গে। কিন্তু তিনিও রাজি হননি নিজের গল্পের সঙ্গে এমন কাটাছেঁড়া করতে। তাহলে উপায়? মুশকিল আসান হিসেবে সেই অবতীর্ণ হন সুচিত্রা (Suchitra Sen)। তাঁরই বুদ্ধিমতো লেখকের কাছে পাঠানো হয় উত্তম কুমারের ভাই তরুণ কুমারকে। তিনি তখন বুঝিয়ে বলেন যে, একজন মানুষ যে কিনা শুধুমাত্র ভালোবাসার জন্য নিজের পরিবার, ধর্ম সব পরিত্যাগ করে, তাকে দর্শক সহানুভূতির দৃষ্টিতেই দেখবে। কিন্তু শেষে যদি তাঁকে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হিসেবে দেখানো হয়, তাহলে দর্শকদের কাছে ভালোবাসার অর্থটাই হারিয়ে যাবে।

আরো পড়ুন: রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার তীব্র ভূমিকম্পের সতর্কতা, শিয়রে শমন ভারতের পড়শি দেশে!

তরুণ কুমারের বোঝানোতে বুঝতে পারেন তারাশঙ্কর। রাজি হন তিনি। আমূল বদলে যায় গল্পের মোড়। নতুন করে লেখা হয় ক্লাইম্যাক্স। তবে এতে উত্তম কুমারের বেশ কিছু দৃশ্য বাদ পড়েছিল ছবিতে। কিন্তু সবটা জেনেও কিছু বলেননি মহানায়ক। সম্ভবত তিনি বুঝেছিলেন, কোনটা করলে ছবিটা সার্থক হবে। কিংবা সুচিত্রার উপরেও হয়তো তাঁর ভরসা ছিল। তবে যাই হোক, মহানায়িকার বুদ্ধিতেই শেষমেষ ‘অমর’ হয়ে ওঠে সপ্তপদী।

Niranjana Nag

নীরাজনা নাগ, বাংলা হান্টের কনটেন্ট রাইটার। নারুলা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে স্নাতক পাশ করার পর সাংবাদিকতার সফর শুরু। বিগত ৫ বছর ধরে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত।

সম্পর্কিত খবর

X