বাংলাহান্ট ডেস্ক : দক্ষিণ কলকাতার রুবি মোড়ে অখিল ভারত হিন্দু মহাসভার (Hindu Mahasabha) পুজো মণ্ডপে যে দুর্গার মূর্তি পুজো করা হচ্ছে, সেখানে মহাত্মা গান্ধীর আদলে তৈরি করা হয়েছে মহিষাসুরকে। আর এ নিয়েই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান উতর। তবে ইতিমধ্যেই পুলিস এসে অসুর বদলে দিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। বাঙালিরা মহিষাসুরকে যে আদলে দেখে অভ্যস্ত, হিন্দু মহাসভা তা না করে গান্ধীজির আদলে রূপ দিয়েছে মহিষাসুরকে। যা নিয়ে রাজ্য জুড়ে শুরু হয়েছে তর্ক-বিতর্ক।
হিন্দু মহাসভার সভাপতি চন্দ্রচূড় গোস্বামী এই বিষয়ে বলেন, ‘নো অবজেকশন নিয়ে পুজো করা হচ্ছে। তবে গান্ধীকে অসুর রূপে দেখানো হয়নি। এই মিল নিতান্তই কাকতালীয়। এটাও আবার অস্বীকার করছি না যে, মোহনদাস কর্মচাঁদ গান্ধীকে যে জাতির জনক বা জাতির পিতা বলা হয় ঠিকই, কিন্তু আমরা তা মানি না। আমরা নেতাজিকে শ্রদ্ধা করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি তো প্রধানমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করেছি যে, আপনি তো বলছেন, গান্ধীর অনুপ্রেরণায় আট বছর সরকার চালিয়েছেন, এটা অবিশ্বাস্য। তার কারণ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নাম পুলিসের কাছে তুলে দেওয়ার জন্য যে মানুষটির নাম জড়িয়েছে, কংগ্রেস থেকে যে ভাবে নেতাজিকে বিতাড়িত করা হয়েছে, ভগৎ সিংহের ফাঁসির ক্ষেত্রে গান্ধীর অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ভূমিকা রয়েছে, সেই মানুষটি জাতির জনক কেন হতে যাবে?’
হিন্দু মহাসভার এই পুজোর বিতর্ক নিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। গান্ধীজি আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তানদের মধ্যে এক জন। তাঁকে এ ভাবে অসুররূপে দেখানো হয়েছে, এটি অত্যন্ত নিন্দনীয়। এর বিরুদ্ধে পুলিসের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ।’
বিজেপি রাজ্যকে ভাগ করার চেষ্টা করছে, রাজ্যের অনুদান দিচ্ছে না এবং গান্ধীকে বড় করে দেখানোর চেষ্টা করছেন নরেন্দ্র মোদী, গান্ধীমুক্ত ভারত চাই— বিজেপির বিরুদ্ধে হিন্দু মহাসভার এই স্লোগান নিয়ে সুকান্তকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এই সব পাগলদের কাজ। এদের গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই। পুলিস এদের গ্রেফতার করে কিছু দিন জেলে রেখে দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।’
হিন্দু মহাসভার সভাপতি চন্দ্রচূড়ের অবশ্য দাবি, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ কসবা থানার পুলিস এসে জোর করে অসুরের মূর্তিতে চুল লাগিয়ে দিয়েছে। না হলে পুজো বিসর্জন দিয়ে দিতে হবে বলে পুলিস তাঁদের জানায়। তাঁর কথায়, ‘ওদের উপর নাকি কেন্দ্র থেকে প্রচুর চাপ দেওয়া হচ্ছে। লালবাজারেও নাকি চাপ দেওয়া হয়েছে। আমার কাছেও ফোন এসেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে। বলা হয়েছে, ‘গান্ধীর ব্যাপারে এ সব বিতর্ক করাই যাবে না। আমি গ্রেফতার পর্যন্ত হতে পারি।’ আমি ওঁদের পাল্টা বলেছি, ‘গ্রেফতার হলে হব।’ আমি সত্যি কথা বলতে ভয় পাই না।’
এই বিতর্ক প্রসঙ্গে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘এটা ঘোরতর অন্যায়। এটা পাপ কাজ হয়েছে। কোনও রকম সুস্থ রুচির সঙ্গে গোটা বিষয়টি যায় না। রাতে শুনেছি ওরা নাকি অসুর বদল করেছে। যদি করে থাকে খুবই ভাল, না হলে কড়া পদক্ষেপের মুখে পড়বে।’ কুণালবাবু আরও বলেন, ‘ওরা তো বিজেপিরই অন্তরাত্মা। বিজেপি তো গডসের পূজারি।’