বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সাম্প্রতিক অতীতে এনফোমার্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (Enforcement Directorate) তথা ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের একাধিক হেভিওয়েট। ভোটের আবহেও অ্যাকশনে দেখা গিয়েছিল এই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে। এই নিয়ে একাধিকবার সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি। দাবি করা হয়েছে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য এই গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই আবহে এবার ইডির ক্ষমতা খর্ব করল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)।
বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ আদালতে একটি মামলার শুনানি ছিল। সেই শুনানি চলাকালীনই আদালত জানায়, বিশেষ আদালতে যদি মামলা গৃহীত হয়, তাহলে আর সরাসরি গ্রেফতার করতে পারবে না কেন্দ্রীয় এজেন্সি ED। সেক্ষেত্রে আদালতের থেকে আগে অনুমতি নিতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ২০০২ সালের আর্থিক তছরুপ প্রতিরোধ আইন তথা PMLA-র বিশেষ আদালতে যদি কোনও মামলা যায়, তাহলে ১৯ নং ধারা প্রয়োগ করে আর কাউকে সরাসরি গ্রেফতার করতে পারবে না ইডি। বরং যদি কাউকে হেফাজতে নিতে চায়, তাহলে সেক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি নিতে হবে।
আরও পড়ুনঃ শুভেন্দু গড়ে মুখ্যমন্ত্রীর কপ্টার নামার অনুমতি দিল না সরকারি কলেজ! আসল কারণ ‘ফাঁস’ হতেই শোরগোল
বিচারপতি এএস ওকা এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়ার বেঞ্চে এদিন এই মামলার শুনানি চলছিল। আদালত তখন বলে, ‘বিষয়টি যদি বিশেষ আদালতে গৃহীত হয়, তাহলে ইডি এবং তার আধিকারিকদের আর ১৯ নং ধারা প্রয়োগের ক্ষমতা থাকে না। তারা আর অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারবে না। তদন্ত প্রক্রিয়া চলাকালীন অভিযুক্ত যদি হাজিরা দিয়ে থাকেন, তাহলে তাঁকে হেফাজতে নিতে হলে ইডিকে বিশেষ আদালতের অনুমতি নিতে হবে’।
একইসঙ্গে শীর্ষ আদালতের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ইডি যদি এরপরেও তদন্ত চালিয়ে যেতে চায়, অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত হিসেবে যদি নাম নাও থাকে, তাহলেও ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা যাবে। তবে সেক্ষেত্রে আগেই অভিযোগ দায়ের হতে হবে। আর্থিক তছরুপ প্রতিরোধ আইনের ১৯ নং ধারায় এই বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে। ৪৪ নং ধারায় অভিযোগ দায়ের করার আগে অবধি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট যদি অভিযুক্তকে গ্রেফতার না করে থাকে তাহলে অভিযুক্তের নামে আদালত সমন জারি করতে পারে, ওয়ারেন্ট নয়। এমনকি অভিযুক্ত যে মামলায় জামিনে মুক্ত আছেন, সেই মামলাতেও সমন জারি করা বাধ্যতামূলক।
সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ২০৪ নং ধারায় সমন জারি করার পর অভিযুক্ত বিশেষ আদালতের সামনে হাজিরা দিলে সেক্ষেত্রে তিনি হেফাজতে আছেন বলে মনে হয় এমন কোনও ব্যবহার করা যাবে না। তাই সেই জন্য তাঁর জামিনের আর্জি জানানোর কোনও প্রয়োজন নেই। বিশেষ আদালতের তরফ থেকে ৮৮ নং ধারায় তাঁকে বন্ড প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হতে পারে। শুধু তাই নয়, উপযুক্ত কারণ যদি দেখানো হয় তাহলে বিশেষ আদালতের তরফ থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সশরীরে হাজিরা দেওয়া থেকেও অব্যাহতি প্রদান করা হতে পারে।
তবে অভিযুক্ত সমন পাওয়ার পরেও যদি হাজিরা না দেয়, তাহলে ৭০ নং ধারায় ওয়ারেন্ট জারি করতে পারবে বিশেষ আদালত। প্রথমে জামিন যোগ্য ধারায় জারি করতে হবে। যদি কোনও কারণবশত তা সম্ভব না হয়, তাহলে জামিন অযোগ্য ধারায় ওয়ারেন্ট জারি করতে হবে। এরপর অভিযুক্তের থেকে বন্ড নেওয়া যাবে। তবে বন্ড গৃহীত হয়েছে মানেই যে জামিন মঞ্জুর হয়েছে তা কিন্তু নয়, আদালত চাইলে ওয়ারেন্ট বাতিলও করে দিতে পারে।