বাংলা হান্ট ডেস্কঃ দেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি। সদ্য অবসর গ্রহণ করেছেন ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় (DY Chandrachud)। সিজেআই থাকাকালীন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলায় রায় দিয়েছেন তিনি। নাম, যশ, খ্যাতি, প্রতিপত্তি কোনও কিছুরই অভাব নেই তাঁর। তবে চন্দ্রচূড়বাবুর ব্যক্তিগত জীবনের কথা খুব কম মানুষই জানেন। শুধু বিচারপতি নন, বাবা হিসেবেও তিনি যে সেরা সম্প্রতি সেকথা সামনে এসেছে।
দুই কন্যাকে নিয়ে মুখ খুললেন প্রাক্তন সিজেআই চন্দ্রচূড় (DY Chandrachud)
সম্প্রতি নিজের দুই মেয়েকে নিয়ে কথা বলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি। অনেকেই জানেন না, চন্দ্রচূড়বাবুর দুই কন্যা বিশেষভাবে সক্ষম। যদিও তাঁদের আর পাঁচটা সাধারণ শিশুর মতোই বড় করেছেন প্রাক্তন সিজেআই (Chief Justice of India) এবং তাঁর স্ত্রী। সম্প্রতি তাঁদের নিয়ে কথা বলতে গিয়ে গলা ধরে আসে এদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতির।
চন্দ্রচূড়বাবু (DY Chandrachud) জানান, ‘২০১৪ সালে উত্তরাখণ্ডে ওদের জন্ম। নিমোলিয়ান মায়োপ্যাথি নামের একটি জেনেটিক রোগে ওরা আক্রান্ত। জন্মের সময়ই এই সমস্যা দেখা দেয়। সেই সময় এদেশে এই রোগ পরীক্ষা করার কোনও ব্যবস্থা ছিল না’।
আরও পড়ুনঃ ফের খাস কলকাতায় উদ্ধার ‘টাকার পাহাড়’! এবার কার বাড়িতে? ED হানা দিতেই…
এখানেই না থেমে সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) সদ্য প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি জানান, অ্যানাস্থেশিয়া না করেই মেয়েদের শরীর কেটে টিস্যু নিয়ে সেই সময় এই পরীক্ষা করা হয়েছিল। লখনউয়ে এই পরীক্ষা করা হয় বলে জানান তিনি। প্রথমে বড় মেয়ে, এরপর ছোট মেয়ের এই পরীক্ষা হয়। সেই টেস্ট এতটাই যন্ত্রণাদায়ক ছিল যে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতির বড় মেয়ে ওইটুকু বয়সে বলেছিল, বোনের ওপর যেন এই পরীক্ষা না করা হয়।
এরপর মেয়েদের পড়াশোনা নিয়েও প্রচুর ঝক্কি পোহাতে হয় চন্দ্রচূড়বাবুকে (DY Chandrachud)। তিনি জানান, ২০১৪ সালে উত্তরাখণ্ডে বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের জন্য কোনও বিদ্যালয় ছিল না। এরপর তাঁরা এলাহাবাদ চলে আসেন। কিন্তু সেই স্কুল থেকে জানানো হয়, ওই বিদ্যালয় অটিস্টিক বাচ্চাদের জন্য। তাঁদের কন্যাদের মতো শিশুদের জন্য না। এরপর সেই স্কুল থেকেই বলা হয়, তাঁদের মেয়েরা জেনেটিক রোগে আক্রান্ত। সাধারণ বিদ্যালয়েই ওরা পড়াশোনা করতে পারে। এরপর ফের শুরু হয় স্কুলের খোঁজ।
এরপর অনেক খোঁজাখুঁজির পর মেয়েদের জন্য একটি স্কুল পান চন্দ্রচূড়বাবুরা। যদিও সেখানেও কম ঝক্কি পোহাতে হয়নি প্রাক্তন সিজেআইয়ের (CJI) দুই কন্যাকে। তিনি জানান, সাধারণ বিদ্যালয়ে বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের জন্য যা যা পরিকাঠামো দরকার সবসময় তা পাওয়া যায় না। তাঁর সন্তানেরা যেমন সায়েন্স ল্যাবে যেতে চাইলেও যেতে পারতো না। কারণ সেখানে লিফট, র্যাম্প ছিল না। খেলাধুলা থেকে শুরু করে নাটক, যুক্তিতর্ক কোনও কিছুতেই মেয়েরা সেভাবে অংশগ্রহণ করতে পারতো না বলে জানান প্রাক্তন সিজেআই।
এত লড়াইয়ের পরেও অবশ্য চন্দ্রচূড়বাবুর দুই কন্যা দমে যাননি। তাঁদের মূল্যবোধের কাছে হার মেনেছে অক্ষমতা। কোভিডকালের একটি ঘটনা শেয়ার করে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি বলেন, একবার ক্লাস চলাকালীন কাঠের কিছু কাটার শব্দ পায় ছোট মেয়ে মাহি। শিক্ষিকার অনুমতি নিয়ে বেরিয়ে সে দেখতে পায় গাছ কাটা হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে কাঠুরেদের বাধা দেয় সে। বলে, গাছ কাটার চেষ্টা করবেন না। অনেকের কাছে এটা ঘর। পাখিরা থাকে। গাছ কাটলে ওরা কোথায় যাবে?
এই ঘটনা শেয়ার করার পর খানিক আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন চন্দ্রচূড়বাবু (DY Chandrachud)। তিনি বলেন, ‘এখানেই বলতে চাই, বিশেষভাবে সক্ষম হলেও ওরাও পারে মানুষকে বদলাতে। ওদের মতো করে ওরা বোঝাতে পারে। ওরা আমাদের জীবন, প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করতে পারে’।