বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সংশোধিত ওয়াকফ আইন (WAQF Amendment Bill) নিয়ে দেশের নানান প্রান্তে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। বাংলা সহ নানান রাজ্যে দেখা যায় বিক্ষোভের ছবি, উঠতে থাকে এই আইন প্রত্যাহারের দাবি। ইতিমধ্যেই এই জল গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) অবধি। গত বৃহস্পতিবার এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। তবে কেন্দ্রের আবেদনে তা পিছিয়ে মঙ্গলবার হয়। প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই (CJI BR Gavai) ও বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহর বেঞ্চ জানায়, সংশোধিত ওয়াকফ আইনের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে যে সকল আবেদন জমা পড়েছে, তা মঙ্গলবার শুনবে আদালত। এরপরেই আইনে স্থগিতাদেশ দেওয়া হবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) দীর্ঘ শুনানি
এদিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ প্রধান বিচারপতি গাভাই ও বিচারপতি মাসিহর বেঞ্চে সংশোধিত ওয়াকফ আইন সংক্রান্ত মামলার শুনানি শুরু হয়। এদিন কেন্দ্রের তরফ থেকে সলিসিটর জেনারেল অনুরোধ জানান, কেন্দ্র আগে যে তিনটি বিষয়ের ওপর হলফনামা জমা দিয়েছে, তার মধ্যেই মামলাকে সীমিত রাখা হোক। যদিও এই আবেদনে আপত্তি জানান মামলাকারীদের আইনজীবীরা।
কপিল সিব্বল (Kapil Sibal) এদিন দাবি করেন, এই আইন আদতে ওয়াকফ সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য। তবে এটিকে এখন ওয়াকফ সম্পত্তি দখল করার জন্য বানানো হয়েছে। ওয়াকফ সম্পত্তি সর্বদা ওয়াকফ সম্পত্তিই থাকে বলে দাবি করেন তিনি। এদিন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে সম্পত্তি দান নিয়ে জোরালো সওয়াল করেন সিব্বল। সেকথা শুনে প্রধান বিচারপতি গাভাই বলেন, ‘এই রকম তো মন্দিরেও হয়। আমি দরগায় যাই, সেখানেও হয়’।
আরও পড়ুনঃ চা সুন্দরী প্রকল্পে আরও বাড়ি, জল্পেশ মন্দিরে স্কাইওয়াক! উত্তরবঙ্গের জন্য একগুচ্ছ ঘোষণা মমতার
ওয়াকফ কাউন্সিলের (WAQF Council) সদস্য থেকে ওয়াকফ সম্পত্তি দানের বিষয়ে শর্ত, একাধিক বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন অভিজ্ঞ আইনজীবী সিব্বল। তাঁর প্রশ্ন, ‘নতুন ওয়াকফ আইন অনুযায়ী ওয়াকফকে সম্পত্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে শর্ত দিয়ে বলা হয়েছে, ওই ব্যক্তিকে সম্পত্তি দান করার আগে পাঁচ বছর মুসলিম ধর্ম পালন করতে হবে। কে এই সিদ্ধান্ত নেবেন? মৃত্যুশয্যায় থাকা কোনও ব্যক্তি যদি ওয়াকফকে সম্পত্তি দান করতে চান, তাঁকে প্রমাণ করতে হবে তিনি মুসলিম ধর্ম পালন করছেন! এটা তো অসাংবিধানিক’।
এদিনের শুনানিতে ওয়াকফ সংশোধনী আইনের দু’টি ধারা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সিব্বল। তিনি দাবি করেন, নয়া আইনের ৩ডি ও ৩ই ধারায় যা উল্লেখ রয়েছে, তা প্রকৃত বিলে ছিল না। যৌথ সংসদীয় কমিটিতেও এই নিয়ে আলোচনা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
একথা শুনে সিজেআই গাভাই জিজ্ঞেস করেন, এই নিয়ে সংসদেও আলোচনা হয়নি? বিচারপতি মাসিহ তখন বলেন, ‘এই নিয়ে তো সংসদে ভোটাভুটি হয়েছিল’। সিব্বল তখন জানান, ভোটাভুটি হওয়ার ঠিক আগে নিশ্চয়ই এটা যুক্ত করা হয়েছিল।
ওয়াকফের সম্পত্তি আদৌ বেড়েছে কিনা এই নিয়ে এদিন সংশয় প্রকাশ করেন আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি। তিনি বলেন, ওয়াকফগুলি ২০১৩ সাল থেকে একটি ওয়েবসাইটে নিবন্ধিকরণ শুরু হয়। আইনজীবীর দাবি, পোর্টালের তালিকায় সেই বৃদ্ধিকে ওয়াকফের পরিমাণ বৃদ্ধি বলে কেন্দ্র দেখাতে চাইছে। যৌথ সংসদীয় কমিটির রিপোর্ট উল্লেখ করে সিংভির দাবি, ২৮টির মধ্যে মাত্র ৫টি রাজ্যে সমীক্ষা হয়েছে।
সিব্বলের পাশাপাশি সংশোধিত ওয়াকফ আইনের ৩ডি ধারা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মামলাকারীদের আরেক আইনজীবী হাফেজা আহমদিও। এই ধারার ওপর সম্পূর্ণ স্থগিতাদেশের আবেদন জানান তিনি।
এদিন সকাল প্রায় সাড়ে ১১টা ওয়াকফ সংক্রান্ত মামলা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) শুনানি শুরু হয়েছিল। দুপুরে কিছুক্ষণের বিরতির পর বিকেল ৪টে অবধি শুনানি হয়। এদিনের দীর্ঘ শুনানির পরেও কোনও অন্তর্বর্তী নির্দেশ দেয়নি শীর্ষ আদালত। বুধবার ফের এই মামলার শুনানি হবে।