বাংলা হান্ট ডেস্কঃ মৃত্যুর পর ১২ দিন ধরে শবাগারে পড়ে রয়েছে বাবার দেহ। গ্রামের মধ্যে পূর্ব-পুরুষদের সমাধি ক্ষেত্রের পাশেই তাঁকে সমাহিত করতে চান ছেলে। কিন্তু তিনি খ্রিস্টান হওয়ায় বাধ সেধেছেন গ্রামবাসীরা। অভিযোগ গ্রামের হিন্দুদের একাংশ চান না সেখানে খ্রিস্টান জনজাতির মানুষের সৎকার হোক। হাইকোর্ট, পঞ্চায়েত কেউ এই সমস্যার সমাধান করতে না পারায় শেষ পর্যন্ত বাবার সৎকার করার অনুমতি চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) দ্বারস্থ হয়েছেন ছেলে।
বাবাকে সমাধি দেওয়ার অনুমতি চাইতে সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) ছেলে
সোমবার বিচারপতি বিভি নাগরত্ন এবং বিচারপতি সতীশ চন্দ্র শর্মার ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি ছিল। কিন্তু এই দিনও ওই মামলার নিষ্পত্তি হল না। সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) পরবর্তী শুনানি রয়েছে ২২ তারিখ। ছত্রিশগড়ের বস্তার এলাকার ছিন্দাওয়াড়া গ্রামের বাসিন্দা, রমেশ বঘেলের দাবি গ্রাম পঞ্চায়েতের অনুমোদনেই ওই গ্রামে একটি জায়গা দীর্ঘদিন ধরে সমাধিক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে সেখানে জনজাতি হিন্দু এবং খ্রিস্টানদের জন্য আলাদা সীমানা করা রয়েছে। এই খ্রিস্টান পরিবারের পূর্বপুরুষদের সমাধি আগেও সেখানে সমাহিত করা হয়েছে। কিন্তু এখন সেখানেই রমেশ তাঁর বাবাকে সমাহিত করতে চাইলে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। নিজের জমিতেও নাকি তিনি তাঁর বাবাকে সমাধি দিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসীদের একাংশ।
অভিযোগ গ্রামের মধ্যে খ্রিস্টানদের সমাধি রাখার বিরোধী তারা। এই মামলার নিষ্পত্তি চেয়ে হাইকোর্টে গিয়েছিলেন রমেশ। সেখানে বলা হয়েছে এই নিয়ে রেষারেষি করলে সামাজিক শান্তি এবং আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হতে পারে। তাই তাঁকে বলা হয়েছে গ্রাম থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অন্য একটি গ্রামে যেখানে খ্রিস্টানদের জন্য আলাদা সমাধিক্ষেত্র আছে তিনি যেন সেখানে যান।
দীর্ঘ ১২ দিন ধরে প্রয়াত বাবার দেহ শবাগারে রেখে এবার তিনি বিচার চাইতে গিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court)। আর তাতেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন করে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা এদিন বলেছেন, ‘বাবাকে সমাহিত করার জন্য শেষ পর্যন্ত সুপ্রিমকোর্টে আসতে হল? দেহ পড়ে রয়েছে? হাই কোর্ট, পঞ্চায়েত কেউ এর সমাধান করতে পারল না? এর জন্য আমরা খুবই বেদনা বোধ করছি।’
আরও পড়ুন: উচ্চ-মাধ্যমিক পড়ুয়াদের জন্য বড় আপডেট! কি জানাচ্ছে শিক্ষা দফতর?
সরকার পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি এই মামলায় আলাদা। ছত্রিশগড়ের সরকারের পক্ষে এই মামলা লড়তে নেমেছেন খোদ সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা। এরমধ্যে আন্দোলনের চক্রান্ত রয়েছেন বলে ‘বিরোধিতা’ করে তিনি বলেছেন, ‘আপনারা হিন্দু হয়ে খ্রিস্টান জনজাতির মধ্যে বিরোধ চাইছেন। এটা একটা আন্দোলনের সূচনা বলে মনে হচ্ছে’। চুপ থাকেননি মামলাকারীর আইনজীবীও। পালটা জবাবে তিনি বলেছেন, ‘বটেই তো! খ্রিস্টান খেদানোর আন্দোলন। ওরা এমন একটা দৃষ্টান্ত তৈরি করতে চলেছে যেখানে ধর্ম পাল্টালেই গ্রাম ছাড়া হতে হবে। এটা খুবই বিপজ্জনক’। এদিন মামলা চলাকালীন আদালতে একপ্রকার বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন দু’পক্ষের আইনজীবী।
সরকার পক্ষের আইনজীবীর গলায় এদিন শোনা গেল হাইকোর্টের সুর। তুষার মেহতা এদিন বলেছেন, অন্য গ্রামে খ্রিস্টানদের জন্য নির্দিষ্ট সমাধিক্ষেত্র রয়েছে। রমেশরা সেখানে কেন যাচ্ছেন না? একইসাথে তিনি বলেন সরকার অ্যাম্বুলেন্স করে দেহ পৌঁছে দেওয়ারও ব্যবস্থা করবে। তখন কলিন জানান পরিবারের অন্যান্যদের সমাধি ওই গ্রামেই রয়েছে। তখন তুষার দাবি করেন, অন্যরা নাকি খ্রিস্টান ছিলেন না। তখন কলিন ছবি বার করে দেখান, প্রত্যেকের সমাধিতে ক্রস চিহ্ন রয়েছে। এরপর তুষার পাল্টা দাবি করেন, ‘ওই তো শিবা লেখা আছে!’ তখন কলিন জানান, ‘শিবা ছিল মৃতের নাম।’ এরপর তিনি জোর দিয়ে জানান, ‘সরকারের অ্যাম্বুলেন্স চাই না। শুধু চাই ধর্মান্তরিত বলে যেন অচ্ছুৎ করে রাখা না হয়।’