বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বিচারপতি অমৃতা সিনহার (Justice Amrita Sinha) বেঞ্চ থেকে কেন মামলা সরাতে চাইছেন? রাজ্যের মেডিক্যাল দুর্নীতি মামলার শুনানিতে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) আইনজীবীকে প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court)। প্রসঙ্গত, গত ১০ জানুয়ারি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ খাড়া করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ই নন, পাশাপাশি বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাস থেকে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলার শুনানি সরানোর বিষয়েও সর্বোচ্চ আদালতে গিয়েছিলেন অভিষেক।
শুক্রবার মেডিক্যালে মামলার শুনানিতে ভারতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের ডিভিশন বেঞ্চ অভিষেকের আইনজীবীকে প্রশ্ন করে বলেন, ‘আপনাদের আপত্তি তো বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের করা মন্তব্য নিয়ে। তাহলে বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চ থেকে মামলা সরানোর আবেদন করছেন কেন?’ আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি অভিষেকের আবেদন নিয়ে আদালত সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে সূত্রের খবর।
প্রসঙ্গত, পূর্বে প্রাথমিক সংক্রান্ত ২টি মামলার শুনানি হচ্ছিল বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। তারপর ঘটনাচক্রে সেই মামলা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তার এজলাস থেকে সরিয়ে বিচারপতি সিনহার এজলাসে দেওয়া হয়ে। বিচারপতি সিনহার এজলাসেই চলছিল শুনানি। ওদিকে সম্প্রতি বিচারপতি সিনহার আইনজীবী স্বামীর বিরুদ্ধে একটি হুমকি দেওয়ার মামলায় অভিযোগের ভিত্তিতে সিআইডি। একাধিকবার তাকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরর বিচারপতি সিনহার স্বামী বিস্ফোরক অভিযোগ করে বলেন, তার স্ত্রীর নাম বলানোর জন্য তাকে নানা ভাবে চাপ দিয়েছে সিআইডি। ওদিকে অসাধ্য সাধন করে রূদ্ধদ্বার শুনানি করে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করেন অমৃতা সিনহা।
এদিকে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে শুরু হয় মেডিক্যাল দুর্নীতি মামলার শুনানি। বিচারপতি সিবিআই এর নির্দেশ দিলে তার বিরোধীতা করে বিচারপতি সৌমেন সেনের বেঞ্চের দ্বারস্থ হন রাজ্যের আইনজীবি। তৎক্ষণাৎ বিচারপতি সেন সিবিআই তদন্তের ওপর স্থগিতদেশ দিলে বেনজির সংঘাত বাঁধে সেন ও গঙ্গোপাধ্যায়ের মধ্যে।
আরও পড়ুন: শীত, বৃষ্টি তুচ্ছ! এবার দক্ষিণবঙ্গে অন্য দুর্যোগ, ৬ জেলায় জারি সতর্কতা: IMD’র ভয়ঙ্কর আপডেট
বিচারপতি সৌমেন সেনের বিরুদ্ধে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ তোলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়! বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নিজের নির্দেশনামায় লিখেছিলেন, বড়দিনের ছুটির আগে শেষ যে দিন আদালতের কাজ হয়, সেদিন বিচারপতি অমৃতা সিনহাকে হাইকোর্টে নিজের চেম্বারে ডেকে পাঠিয়ে বিচারপতি সেন বিচারপতি সিনহাকে কিছুটা রাজনৈতিক নেতার মতো নির্দেশ দিয়ে বলেন, তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা রাজনৈতিক ভবিষ্যত রয়েছে। তাই তাকে বিরক্ত করা চলবে না না।
এখানেই শেষ নয়, বিচারপতি সিনহার বেঞ্চের লাইভ স্ট্রিমিং বন্ধ করার পাশাপাশি তার বেঞ্চে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত যে ২টি মামলা রয়েছে তা খারিজ করতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এও জানান যে বিচারপতি সিনহাই তাকে এই বিষয়ে সবটা জানিয়েছেন। বিচারপতি সেন একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছেন বলেও এদিন মন্তব্য করেন বিচারপতি গাঙ্গুলি।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি সৌমেন সেনকে বিচারপতির পদ থেকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। দুই বিচারপতির বেনজির সংঘাতের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ নেয় সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি সেন বনাম বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ইস্যুতে মেডিক্যাল মামলা নিজের হাতে নেয় সর্বোচ্চ আদালত।
সেই বেঞ্চের কাছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মামলায় যুক্ত হওয়ার আবেদন জানান। অভিষেকের অভিযোগ ছিল কোনও প্রসঙ্গ ছাড়াই তার নাম বার বার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় আদালতের ভিতরে ও বাইরে টেনে আনছেন। তাই তিনি এব্যাপারে নিজের বক্তব্য আদালতের সামনে রাখতে চান। যদিও এই বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করেনি সুপ্রিম কোর্ট। এই মামলাতেই এবার বিচারপতি সিনহার এজলাস থেকে মামলা সরানো নিয়ে প্রশ্নের মুখে অভিষেক।